যুক্তরাষ্ট্র আমার বিরুদ্ধে লেগেছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একসময় খেসারত দিতে হবে ষ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের ডেফিনেশনটা কী সেটাই আমরা এখনো বুঝতে পারলাম না ষ সিকিউরিটির নামে আমাকে বন্দি করে রাখায় ভালো রেস্টুরেন্টে না যেতে পারছি, খেতে পারছি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে সারাক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা কারো সঙ্গে দেশের স্বার্থ বেচে, মানবতার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা কখনো করিনি। যুক্তরাষ্ট্র আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে সারাক্ষণ। তাতে কিছু আসে যায় না। জনগণের শক্তিই হলো বড় শক্তি। গত বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে তরুণদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই একসময় খেসারত দিতে হবে। সিকিউরিটি কাউন্সিলে যুদ্ধ বন্ধের যে উদ্যোগ নেয়া হলো সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিল। আমাদের দেশে মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায় আর তাদের দেশে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের গুলি করে মারে, রেস্টুরেন্টে গুলি করে মারে। তাদের দেশের জীবনের নিশ্চয়তা নাই, কিন্তু তারা অন্যের দেশে খবরদারি করে। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের ডেফিনেশনটা কী সেটাই আমরা এখনো বুঝতে পারলাম না। পুরো পৃথিবী বুঝতে পারেনি। এটাই বাস্তবতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তরুণ-তরুণীদের মুখোমুখি হন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের ভাবনা ও তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো জানতে সরাসরি বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে তিনি তরুণদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সেইসঙ্গে তিনি নানা বিষয়ে তাদের পরামর্শ শোনেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পদ গ্যাস। ৯৬ সালে অন্য কোম্পানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও গ্যাস উত্তোলন করে। তবে তারা গ্যাসটা বিক্রি করার কথা বললে, আমি আপত্তি করি। এর খেসারতও আমাকে দিতে হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। ২০০১-এর নির্বাচনে দেশের ভেতর আর বাইরের চক্রান্ত এক হয়ে গেল। তিনি বলেন, আজকে মানবাধিকার কথা নিয়ে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) প্রশ্ন তোলে। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা তোলে। দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হলো নিজের দেশের দিকে তাকায় না। জাতিসংঘে আমি ফিলিস্তিনি ইস্যুটা তুলেছিলাম। ইইউতেও আমি যখন গেলাম তখন খুব শক্তভাবে এই প্রশ্নটা তুলেছিলাম ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের মারা হচ্ছে এখন কেন সবাই চুপ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় (যুক্তরাষ্ট্র) মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তারা (আমেরিকা) অন্য জায়গায় এসে খবরদারি করে। এই মোড়লিপানা যে তাদের কে করতে দিল আমি সেটা জানি না। আমি এই বিষয়টা সবার আগে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছি এবং প্রতিবাদও করেছি। তারা (আমেরিকা) আমাদের (বাংলাদেশ) শ্রম অধিকারর নিয়ে কথা বলে। তাদের ওখানে (আমেরিকা) কর্মীরা একটা স্ট্রাইক করে সবগুলাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়। এতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু অন্য দেশের বেলা নাক গলায়। ইরানে শাহ পালভীর যখন পতন হয় তিনি একটা কথা বলেছিলেন, আমেরিকা যার বন্ধু হবে তার শত্রু লাগবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজার হাজার যুবক ইউক্রেনে জীবন দিয়েছে। রিফিউজি হয়েছে কত মানুষ। এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে তাদের টাকা নাই, দিতে পারবে না , করতে পারবে না আর্থিক