পরিবর্তন আনতে ব্যয় ১৭ কোটি টাকা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানী ঢাকা দিন দিন পরিণত হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। সিটি করপোরেশনের গৃহস্থালিসহ সব ধরনের ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের নানা উদ্যোগের মাঝেও সেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। রাস্তার পাশে, খালের পাশে, ফ্লাইওভারের নিচে, ময়লার ডাম্পিং স্টেশনের সামনে আবর্জনা জমে প্রতিদিনই। কোনো কোনো স্থান থেকে ময়লা পরিষ্কার করা হলেও অবশিষ্ট পড়ে থাকে আরও অনেক আবর্জনা। সেসব ময়লা-আবর্জনার দূর্গন্ধের কারণে স্থানীয়দের মুখে রুমাল চেপে চলতে হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় ডাম্প ট্রাক ক্রয় করা হয়েছে। এসব ডাম্প ট্রাক ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা দেখেছি, এক সময় ঢাকা শহরে বর্জ্য উপচে পড়ে থাকত। রাস্তা, নর্দমা, হাঁটার পথে প্রায় শতভাগ বর্জ্য পড়ে থাকত। এ খাতে একটি অব্যবস্থাপনা ছিল। আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। এখন প্রায় ৮০ শতাংশ বর্জ্য আমরা নিয়মিতভাবে সংগ্রহ করে মাতুয়াইল ভাগাড়ে নিয়ে যেতে পারছি। এটি একটি বিশাল কর্মকা-। এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য রাত থেকে ভোর পর্যন্ত আমাদের ব্যাপক যান যন্ত্রপাতি ও যানবাহন প্রয়োজন হয়। সকাল বেলা নগরবাসী তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যখন বের হয় তখন তারা যেন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর পায়, সেজন্য নিয়মিত আমরা এই কাজ পরিচালনা করে থাকি।
শেখ তাপস বলেন, আগে যান যন্ত্রপাতির অভাবে বিভিন্ন জায়গা হতে এসব বর্জ্য নিয়মিত সংগ্রহ করতে পারতাম না। সেই প্রেক্ষিতে আমরা এসব যানবাহন সংগ্রহ করেছি। বর্জ্য সংগ্রহ ও স্থানান্তরের জন্য করপোরেশনের ইতিহাসে এই প্রথম একসাথে ২৫টি ডাম্প ট্রাক ক্রয় করা হলো। নিজস্ব অর্থায়নেই আমরা ১০ টন সক্ষমতার অত্যাধুনিক এসব ডাম্প ট্রাক ক্রয় করেছি। এতে করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরো গতিশীল ও বেগবান হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা পাশে রাখা হচ্ছে গৃহস্থালি ময়লা। কোনো কোনো স্থানের কাছেই এসটিএস থাকলেও ময়লা ফেলা হচ্ছে বাইরে রাস্তার ওপর। আবার কোনো স্থানে জায়গার অভাবে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা হচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বড় সমস্যা প্রধান সড়কের উপর ময়লার ভাগাড়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশনের এই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ১০০ গজের মধ্যেই ময়লার ডাম্পিং থাকার কারণে নানা ধরনের কথা বলছেন এই এলাকার মানুষ। এলাকাবাসী বলছেন, কাউন্সিলরসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যেন অন্ধ। দেখেও না দেখার ভান করছেন। দীর্ঘদিন এমনভাবে রাস্তার উপর ময়লা রাখা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি কলোনীর প্রধান সড়কে এমন ময়লার স্তুপ থাকার ভোগান্তি বাড়ছে এই এলাকার মানুষের। বিদ্যালয়ের আশেপাশে ময়লা-আবর্জনা গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে ফেলার কারণে এমন স্তুপ হয়েছে। দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আবর্জনার স্তুপ সরাতে কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। স্কুলে যেতে হলে নাক চেপে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। এত দুর্গন্ধ, বলার বাইরে। দ্রুত এ স্থান থেকে বর্জ্যরে ভাগার অপসারণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
মতিঝিলের টিএন্ডটি স্কুলের সামনের সড়কে দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তার ওপর রাখা হচ্ছে ময়লা। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার গৃহস্থালী ময়লা এখানে রাখা হচ্ছে। দুই ওয়ার্ডের ময়লা এখানে রাখার কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই পথে চলাচলকারী লোকজনকে। এই এলাকার আশে পাশে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার পরও এভাবে ময়লা আবর্জনা রাখার কারণে বিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। সকাল বেলা বাসা-বাড়ি থেকে ভ্যানগাড়ি করে ময়লা আনার পর এই রাস্তার ডাম্পিং স্টেশনে রাখা হয়। সেই ময়লা ডাম্পিং স্টেশনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। এমন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পুরো সময় ঢাকা শহরকে যেন আরও বেশি অপরিচ্ছন্ন ও বসবাস অনুপযোগী করে তুলছে। সেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার ময়লা ভ্যানে করে জমা করা হয়। জমা করে রাখা গৃহস্থালী ময়লা রাস্তার উপর পড়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত করে।
ময়লা ফেলতে আসা এক ভ্যানচালক বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা নিতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়। অনেক বাসায় গিয়ে বিভিন্ন তলা থেকে ময়লা আনতে হয় এসব ময়লা ড্রামে ভরে ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে আসি তা এখানে এসে রাখা হয়। এখান থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়। উঠানো নামানোর সময় রাস্তায় পড়ে দুর্ঘন্ধ সৃষ্টি হয়।