নৌকায় ভোট দিয়ে আবার সেবা করার সুযোগ দিন

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না * ভুল-ভ্রান্তি করে থাকলে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি দেশের সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন জোগাবেন না। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে এই ভাষণ দেন। সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য তার দলের লক্ষ্য তুলে ধরেন এবং অতীতের ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার এবং পুনরায় নির্বাচিত হলে সেই ভুলগুলো শোধরানোর একটি সুযোগ হবে বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেকর্ডকৃত ২৪ মিনিটের এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার, বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং এফএম রেডিওগুলো একযোগে প্রচার করে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই দীর্ঘ চলার পথে যতটুকু অর্জন, তার সবটুকুই আপনাদের অবদান। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এ অর্জন করা সম্ভব হতো না। চলার পথে যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন-এটাই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে, ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তিন মেয়াদের সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ৩ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমতা এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের পথে জাতিকে অগ্রসরমান রেখেছে। ইতোমধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। অর্থনীতির যে কোনো সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে উৎকর্ষতা সাধন হয়েছে। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হবে।

উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার যে সুযোগ পাওয়া যাবে তা কার্যকর করা এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে; তা একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মোকাবিলা করতে পারবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় বিশাল তরুণ সমাজ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল কারিগর। তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করছে। আমাদের সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করে। জনগণের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ব্যাপক হারে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া দেশের পররাষ্ট্র নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। শেখ হাসিনা যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন জাতির উদ্দেশে দেওয়া এই ভাষণে। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। প্যালেস্টাইন ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ হোক সেটাই চাই। প্যালেস্টাইনে যে গণহত্যা চলছে, আমরা তার অবসান চাই। বাংলাদেশ সব সময় প্যালেস্টাইনের জনগণের পক্ষে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন-২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে দেশ পরিচালনায় সাফল্য আমরা পেয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তোলার ইশতেহার ঘোষণা করেছি। আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার এবং দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয় ক্ষমতার আওতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা টেকসই করে আরও উন্নত জীবন যাতে আপনারা পান-ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে আগামী ৫ বছরে আমরা কি কি কাজ করব সেই ব্যাখ্যা তুলে ধরেছি। আজ আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এই উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবনমান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা সমালোচনা করেন-দুঃখের বিষয় যে, তারা সঠিক তথ্যটা জাতির সামনে তুলে ধরেন না। দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা তাদের চরিত্র। মনে হয়, বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি দেখলে তারা বিমর্ষ হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তার ভাষণে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ৭৫-পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে বর্তমান মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহিদ ও সম্ভ্রমহারা মা বোন এবং ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত এবং বিভিন্ন গণআন্দোলনে শহিদ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা “আমাদের ডাক এসেছে/এবার পথে চলতে হবে।/ ডাক এসেছে চলতে হবে আজ সকালে/বিশ্বপথে সবার সঙ্গে সমান তালে।/ পিছন পানে তাকাস নি আজ, চল সমুখে/ জয়ের বাণী নূতন প্রাতে বল ও-মুখে” উদ্ধৃত করে তার ভাষণ শেষ করেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.