টাকার প্রবাহ কমবে বাড়বে সুদহার

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হবে। বাড়ানো হবে সুদের হার। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। ফলে বাড়বে ডলারের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার নিট হিসাবের তথ্য প্রকাশ করা হবে। এতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী সুদের হারও বাড়ানো হবে। এর মাধ্যমে এখনকার সস্তা টাকাকে ব্যয়বহুল করে তোলা হবে। এসব পদক্ষেপের ফলে টাকার প্রবাহ কমে আমদানি কমে যাবে। পাশাপাশি অন্যান্য খাতে চাহিদাও কমবে। এর মাধ্যমে ডলারের দামে স্থিতিশীলতা আসার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হারও কমবে। মুদ্রানীতিতে শিল্প, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এসব খাতে চাহিদা অনুযায়ী টাকার প্রবাহ বাড়ানো হবে। তবে অনুৎপাদনশীল খাতে কমানো হবে।

আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতি আজ রোববার ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এ নীতি ঘোষণা করবেন। এ নীতি আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ডিসেম্বরের পর বাস্তবতা পর্যালোচনা করে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রাগুলো আবার সংশোধন করা হবে। যা পরবর্তী ছয় মাসে অর্থাৎ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতির যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সেগুলোর বেশিরভাগই অর্জিত হয়নি।

সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব ও ডলার সংকট মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে সরকার গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের শর্ত হিসাবে এবারের মুদ্রানীতিতে বড় ধরনের সংস্কার আনা হচ্ছে। তাদের শর্ত অনুযায়ী বছরে দুই দফা মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছে। আগে এক দফায় করা হতো। আগে মুদ্রানীতিতে টাকার প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রাকে (মানিটারি টার্গেটিং) প্রাধান্য দেওয়া হতো, এবার এতে পরিবর্তন এনে সুদের হার বাড়ানো বা কমানোর (ইন্টারেস্ট রেট টার্গেটিং) মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে সুদের হারের ৯ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হবে। বর্তমানে ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি তুলে দিয়ে সুদের হারকে বাজারভিত্তিক করা হবে।

এ জন্য ছয় মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) আদলে দেশে সুদের হার নির্ধারিত হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একে ভিত্তি ধরে সুদের হার নির্ধারিত হয়। নতুন ব্যবস্থায় সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হারকে ভিত্তি ধরে ঋণের সুদ নির্ধারিত হবে। বর্তমানে ওই বন্ডের সুদের হার সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর গড় সুদের সঙ্গে ব্যাংকগুলো আরও ৩ শতাংশ যোগ করতে পারবে। ফলে ঋণের সুদ সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ হতে পারে। তবে এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কিছু ফি আরোপ করে। এর মধ্যে ঋণ প্রসেসিং ফি, গ্যারান্টি ফি, এজেন্সি কমিশন ইত্যাদি নামে সুদ হার আরও বেশি পড়বে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হারকে একেবারে বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে না। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। যাতে সুদ হার বেশি না বাড়ে।

একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। ফলে ডলারের দাম কিছুটা বাড়বে। ডলারের এক দর আপাতত নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডলার ক্রয়, বিক্রয় ও নগদ ক্রয় বিক্রয়ের মতো কয়েকটি দর থাকবে। এগুলোর রেটও থাকবে আলাদা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির আন্তঃব্যাংকের সমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। ফলে আন্তঃব্যাংকে বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাড়তি দামে ডলার বিক্রি করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুদের হার ও ডলারের দাম বাড়ার ফলে শিল্প খাতের খরচ বেড়ে যাবে। এতে আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও বাড়ে কিনা সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কেননা, এসব করা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের জন্য। যথাযথ তদারকি না হলে এ হার আবার বেড়ে যেতে পারে। তখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে দেখা দিতে হবে। কারণ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ডলার সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হলেও এখন সংকট মেটেনি। এখন উলটো সরবরাহ সংকটে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ঋণের সুদের হার বাড়লে আমানতের সুদের হারও বেড়ে যাবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। আমানত সুদের হার বাড়লে এ সংকট কিছুটা কাটতে পারে। তখন ঋণের সুদের হারও বাড়বে। তবে আমানতের সুদের হার বাড়লেও ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াবে।

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী নতুন মুদ্রানীতিতে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি গ্রস রিজার্ভও প্রকাশ করবে। রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিয়ে নিট হিসাব দেখানো হবে। এ জন্য বিভিন্ন তহবিলের আকার ছোট করা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার আগে ৭০০ কোটি ডলার ছিল। সেটি কমিয়ে এখন ৪৫০ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যান্য তহবিলও বাদ দেওয়া হচ্ছে। এতে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার। নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলারের মতো আছে।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে নতুন মুদ্রানীতিকে ‘সংকোচনমুখী’ করার বা টাকার প্রবাহ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। টাকার প্রবাহ কমানো হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একেবারে সংকোচনমুখী করছে না। মন্দার প্রভাব মোকাবিলা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব খাতে টাকার প্রবাহ চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে। ঋণের সুদের হার বাড়লেও কিছু খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম সুদে তহবিলের জোগান দেওয়া অব্যাহত থাকবে। ফলে উৎপাদন খাতকে সহায়তার দুয়ার খোলা থাকবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টাকার প্রবাহ বাড়ানো যায়নি। মন্দায় ঋণের চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে ঋণ প্রবাহ ১৮ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ফলে বাজারে যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে সেটি টাকার প্রবাহজনিত কারণে হচ্ছে না। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়ছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.