সহায়তা। তাহলে যুদ্ধটা (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) বাঁধালো কেন? এই উস্কানি তারা দিল কেন? রাশিয়ার এই আক্রমণ আমরা সমর্থন করিনি। জাতিসংঘে আমরা খুব হিসেবে করে পা ফেলি। কারণ আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হলো সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের এক স্ট্যান্ড আবার ওইদিকে ফিলিস্তিনি শিশুদের হাসপাতালে বোমা ফেলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বোমা ফেলে হত্যা করা বন্ধ না করে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ইসরায়েলকে উল্টো আরো অস্ত্র কেনার টাকা দিচ্ছে। ইস্যুতে ইসরায়েলকে তারা উলটো আরো টাকা দিচ্ছে অস্ত্র কেনার জন্য। এদের মানবাধিকারের ডেফিনেশন কী সেটাই আমরা বুঝলাম না। পৃথিবী মনে হয় এটা (যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব) বুঝতে পারেনি। তবে সারা বিশ্বে এ ব্যাপারে সচেতন।

যুক্তরাষ্ট্রকে এক সময় খেসারত দিতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ইলেকশনের ব্যাপারে (বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে) অনেক কথা বলে। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয় এই যে বিএনপি ট্রেনে আগুন দিয়ে মা, শিশু পুড়িয়ে ফেলল। এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ। কোনো কথা বলে না। কাজেই এদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এদের নিজেদেরই একসময় খেসারত দিতে হবে। এটা হল বাস্তবতা।

স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে দেখতে পাই বাংলাদেশে কম্পিউটার ও বিজ্ঞানের প্রতি কারও খুব আগ্রহ ছিল না। তাই আমি ক্ষমতায় এসেই কম্পিউটারের ওপর জোর দিচ্ছিলাম। আমরা লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছি। এখন দেশে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। দেশে ফোর-জি ব্যবহার হচ্ছে। ফাইভ-জিও চালুর প্রস্তুতি চলছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে ভাবার সময় আমার ছেলে (সজিব ওয়াজেদ জয়) বুদ্ধি দিলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। তিনি আরো বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা নিজের দক্ষতা অর্জন করবে এবং শিক্ষা-জ্ঞানে ও প্রযুক্তিবিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি হিসেব গড়ে উঠবে। পাশাপাশি সরকারেকেও স্মার্ট সরকার করতে হবে। আমি যখন প্রথমবার এলাম (প্রধানমন্ত্রী হওয়া), দেখলাম কম্পিউটার সাজানো আছে, কিন্তু কেউ ছুঁয়ে দেখে না। এখন সবার হাতে হাতে এসব ডিভাইস আছে। সব ডিজিটাল করে দিলাম। আমি সরকারে আসার পর সবার জন্য মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিলাম। স্কুলে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু করলাম। এখন সব জায়গায়। আমরা সরকারি সব কাজ ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। স্মার্ট সরকার হবে। পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিও স্মার্ট হবে। সরকার ডিজিটালাইজড হলে আমাদের কর্মঘণ্টা বাঁচবে, যোগাযোগ ও যাতায়াতে সমস্যা হবে না। সেই সঙ্গে চাই আমাদের সোসাইটিও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করুক। এখন পেনশন থেকে শুরু করে সব কাজই অনলাইনে করতে পারে। বিভিন্ন ভাতাও অনলাইনে দিয়ে দেই। গ্রাম-গঞ্জে একসময় কিছুই ছিল না। নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে হতো। গত মাসে গিয়ে দেখি সবার হাতে মোবাইল ফোন। গ্রামে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে, টাকা উপার্জন করে। ফ্রিল্যান্সারদের টাকা তোলা নিয়ে সমস্যা হতো, সেটাও সহজ হয়ে গেছে। এখন টাকা তুলতে এ সমস্যা হয় না। করোনার সময়টা যত খারাপ সময় হোক একটা দিকে খুব ভালো হয়েছে, ডিজিটালাইজেশনের দরজাটা খুলে গেছে। আমি সব ধরেনের মিটিং ভার্চুয়ালি করলাম। ওই সময় ১৬০০-এরও বেশি সভা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালে যে বাংলাদেশ হবে, সে সময় প্রত্যেকটা ছেলে-মেয়েই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করবে। নতুন যত প্রযুক্তি আসবে, তারা শিখবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ অনুষ্ঠানের নাতিপুতিরা সব ভবিষ্যতে ৪১-এর কর্ণধার হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা বাগান থেকে শুরু করে সমুদ্র সৈকত- আমাদের অনেক সম্পদ আছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আমাদের কক্সবাজার। এ সৈকত ঘিরে উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। এখানে বিদেশি পর্যটক আনতে চাই। তাই বাইরের কোনো দেশকে একটা অংশ দেবো। তারা ইনভেস্ট করবে, পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য সেই অংশ উন্মুক্ত থাকবে। নেপালের সঙ্গে যৌথভাবে পর্যটন খাত উন্নত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। মালদ্বীপের সঙ্গে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ম্যাজিক কিছু নেই। ব্যাপারটি হলো সময় করে নেওয়া। কাজের ফাঁকেই সময় করে নিতে হয়। হ্যাঁ ব্যস্ত খুবই থাকতে হয়। আমাকে ১৭ কোটি মানুষের দায়িত্ব নিতে হয়। এছাড়া ডেভেলপমেন্টের কাজ হাতে নিয়েছি সেগুলো করতে হয়। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যস্ততাও রয়েছে। এরমধ্যে আমার দল সব সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। এই যে এখন যেমন সারাক্ষণ একটা টেনশনে থাকতে হয় জ্বালাও পোড়াও নিয়ে। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের চিকিৎসা করে যাচ্ছি। আবার পরিবারগুলোকেও সহায়তা করতে হয়। সময় করে নিতে হবে। তরুণ সমাজের প্রতি একটা কথাই বলব নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা। তিনি আরো বলেন, এখন কোনো কিছু হলেই শুনি বোর হয়ে যাচ্ছি, আমাদের সময় এমন ছিল না। আসল কথাটা হলো আত্মবিশ্বাস। আরেকটা বিষয় হলো ডিজিটাল যুগ। আমরা যদি পাঁচজন এক জায়গায় বসি দেখা গেল সবাই হাতে একটা মোবাইল নিয়ে বসে আছি। এর কারণে বাইরের জগৎ চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এর কারণে হতাশা বাড়ছে। আমরা যখন যে কাজটা করব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করব। যাই করব নিজের বিশ্বাস নিয়ে করতে হবে। সেই কাজে আমি যদি সফল না হই তবুওতো আমি আমার চিন্তায় করলাম। এভাবে চিন্তা করলে হতাশ হবে না।
রান্নার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে সিকিউরিটির নামে বন্দি করে রাখে। আমি বলতে পারব না যে ঢাকার কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে যেতে পারছি বা খেতে পারছি। এমনকি বাইরে গেলেও একই অবস্থা দাঁড়ায়। আর রান্নার বিষয়ে বলতে গেলে, আমার ছেলে- মেয়ে নাতিরা আমার রান্না পছন্দ করে। সেইজন্য চেষ্টা করি রান্না করতে। মোরগ পোলাও রান্না করি, মাছ রান্না করি। এছাড়া ইতালিয়ান পিজ্জা, লেজানিয়া এগুলোই করি।

ভবিষ্যতে গ্রামে থাকতে চান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার জন্ম গ্রামে। আমার গ্রাম টুঙ্গীপাড়া। সেখানে নদী আছে। ঢাকা যেতে অনেক সময় লাগতো। রাজনীতির কারণে বাবাকে জেলে থাকতে হতো আমরা গ্রামেই ছিলাম। দাদা-দাদির সঙ্গে আট বছর ছিলাম। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আসি। তবে প্রতি বছর গ্রামে যেতাম। তখন রাস্তাঘাট ছিল না, চারদিকে পানি ছিল। ওইটাই আমার ভালো লাগতো। ভবিষ্যতে আমি গ্রামেই থাকবো। এ জন্য ঢাকায় কোনো বাড়ি করিনি। গ্রামেই মজা।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য অনেক ছেলেমেয়েরই আছে। তবে দেশের জন্য তরুণকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়া না। মানুষের উপকারে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ২৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০০৮ সালে তরুণদের জন্য ‘দিন বদলের সনদ’ ইশতেহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। আর এবার তরুণদের কথা মাথায় রেখেই তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা দেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.