হাসিনা-মোদি বৈঠক ১০ সেপ্টেম্বর

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক  : আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক শেষ করে ওইদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে পরদিন ঢাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এটিই হচ্ছে শেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠককে কেন্দ্র রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের দৃষ্টি এখন দিল্লিতে। ওই বৈঠকের সময় সদ্য নির্মিত আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন উদ্বোধন করতে পারেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনগুলোর একটি জি-২০ কে সামনে রেখে বাংলাদেশ ‘অলআউট’ প্রস্ততি নিচ্ছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ কি বলবে, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোগ কীভাবে ঘটাবে- তার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ দুটো অংশে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর একটি হচ্ছে, সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং পরের অংশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জি-২০ সম্মেলন : ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি’ শীর্ষক একটি সেমিনারেরও আয়োজন করে। দিনব্যাপী এই সেমিনারে জি-২০ সম্মেলনকে ঘিরে নানা বক্তব্য উঠে আসে। প্রসঙ্গত, আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। এতে বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে।

জি-২০তে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, মোটা দাগে ৬টি বিষয় নিয়ে সম্মেলনে বাংলাদেশ কথা বলবে। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য একটি সূচি নির্ধারিত হয়েছে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জি-২০ সম্মেলন এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাইলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই’- কথাটি গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাইবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইকে বলেন, নয়াদিল্লির তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিশ্চিত করা হয়েছে; যদিও তারিখ এবং সময় এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের এই কূটনীতিক বলেন, আমরা জি-২০র ফলাফল নিয়ে খুবই আশাবাদী। আমরা আমন্ত্রিত দেশ হিসেবে এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেখেছি, ভারত নিজেকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সংস্থাটির সভাপতি হিসেবে ভারত লক্ষ্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জি-২০ র সদস্য না হলেও জি-২০র নেয়া সিদ্ধান্তগুলো সব উন্নয়নশীল দেশকে প্রভাবিত করেছে। তারমতে, যখন আমাদের নিকটতম বন্ধুদের মধ্যে একজন সেই সংস্থার সভাপতি হন, তখন এটি অবশ্যই আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর প্রগতি ময়দানের আইটিপিও কনভেনশন সেন্টারে ‘ভারত মন্ডপম’-এ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি হবে ভারত তথা দক্ষিণ

এশিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। জি-২০ নয়াদিল্লি শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের সভাপতিত্বে সংস্থাটির কার্যক্রম ২০২২ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ২০২২ সালের শীর্ষ সম্মেলনের পর ভারত এর সভাপতি হয়।

সম্প্রতি মাসিক মন কি বাত রেডিও স¤প্রচারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত এবং ৪০টি দেশের প্রধান এবং অনেক বৈশ্বিক সংস্থা এতে অংশ নিতে দিল্লিতে আসছেন। ভারত জি-২০ কে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক ফোরামে পরিণত করেছে। ভারতের আমন্ত্রণে আফ্রিকান ইউনিয়নও জি-২০তে যোগ দিয়েছিল এবং আফ্রিকার জনগণের কণ্ঠস্বর বিশ্বের এই গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পৌঁছেছে।

সংশ্লিদের মতে, জি-২০তে বাংলাদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ- প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে। একেক বিশ্লেষক একেররকম উত্তর দিয়েছেন। তাদের মতে, সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক তাদের সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়’ পার করছে। এই দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বের উপর সীলমোহর দিতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের বিশেষ অতিথি হিসেবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। এতে বাংলাদেশকে অতিথি হিসেবে ভারতের আমন্ত্রণ দেশটি তার নিকটতম প্রতিবেশীকে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হিসেবে উচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে।

ভারতের কাছে বাংলাদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ- এমন প্রশ্নের বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মহামারি সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০১৯ সালের ৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২১ সালে ১৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে ভারতের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভৌগোলিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ তার বাণিজ্য এবং যোগাযোগ উন্নত করার জন্য কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরাকে উপকৃত করবে। দুই দেশের বাণিজ্যের জন্য বেশ কিছু নতুন পোর্ট অফ কল এবং প্রোটোকল রুট যুক্ত করা হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ আরো উন্নত করার জন্য ২০২১ সালে ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু নির্মিত হয়েছে, যা ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমকে বাংলাদেশের রামগড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সদ্য উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতুও দুই দেশের মধ্যে সংযোগ উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেল সংযোগের দিক দিয়ে ২০২২ সালে উত্তর পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন হয়েছে। আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন আগামী ১০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হচ্ছে। রিজিওনাল কানেক্টিভিটি বাদ দিলে, অশান্তিপূর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারতকে শান্তি এনে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অসামান্য অংশীদার হয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো-টলারেন্স’ মনোভাব বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী সীমান্ত থেকে নিশ্চিহ্ন হওয়ায় ভারত উপকৃত হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিশ্বে উদাহরণ তৈরি করেছে। এরফলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জি-২০তে আমাদের আমন্ত্রণ দিয়েছেন এবং আমরা তাতে যোগ দিচ্ছি। এটা আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে।

এরআগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘জি-২০ সম্মেলন : ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি’ শীর্ষক সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেছিলেন, বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয় ভারত। এ জন্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও স্বাগত জানাতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

 

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.