কৃষিতে নীরব বিপ্লব

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের কৃষিতে এক নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে। সরকারের নানা উদ্যোগে পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলেছে এ খাত। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের খোরপোষের কৃষির রূপান্তর ঘটছে বাণিজ্যিক কৃষিতে। ফলে কৃষি কর্মকা- শুধু গ্রামীণ অর্থনীতিকেই চাঙ্গা রাখছে না, সংকটে হাল ধরছে দেশের অর্থনীতিরও। দেশের অর্থনীতির দুঃসময়েও ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কৃষি। এক মৌসুমে হাওড় অঞ্চলে আগাম বন্যা বাদ দিলে প্রতি মৌসুমেই প্রতিটি ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষির সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা (নীরব দুর্ভিক্ষ) নির্মূল। সেই সঙ্গে স্বস্তি দিচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তায়। সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ঘটে যাওয়া এ নীরব বিপ্লবের মূল নায়ক কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ জরিপ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে কৃষি কর্মকা-ে বিরাট গতিশীলতা এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন এক জমিতে চার ফসলি শস্য আবাদের চেষ্টা চলছে। জোর দেওয়া হয়েছে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে। সে জন্য সাথী ফসল উৎপাদনের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। সনাতন কৃষি পরিণত হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিতে। 

কৃষি খাতের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন শুধু চালই উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি টনের বেশি। ধান, গম, ভুট্টাসহ মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৫ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষে বিশ্বের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

বিগত ১৫ বছরে দেশে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৯ গুণ, আলু ২ গুণ, ডাল ৪ গুণ, তেলবীজ ২.৫ গুণ ও সবজি ৮ গুণ। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের কৃষির সাফল্য বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। বর্তমানে ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাল উৎপাদনে ৩য়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম। 

খাদ্যশস্য, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন শস্যে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। স্বাধীনতার পর দেশে যে চাল উৎপাদন হতো এখন তার চেয়ে চারগুণ বেশি উৎপাদন হয়। ওই সময় দেশে চালের উৎপাদন ছিল এক কোটি টন, বর্তমানে সেখানে শুধু চার কোটি টনের বেশি চালই উৎপাদিত হচ্ছে। সীমিত জমি থেকে এই আশাতীত উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, আগে যেখানে প্রতি হেক্টরে চালের উৎপাদন ছিল দেড় টন, তা এখন চার টনেরও বেশি।

একইভাবে গমে উৎপাদন দ্বিগুণ আর ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। ২০২০ সালে গম উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন, যা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে পরিমাণে অর্ধেক ছিল। ভুট্টায় সর্বোচ্চ সফলতা এসেছে শেষ দশকে। ২০০৯ সালে ভুট্টার উৎপাদন ছিল সাড়ে সাত লাখ টন, যা ২০২০ সালে ৫৪ লাখ টন। আগামী ৫ বছরের মধ্যে শস্যটির উৎপাদন এক লাখ টনে উন্নীত করতে কাজ চলছে।

প্রধান খাদ্যশস্যের বাইরে নিবিড় চাষের মাধ্যমে দেশে সবজি উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। স্বাধীনতার পর দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচগুণ। শস্যের জমি কমলেও গত এক দশকে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ আবাদি জমি বৃদ্ধির হার বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও)।

এছাড়া এখন দেশে ২০০ জাতের সবজির মধ্যে বেশির ভাগের বাণিজ্যিক উৎপাদন হচ্ছে। কয়েক দশক আগেও হাতেগোনা কিছু সবজির বাণিজ্যিক উৎপাদন হতো। পাশাপাশি সবজি রপ্তানি করেও মিলছে বৈদেশিক মুদ্রা। গত এক বছরে শুধু সবজি রপ্তানি থেকেই আয় বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

বড় সফলতা এসেছে ফল উৎপাদনে। দেশে মোট ফল উৎপাদনে বিশ্বে ২৮তম। কিন্তু মৌসুমি ফল উৎপাদনে ২০২২ সাল থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এফএওর হিসাবে, ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে।

কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়, আমে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে বাংলাদেশ। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বছরে ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের জমি বাড়ছে। এক দশকে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা দ্বিগুণের বেশি, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
কৃষিপণ্য উৎপাদনই করেই সরকার বসে থাকেনি, কিভাবে এই পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যায় সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির প্রণয়ন করা হয়েছে রোডম্যাপ। দেশে এখন  রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হচ্ছে। তাই উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। দেশ থেকে আলু রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে রোডম্যাপ। 

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতেই কেবল নীরব বিপ্লব ঘটেনি। কৃষির উৎপাদকের নেতৃত্বেও এই দেড় দশকে ঘটেছে আরেক নীরব বিপ্লব। কৃষি কাজের নেতৃত্ব এখন পুরুষদের কাছ থেকে নারীদের কাছে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ কৃষি পরিবার পুরুষপ্রধান থেকে নারীপ্রধান হয়ে উঠেছে। 

দেশের শ্রম জরিপ প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১০ সালের তুলনায় কৃষিতে নারীর সংশ্লিষ্টতা ৬৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। একই তথ্য বলছে, কৃষিতে জড়িত দেশের ৪১ শতাংশ শ্রমজীবী। গত চার যুগে দেশের কৃষি পরিবার পুরুষপ্রধান থেকে নারীপ্রধান হয়ে উঠেছে। নারীপ্রধান পরিবার ৬৭ শতাংশ।

বিপ্লবের ভিত্তি ॥ দেশের এই কৃষি বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব বিবেচনা করে ডাক দিয়েছিলেন কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের। সেইসঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ কৌশল প্রবর্তনের মাধ্যমে টেকসই কৃষির যাত্রার সূচনা করেছিলেন। 

১৯৯৬ সালে বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসে যে কয়েকটি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন, কৃষিখাত ছিল তার অন্যতম। ফলে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে দেশের কৃষির উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বৈঠকেই ভর্তুকি বাড়িয়ে ফসলের অন্যতম উপকরণ সারের মূল্য কৃষকের ক্রয় ক্ষমতায় মধ্যে নিয়ে আসা হয়।

এছাড়া কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণে কার্যকর সংযোগ স্থাপন, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ কৃষকের কাছে সহজলভ্য করা এবং কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর ফসলের নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। সেই সঙ্গে প্রবর্তন করা হয় আধুনিক, লাভজনক ও যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার। ফলে দ্রুত কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও প্রবর্তনের ফলে খাদ্যশস্য, সবজি ও ফল উৎপাদনে বৈচিত্র্য আসে এবং ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। 

কৃষির অবদান ॥ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে ট্রাজেডি ছিল দেশের উত্তরাঞ্চলে আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা। এ সময় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নীরব দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। ওই দুই মাসে কৃষি কর্মকা- না থাকার কারণে নি¤œ আয়ের মানুষকে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হতো। প্রতিবছর এই মঙ্গার সময় মানুষ ৩-৪ দিন পর্যন্ত না খেয়ে থাকত, না খেয়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও এদেশে ঘটেছে। কিন্তু সেই চিত্র এখন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। 
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই মঙ্গা দূর করার কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়। এই পদক্ষেপের একটি ছিল আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু এবং কৃষি কর্মকা- বৃদ্ধির মাধ্যমে দিন মজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। এ লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদি ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়। 

এসব আগাম জাতের ধান চাষ করায় এখন মঙ্গা এলাকার চিত্রটাই পাল্টে গেছে। মঙ্গা তাড়ানোর ছয়টি জাতের ধানে এখন কৃষকের মুখে হাসি। স্বল্পমেয়াদি এই ধানের জাতগুলো হলো ব্রি-৩৩, ব্রি ৩৯, ব্রি ৫৬, ব্রি ৫৭, ব্রি ৬২ ও বিনা-৭।

এসব জাতের আমন ধান চাষে রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় শুধু কৃষকের ভাগ্যই ফেরেনি, দিন মজুরদের ভাগ্যও বদলে দিয়েছে। কৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এর ফলেই যুগের পর যুগ মঙ্গা (নীরব দুর্ভিক্ষ) মোকাবিলা করা নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গা এখন জাদুঘরে ঠাঁই নিয়েছে। 

এখন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিনা-১৬ ও বিনা-১৭ নামে আরও দুটি ধানের উচ্চফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালের জাত উত্তরাঞ্চলের মাঠে চলে এসেছে। এর মধ্যে বিনা-১৬-এর জীবনকাল মাত্র ৯৫ থেকে ১০০ দিন এবং গড় ফলন বিঘাপ্রতি ২৪ মণ। আর বিনা-১৭-এর জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন এবং গড় ফলন বিঘাপ্রতি ২৭ মণ।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন ১০০ দিনের মধ্যেই এসব আমন ধান পেকে যাচ্ছে। ফলে কার্তিক মাসে এ এসব জাতের ধান কাটাতে এখন দিনমজুর পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে যেখানে দিনমজুররা কার্তিক মাসে কাজের অভাবে অলস বসে থাকত, এখন কাজের জন্য কৃষককে তাদের পেছনে ঘুরতে হচ্ছে। তিন বছর আগেও এক একর জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাগত। এখন প্রায় তিন গুণ বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। 

সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই আগাম জাতের ধান কাটার পর কৃষক আগাম আলু, সরিষা, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, গম, মরিচ, পেঁয়াজ ও রসুনসহ নানা রকমের মসলাজাতীয় ফসল চাষ করা শুরু করে। দিনমজুরদের আর বেকার থাকার সময় থাকে না। এছাড়া এখন উত্তরের জেলাগুলোতে সারা বছরই কোন না কোন ফসল মাঠে থাকে। 

রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের কৃষক মো. গছিম উদ্দিন বলেন, ‘একসময় আমরা ভাত খাবার পারতাম না। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের এখন ভাতের অভাব নেই। জমিতে একটা নয়, তিনটা ফসল ফলাই। দুবার ধান ফলাই। আরেকবার ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টিকুমড়া, পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাই।’ 

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে বলা হয়েছে, একসময় উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল অত্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত ছিল। তখন এই অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত।

অধিকাংশই কৃষি শ্রমিক হওয়ায় আশ্বিন-কার্তিক মাস এলেই হাজার হাজার পরিবার কাজের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হতো। নিজের ও পরিবারের জীবন বাঁচাতে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি অল্প দামে বিক্রি করে দিয়ে হতো সর্বস্বান্ত।

এর আগের দুই জরিপ (২০১০ ও ২০১৬) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস ছিল রংপুর বিভাগে। কিন্তু গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ দুই স্তরে অনেক উন্নতি করেছে রংপুর বিভাগ। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপে পাঁচ বছরে রংপুর বিভাগে দরিদ্র মানুষের হার কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। সেটি ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশে। কিন্তু ২০২২ সালে উল্লেখযোগ্য হারে কমে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। 
২০১০ সালে রংপুরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৫ এবং ২০২২ সালে ২০ শতাংশেরও বেশি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। 
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, একসময় মঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কারণে উত্তরবঙ্গে দরিদ্র মানুষ বেশি ছিল; কিন্তু মঙ্গা প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণের ফলে মঙ্গা আর নেই। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে অনেকে মাইগ্রেশন করেছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনেকে এখন গ্রাম থেকে উঠে এসে শহরে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজছে, কাজ করছে। এসব কারণে ওই এলাকার দারিদ্য্র কমেছে। 

আশাতীত ফলন বৃদ্ধি ॥ দেড় দশকে বাংলাদেশ শুধু খাদ্যশস্য উৎপাদনেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেনি, সব ফসল উৎপাদনেই আশাতীত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সবচয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এ সময়ে ফসলের বহুমুখীকরণ হয়েছে চমৎকারভাবে। কৃষক এখন আর ধান-পাট চাষ নিয়েই ব্যস্ত থাকছে না, লাভজনক ফসল হিসেবে নানা ধরনের সবজি, ফল (দেশী-বিদেশী) উৎপাদনে পারদর্শিতা দেখিয়েছে। ফলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণও বাড়ছে। 

বিগত দেড় দশকে চাল গম ও ভুট্টা মিলিয়ে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ টন। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে দেশে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে চাল উৎপাদন বেড়েছে ৮৮ লাখ টন। ২০০৮-০৯ সালে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২২-২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১ লাখ ৭৬ হাজার টনে। এ সময়ে আশাতীত ফলন বেড়েছে ভুট্টার। এ ফসলটির উৎপাদন বেড়েছে ৫৭ লাখ টন। ২০০৮-০৯ সালে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার টন, ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ লাখ ২২ হাজার টন। 

এটা সম্ভব হয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও আবাদ বৃদ্ধির কারণে। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে প্রতিবিঘা জমিতে ২৫ মণের অধিক ধান আবাদ সম্ভব হচ্ছে। 

কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ-২০০৯, বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-২০২৩ তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে আলু উৎপাদন দ্বিগুণ, ডাল চার গুণ এবং আর সবজি উৎপাদন বেড়েছে এ কোটি ৯৬ লাখ টন। মূলত সবজিই কৃষিকে বেশি লাভজনক করে তুলেছে। পাল্টে দিয়েছে কৃষকের লাইফস্টাইল। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে সবজির উৎপাদন ছিল ২৯ লাখ ৯ হাজার টন, ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার টনে।

সার এখন কৃষকের পেছনে ॥ কৃষি উৎপাদনের জন্য এক সময় সার ও বীজ নিয়ে ছিল হাহাকার, সেটা এখন বেশ সহজলভ্য। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ফসল আবাদের জন্য কৃষক এখন বেশি পরিমাণ গুণগতমান সম্পন্ন বীজ ও সার পাচ্ছেন।
এক সময়ের ৮০ টাকার টিএসপি সার এখন ২২ টাকা, ৭০ টাকার এমওপি ১৫ ও ৯০ টাকার ডিএপি ১৬ টাকায় দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসেই সারের উচ্চ দাম কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসে। সারের এই মূল্য হ্রাসের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। 

অপরদিকে বেড়েছে সারের সরবরাহও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়, সেখানে বড় অঙ্কের (প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা) ভর্তুকি দিয়ে সরকার সার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে। 

জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ॥ এই দেড় দশকে শুধু কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির দিকেই নজর দেওয়া হয়নি, উৎপাদন বাড়ানোর ‘ব্যাকআপ’ হিসাবে স্বল্প সময়ে দুর্যোগ সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে। এজন্য বাড়ানো হয়েছে গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ এবং গ্রহণ করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প। বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি এবং দেশে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে বিগত ১৫ বছরে বৈরী পরিবেশ সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯৯টি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন ও ৭০৮ প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।

খামার যান্ত্রিকীকরণ ॥ কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন, বরাদ্দ বৃদ্ধি ও গবেষণা জোরদারের পাশাপাশি এই সময়ে সবচেয়ে বড় যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা হলো কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। বর্তমান সময়ে শিল্প খাতের প্রসারের কারণে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট বাড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিকায়নের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

কৃষকদের কৃষি যন্ত্রের ক্রয়মূল্যের ওপর হাওড় ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১০-২০২৩ পর্যন্ত কম্বাইন হারভেস্টর, রাইসট্রান্সপ্লান্টার, রিপার, সিডার ও পাওয়ার থ্রেসারসহ প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজারটি  কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। এতে জমি চাষ থেকে শুরু করে উৎপাদিত ফসল মাড়াই পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। এর ফলে কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা মোকাবিলা এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।

পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ॥ পেঁয়াজের ঝাঁজে প্রতি বছরই ভোক্তাদের চোখে জল আসে। কারণ এই পণ্যটির বাজার প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হলে কৃষিমন্ত্রী দেশকে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পদক্ষেপ নেন। সেই লক্ষ্যে বর্তমানে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের একটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৪১ লাখ টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪.৫৬ লাখ টন, যেখানে ২০০৯ সালে পেঁয়াজ উৎপাদন ছিল ১৪.২৩ টন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশবাসীকে যে কৃষি পণ্যটি সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তা হলো ভোজ্য তেল। কয়েক বছরে ভোজ্য তেলের দাম তিন গুণ বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দেশের ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির করে তোলে। ফলে কৃষি মন্ত্রী আমদানির্ভির এই পণ্যটির চাহিদার অন্তত ৪০ শতাংশ দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।  এজন্য তিন বছরের মধ্যে ভোজ্য তেলের আমদানি হ্রাস করে ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে (২০২২-২৩ হতে ২০২৪-২৫)।

এই পরিকল্পনার প্রথম বছরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ফলন হয়েছে ১১.৬১ লাখ টন, যা বিগত বছরের তুলনায় ৩.৩৭ লাখ টন বেশি। উল্লেখ্য, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সরিষার উৎপাদন ছিল মাত্র ২.০৩ লাখ টন। বর্তমানে উৎপাদিত ১১.৬১ লাখ টন সরিষা থেকে ৩.৮৭ লাখ টন তেল পাওয়া যায়। এতে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হয়। 

