জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের সাশ্রয় ১৪৫ কোটি ডলার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বন্ড সুবিধার অপব্যবহার প্রায় অর্ধেক কমেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের সাশ্রয় ১৪৫ কোটি ডলার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর মতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অপব্যবহার কমার আর্থিক মূল্য ১৪৫ কোটি ডলার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানিতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দিয়েছিল সরকার।
রপ্তানিমুখী শিল্পকে কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ছাড় দেওয়ার বন্ড সুবিধার অপব্যবহার কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর মতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অপব্যবহার কমার আর্থিক মূল্য ১৪৫ কোটি ডলার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানিতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দিয়েছিল সরকার।
কাস্টমসের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি হয়েছে এবং তা দিয়ে তৈরি যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে ব্যবধান ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪০ শতাংশ এবং দুই বছর আগের একই সময়ে ছিল আরও উল্লেখযোগ্য বা ৪৫ শতাংশ।
কাস্টমস বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, আলোচ্য তিন মাসে যে পরিমাণ ব্যবধান কমেছে, তার আর্থিক মূল্য ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা।
ইতিবাচক এ ধারার জন্য সফলভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা জানান কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে এনবিআরের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সক্ষমতা বেড়েছে।
তারা জানান, কাস্টমস বিভাগের সফটওয়্যার– এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (ASYCUDA World) এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য পরীক্ষা ও নজরদারি করতে পারছে রাজস্ব বোর্ড।
কাস্টমসের তথ্যমতে, গত ২০২২-২৩অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বন্ড সুবিধায় বিভিন্ন ধরণের কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ মেট্রিকটনের কিছু বেশি, এবং একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার টন। অর্থাৎ একই সময়ে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান ছিল প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১০ লাখ ১৮ হাজার টন এর কাছাকাছি আমদানি হয়েছে এবং রপ্তানি হয়েছে ৮ লাখ টনের কাছাকাছি, যা আমদানি ও রপ্তানির এ ব্যবধান কমে আসাকেই নির্দেশ করছে।
সুফল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার
কাস্টমস বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, আলোচ্য তিন মাসে যে পরিমাণ ব্যবধান কমেছে, তার আর্থিক মূল্য ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে যদি একই হারে এ ব্যবধান কমতে থাকে, তাহলে এটি ৫৮০ কোটি ডলার সাশ্রয় করবে। অর্থাৎ, আলোচ্য পরিমাণ অপব্যবহার ঠেকাতে সক্ষম হবে এনবিআর।
এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে টিবিএসকে বলেন, “এটি একটি প্রাথমিক হিসাব এবং এর ভিত্তিতে আমরা একটি ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছি যে, অর্থবছর শেষে গ্যাপ (ব্যবধান) কমার পরিমাণ কত হতে পারে।”
“এই হিসাব তৈরি করার সময় স্থানীয় রপ্তানি (যা ডাবল কাউন্ট হিসেবেও পরিচিত এবং হোম কনজাম্পশন বন্ড এর হিসাব বাদ দেওয়া হয়েছে। পুরো বছরের হিসাবে এই পরিমাণ কমবেশি হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাপকহারে কমছে।”
সূত্রগুলো জানায়, গত দুই বছর ধরে কাস্টমস বিভাগ নিজস্ব এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়ার (ASYCUDA World Software) এ থাকা তথ্য, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, রপ্তানিকারকদের সংগঠনের দেওয়া ইউটিলিটি ডিক্লারেশনের (ইউডি) তথ্যসহ অন্যান্য আমদানি-রপ্তানির নথি পরীক্ষা করে শতাধিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বের করেছে।
বন্ড-সুবিধা পায় ৮ হাজার লাইসেন্সধারী
সারাদেশে প্রায় ৮ হাজার বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এরমধ্যে সক্রিয় প্রায় রয়েছে ৫ হাজার। শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধা ছাড়া কাঁচামাল আমদানি করতে হলে প্রায় ৫০ শতাংশ কর দিতে হয় আমদানিকারকদের।
তবে বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্ককর না দিয়েই তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারেন এই শর্তে যে, আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্দিষ্ট দিয়ে তৈরি পণ্য পুরোটাই রপ্তানি করতে হবে। কিন্তু, কাঁচামাল আমদানির পরে স্থানীয় যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি করতে পারে না তাদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার মতোন ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, আমদানিকারক এ সুবিধার অপব্যবহার করেছেন।
দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী সক্ষম করতে সরকার কাঁচামাল আমদানির ওপর কর মওকুফ করে আসছে। সেক্ষেত্রে শর্ত হলো, আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্দিষ্ট ওয়্যারহাউজে রেখে তা দিয়ে তৈরি পণ্য পুরোটাই রপ্তানি করতে হবে। এটি ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ফ্যাসিলিটি’ নামে পরিচিত, যা ১৯৮০’র দশক থেকে দিয়ে আসছে সরকার। তবে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হলে প্রযোজ্য কর পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু, বলিষ্ঠ নজরদারির অভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে তা দিয়ে পণ্য তৈরি ও তারপর রপ্তানি না করে– ওই কাঁচামাল বা তৈরি পণ্য স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বন্ড সুবিধার অধীনে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যেকার ব্যবধান কমানোর সুবিধা ব্যাখ্যা করে এনবিআরের ওই সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, “এখন গ্যাপ কমার অর্থ হলো– শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি সংকুচিত হবে। ফলে কমার্শিয়াল বা ট্যাক্স পরিশোধ করে আমদানি করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।”
“ব্যবধানের তথ্য নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে’
এনবিআর এর সাবেক সদস্য (কাস্টমস নীতি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, “তিন মাসে বন্ড সুবিধায় আমদানি-রপ্তানির ব্যবধান ১৪৫ কোটি ডলার কমা, বা বছর শেষে সেটা ৬০০ কোটি ডলারের মতোন হবে কিনা– তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। তবে এটা সত্য যে অনিয়ম (বন্ড সুবিধার অপব্যবহার) কমেছে।”
টিবিএসকে তিনি বলেন, “কাস্টমস বিভাগে অটোমেশনের প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওর্য়ার এখন লিয়েন ব্যাংক, ইউডি, বিল অব এক্সপোর্ট, বিল অব ইমপোর্টসহ আরো কিছু সংস্থার তথ্যের সথে সংযুক্ত হওয়ায়– তথ্য পাওয়া সহজ হয়েছে। এ ছাড়া, এনবিআর এবং মাঠ পর্যায়ের টিমও গুরুত্বের সাথে কিছু কাজ করেছে। এর ফলে অনিয়ম কমছে।”
ফরিদ উদ্দিন উল্লেখ করেন যে, ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় এক্সেসরিজ উৎপাদনকারী স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনিয়ম অপেক্ষাকৃত বেশি। তাদেরকে দেওয়া ইউটিলিটি পারমিশন (ইউপি) অনলাইনে সংযুক্ত করতে পারলে আরো বেশি ফল পাওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিকেএমইএ)-র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, “অপব্যবহার রোধে যেকোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই, তবে এর মাধ্যমে প্রকৃত রপ্তানিকারক যাতে হয়রানি কিংবা ক্ষতির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
এক্ষেত্রে তিনি বন্দরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন।