পদ্মা সেতুর প্রভাবে বড় প্রবৃদ্ধি সরকারের টোল রাজস্বে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম একটি খাত সড়ক ও সেতুর টোল। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে টোল আদায়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সরকারের। এ খাতে ২০২১-২২ অর্থবছর যেখানে ১ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল, সেখানে গত অর্থবছরে এসেছে ২ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে টোল আদায়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪৫ শতাংশ। সরকারের এ টোল রাজস্ব বাড়াতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে পদ্মা সেতু। ২০২২ সালের ২৬ জুন যান চলাচল শুরু হওয়া এ সেতু থেকে গত অর্থবছর আয় হয়েছে ৮১৫ কোটি টাকার টোল।
সরকারের যে দুটি সংস্থা সবচেয়ে বেশি টোল আদায় করে তার একটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। গত অর্থবছর সংস্থাটি এ খাতে আয় করেছে ১ হাজার ১২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৯৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা এসেছে সওজ অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন সেতু থেকে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েসহ অন্যান্য সড়ক থেকে টোল আদায় হয়েছে ২১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে গত অর্থবছর ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা টোল বাবদ আয় করেছে সওজ অধিদপ্তর। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি ১ হাজার ২১ কোটি টাকা টোল আয় করেছিল।
দেড় কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু, টোল সড়ক, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে, টানেল, কজওয়ে, রিং রোডের মতো অবকাঠামো নির্মাণ ও সেগুলো থেকে টোল আদায় করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত অর্থবছর সবচেয়ে বেশি টোল আদায় করেছে সরকারের সেতু বিভাগের অধীন এ সংস্থা। সেতু কর্তৃপক্ষের টোল আদায়যোগ্য অবকাঠামো তিনটি। ১৯৯৮ সালে চালু হওয়া বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সংস্থাটি গত অর্থবছর আয় করেছে ৬৮০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে অবশ্য এর বেশি টোল আয় হয়েছিল, প্রায় ৭০৫ কোটি টাকা। চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি থেকে ৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা টোল আয় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণের বেশি টোল আয় হলেও এখনো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি সরকার। সেতুটি নির্মাণে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ঋণ ৮৫৪ কোটি টাকা। এর সুদহার দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরিশোধের সময় ৩০ বছর। একইভাবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের ওভারসিজ ইকোনমিক কোঅপারেশনের (ওইসিএফ) ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৮২৯ কোটি ও ৮২৫ কোটি টাকা। দুটি সংস্থাই ঋণ দিয়েছে ১ শতাংশ সুদে। এর মধ্যে এডিবির ঋণ ৩০ বছরে এবং ওইসিএফের ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরে।
সেতু কর্তৃপক্ষের আরেকটি টোল আদায়যোগ্য অবকাঠামো ষষ্ঠ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু (মুক্তারপুর সেতু)। ধলেশ্বরী নদী পারাপারের এ অবকাঠামো থেকে গত অর্থবছর আয় হয়েছে ২৬ কোটি টাকার টোল। ২০২১-২২ অর্থবছর টোল আয় হয়েছিল ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে চালুর পর এখন পর্যন্ত মুক্তারপুর সেতু থেকে টোল আয় হয়েছে মোট ২১২ কোটি টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ মুক্তারপুর সেতু নির্মাণে খরচ হয় ২০৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। টোল আদায়ের মাধ্যমে নির্মাণ ব্যয় উঠে এলেও এখনো এ সেতুর ঋণ পরিশোধ হয়নি।
দেশের সবচয়ে দীর্ঘ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয় ২০২২ সালের ২৫ জুন। যানবাহন চলাচল শুরু হয় পরদিন ২৬ জুন। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে সেতুটিতে যানবাহন চলেছে কেবল পাঁচদিন। এ কয়েক দিনে টোল আয় হয় ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছর টোল আয় হয় ৮১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সরকারের টোল অবকাঠামোয় নতুন করে যুক্ত হওয়া পদ্মা সেতুই মূলত এ খাতের রাজস্বে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
চলতি অর্থবছর চালু হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের আরো দুটি টোল অবকাঠামো। এর মধ্যে ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে নির্মাণ হওয়ার কারণে আগামী ২৫ বছর বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলো টোল আদায় করবে। তবে গত ২৮ অক্টোবর চালু হওয়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের আদায় হওয়া টোল যোগ হবে সরকারি তহবিলে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের পর সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দরকার হয়। এতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। অন্যদিকে যোগাযোগ খাতের এসব অবকাঠামো দিয়ে মানুষ সুবিধাও ভোগ করে। সড়ক-মহাসড়ক উন্নত হলে সেগুলো থেকে টোল আদায় বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। আমাদের দেশেও এ সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা করছি। এখন থেকে যেসব নতুন সেতু হবে সেগুলো টোলের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে অবশ্যই আমরা টোলের হারটি সহনশীল মাত্রায় রাখতে চাই, যেন মানুষের কষ্ট না হয়।’