সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে ভারত

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের হস্তান্তরের জন্য আশ্রয়দাতা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের কথা বলছে, তারাই খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত কিছু খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। তাদের কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে না। যদি দেয়, তাহলে সেই হত্যাকাণ্ডের সপক্ষে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ইচ্ছে করলেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। কারণ, ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের বন্ধন রয়েছে। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব ছিল না। দুদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক তা বর্তমান সরকারের সময়ে আরও দৃঢ় হচ্ছে। ভারতের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে রক্ত দিয়েছে-জীবন দিয়েছে। ১ কোটি মানুষকে থাকতে দিয়েছে। খাবারসহ যুদ্ধের প্রশিক্ষণ-অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়েছে ভারত।

তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, আমরা ভোটে বিশ্বাসী। সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য, সংবিধানের বাইরে নির্বাচন হবে না। ৩০ লাখ শহিদদের রক্তের বিনিময়ে এই সংবিধান। এই সংবিধান অনুসারে শুধু নির্বাচন নয়, ভবিষ্যতেও মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করা হবে। সাম্প্রদায়িকতাকে যারা উসকে দিচ্ছে, এটা নতুন কিছু নয়। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন সেটা বন্ধ করার সময় এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এটা মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। জিয়াউর রহমানের ভোটের সময় যা হয়েছিল সেদিন তো মানবতার কথা বলেন নাই। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তখন তো মানবতার কথা বলেন নাই।’

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক-সবচেয়ে উঁচুতে রয়েছে। দুদেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে ভারত সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে। সহিংসতা জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে ভারত। প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। সেই চেতনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে ভারত পাশে আছে-থাকবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ প্রাধান্য দিচ্ছে দেশটি। এসব ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায় ভারত। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, সংসদ-সদস্য অ্যারমা দত্ত ও বাসন্তী চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলম। আয়োজন সঞ্চালনা করেন সমিতির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হক।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদন : এদিকে, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত ও আমেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না বলে মনে করে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার বর্তমান ভূমিকায় ভারত যে খুশি নয়, ওয়াশিংটনকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সেই বার্তাও। একাধিক স্তরের বৈঠকে বাইডেন প্রশাসনকে একথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার।

নয়াদিল্লির নানা কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু যেভাবে হাসিনা সরকারকে অস্থির করার জন্য আমেরিকার তরফ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর তিন সপ্তাহ পরেই নয়াদিল্লিতে এক মঞ্চে বসবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ভারতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক মহলের বরাতে আনন্দবাজার আরও বলছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে কাবুলের পাশাপাশি ভারতের অন্য প্রতিবেশী সম্পর্কে আমেরিকার নীতিও নয়াদিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে বাংলাদেশের যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি ভারতেও প্রভাব ফেলে।

সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার বলছে, নয়াদিল্লি এ কথাই বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে যে জামায়াতকে আশকারা দিলে একদিকে যেমন ভারতের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়তে পারে, তেমনই চীনের প্রভাব বাংলাদেশে অনেকটাই বেড়ে যাবে, যা কাঙ্ক্ষিত নয় ওয়াশিংটনেরও। মনে করা হচ্ছে, আমেরিকা জামায়াতকে বরাবর রাজনৈতিক ইসলামিক সংগঠন হিসাবেই দেখানোর চেষ্টা করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তাকে তুলনা করে আমেরিকা।

বাংলাদেশের জন্য পৃথক একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে বাইডেন প্রশাসন। সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার উল্লেখ করেছে, বিষয়টি উচিত বলে মনে করছে না নয়াদিল্লি। এই ভিসানীতির ফলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, তারা আমেরিকায় প্রবেশের অধিকার পাবে না। ভারতের কূটনৈতিক শিবির মনে করছে, আমেরিকার প্রশাসন সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতেই নিজের দেশের আইন প্রয়োগ করে বাংলাদেশের জন্য পৃথক ভিসানীতি গ্রহণ করল।

অনন্দবাজারের প্রতিবেদন আরও বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লি গিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তথা দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছে। সেখানে তারাও বার্তা দিয়েছেন, আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখার প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াত বিপজ্জনক।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.