বেড়া উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচন লড়াই হবে আওয়ামী লীগ-ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর

0

পাবনা প্রতিনিধি : মরণঘাতী করোনা ভাইরাস চলমান অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনমুখি মনোভাবে সারাদেশের ন্যায় পাবনার বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরব প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। গেল রোববার প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও বেশ আগে থেকেই এই উপজেলায় নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। চলছে গণসংযোগ, পোস্টারিং, বড়বড় প্যানাসাইন ও বিলবোর্ড সাটানো। বিকেল গড়লেই চোখে পড়ছে বিভিন্ন প্রার্থীর গণসংযোগ, নেতা কর্মিদের নিয়ে ভোটারদের সাথে দেখা সাক্ষাত ও মিছিল-মিটিং।

এই উপজেলাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাতসাখিনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবু। দলীয় মনোনয়নের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আফজাল হোসেন এবং বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদেরের সহধর্মিনী রওনাক জাহান রানু। বেড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রউচ উদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় পার্টির আব্দুল ওহাব মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এদিকে তৃণমূলের এই নির্বাচন ঘিরে প্রার্র্থীরা প্রচারপ্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করলেও স্থানীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাঝে মধ্যে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে নির্বাচনী পরিবেশ। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় প্রবেশের প্রথমেই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে রেজাউল করিম বাবুর আনন্দ মিছিলের বহরে। অভিযোগ উঠেছে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরেই দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মি ও সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে।

সরকার দলীয় প্রার্থীর সাথেই স্বতন্ত্র ও অন্য দলের প্রার্থীদের লড়াই হওয়ার সম্ভবনা দেখছেন অভিজ্ঞজনেরা। তাদের মতে, দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম বাবুর সাথে ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেনের মধ্যে। প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে নেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রইচ উদ্দিন আহমেদও, মানুষ যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ চায় বিএনপি প্রার্থী। আর নির্বাচন মাঠ ছাড়ছেন না জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল ওহাব। এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম বাবু নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করে ইতোমধ্যে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করলেও তার বাবা আদৌ মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিল কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল কারন মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম নেই তার। বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন রেজাউল করিম বাবুর বাবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা নন। আর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাজী ইসহাক আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সচেতন ভোটারদের অভিমত, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল হক বাবু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৭৯ পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর আস্থাভাজন হয়ে নগরবাড়ি ঘাট নিয়ন্ত্রন ও কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। সে সময়ে টাকার বিনিময়ে চাকুরি বাণিজ্যসহ নানা কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ ও সাক্ষাতে তার মতামত জানতে চাইলেও তিনি ব্যস্ততার অযুহাতে বিষয়টি এরিয়ে যান।

বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও দলীয় নেতাকর্মি ও সমর্থকদের অনুরোধেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবে। যেটা হবে সেটাই মেনে নিবো। তিনি বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই আমার বিরুদ্ধে আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষ থেকে তার আনন্দ মিছিলে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র বিস্ফোরক আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ আমি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর নিজ বাসায় অক্সিজেনের সাহায্যে দিন পার করছি। আমার বিশ্বাস ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রওনাক জাহান রানু বলেন, আমার স্বামী প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন প্রয়াত আব্দুল কাদেরের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই। উপজেলাবাসী আমাকে যদি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, তাহলে এ এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ বেকারত্ব দূরীকরণ এবং এলাকার সন্ত্রাস, ছিনতাই, মাদক মুক্ত করে সুন্দর উপজেলা উপহার দিতে চাই।

বিএনপি প্রার্থী রইচ উদ্দিন বলেন, আসন্ন ১০ ডিসেম্বর এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে আমি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচত হবো। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবী রাখি, ভোট যেন কারচুপি না হয় মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করতে আপনারা উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটাই দাবী সংশ্লিষ্টদের নিকট।

বেড়া উপজেলা পরিষদ : ২০০৯ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন খন্দকার আজিজুল হক আরজুু। পরে তিনি এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিতও হন। ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ ও ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু স্নেহভাজন আব্দুল কাদের। চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষনা করে।

এ উপজেলায় ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৯২ জন। পুরুষ ভোটার ৮৫ হাজার ৪২৭ জন এবং নারী ভোটার ৮২ হাজার ৭৬৫ জন। ২৪৮.৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে এই উপজেলা পরিষদ গঠিত। এই পরিষদের অধীনে রয়েছে ১ পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়ন পরিষদ। এছাড়াও পদ্মা, যমুনা, ইছামতি ও হুরাসাগর এই উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত। সরকারি সকল অফিসসমূহসহ সবধরণের নাগরিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত এই উপজেলা।

সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, এই উপজেলা সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী, বর্তমান সাংসদ অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর নির্বাচনী এলাকা। রয়েছেন তারই ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত ও বরখাস্তকৃত পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন। তারা যেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে কোন ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে না পড়ে এবং সাধারণ ভোটারদের ভোটে যোগ্য, সৎ ও দরদি প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে এ উপজেলার উন্নয়ন কাজ করবেন এমন পরিবেশ চান সচেতন মহলসহ সাধারণ ভোটাররা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.