প্রণোদনা তথা কৃষি পুনর্বাসন ॥ বন্যা, খরা, শিলা বৃষ্টি, অতি বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, উজানের ঢল, পাহাড়ী ঢল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও বিশেষ বিশেষ ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ২০০৯ হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৯৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রণোদনা বা কৃষি পুনর্বাসন প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে ২ কোটি ২৩ লাখ ২১ হাজার জন কৃষক উপকৃত হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ৪৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রণোদনা ৬ লাখ ৪৩ হাজার কৃষককে প্রদান করা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবংধান, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, পাট, সরিষা, সূর্যমুখী, আনারসসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়। এতে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার।
নীতি সহায়তা ॥ কৃষির এই নীরব বিপ্লবের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি ও আর্থিক সহায়তা। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকেই কৃষি উৎপাদনের খরচ কমিয়ে কৃষকদের স্বস্তি দিতে ব্যয়বহুল সারের দাম অস্বাভাবিক কমিয়ে কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসে। সেই সঙ্গে সার সরবরাহ বাড়িয়ে তা কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে যায়। ফলে এক সময় যে সারের পেছনে কৃষকদের ঘুরতে হতো, সেই ‘সার কৃষকের পেছনে পেছনে ঘুরতে’ শুরু করে। 

আগে কৃষি খাতে উন্নয়ন ব্যয় ছিল সবচেয়ে কম। ২০০৮-০৯ অর্থবছরেও এ খাতে ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭০৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৪১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২৩ পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বমোট ২৪ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। 

কৃষি খাতে বড় প্রকল্প গ্রহণ অতীতে ছিল চিন্তার বাইরে। অথচ এই সরকারের আমলেই কৃষি খাতে ৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই মেগা প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে কৃষির চেহারাই বদলে যাবে। 

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষির উন্নয়নে কৃষিমন্ত্রী যখনই যে প্রস্তাব বা প্রকল্প নিয়ে গেছেন তা বিনা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করে দিয়েছেন। কৃষির প্রতি তার মমত্ববোধের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

অপরদিকে কৃষিমন্ত্রী একজন কৃষিবিদ হওয়ায় কৃষির উন্নয়নের জন্য করণীয় বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পেরে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কৃষিমন্ত্রী দেশে কৃষিকে খোরপোষের কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছেন। কৃষিকে লাভজনক করার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে উদ্যোগ নেয়া হয় কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির। বর্তমানে ৭০টির বেশি সবজি ও ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। 

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে লোকসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি কৃষিজমি বরং প্রতি বছর এক শতাংশ হারে কমেছে। এরপরও কৃষিতে আশাতীত সাফল্যের দেশ বাংলাদেশ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একই সঙ্গে বেড়েছে পুষ্টির নিরাপত্তাও। তাতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে। বাংলাদেশের কৃষিকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করছে বিশ্ব। 
কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম খান মনে করেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কৃষি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সরকার প্রথম থেকেই খাদ্য নিরাপত্তা ও ঘাটতি কমাতে আন্তরিক ছিল। যেভাবে সরকার কৃষি খাতে অর্থিক সমর্থন ও নীতিগত সহায়তা দিয়েছে তা অন্য যে কোনো সময়ের থেকে বেশি। কৃষি খাতে এ অভূতপূর্ব সাফল্য সরকারের সহায়তা ছাড়া সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও জানান, গত অর্ধশতাব্দীতে দেশে শস্যের উৎপাদন গড়ে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। যেখানে সারাবিশ্বে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে দেশের বড় সাফল্য এখন কৃষি। আমাদের চাল উদ্বৃত্ত, বেশকিছু খাদ্যে প্রথম সারির উৎপাদক। শস্যের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। অন্যদিকে সরকারি গুরুত্বের কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও প্রচুর বেড়েছে। সবমিলে উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে, প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি ও কৃষক বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাই অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এই খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি ও কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই স্বাধীনতার পরই তিনি দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা করেন। বর্তমানে তাঁরই সুযোগ্যকন্যা সেই পথ অনুসরণ করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.