বঙ্গবন্ধুকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

0

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে যারা অস্বীকার করছে, সরকারের কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে একসময় মুছে ফেলা হলেও এখন আর কেউ তা পারবে না। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনাসভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশ ও বাঙালি, আজকে বিশ্বের বুকে যে পরিচয়টা পেয়েছি, সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, এই উপমহাদেশে একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। সে জাতি-রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি।’

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সব কিছু অর্জন করতে হয়েছে অনেক আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে।

১৯৪৭ সালে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়, সেখানে বলা হয় রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা এই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানান।’

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুছিয়ে ফেলা হয়েছিল।

এখন তা মুছতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করা, ছুটি দেওয়া, শহীদ মিনার তৈরি প্রকল্প গ্রহণ ও বাজেট দিয়েছিল।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ১৯৫৮ সাল থেকেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট করত। আমি ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে এসবির অফিস থেকে সব ফাইল সংগ্রহ করি। আমার সঙ্গে ছিল বেবী মওদুদ।

দুজনে মিলে ফাইলগুলো পড়ি। ভাষা আন্দোলনে তিনি কী কী কাজ করেছেন, তা কিন্তু স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম খণ্ডেই অনেক তথ্য পাবেন। রিপোর্টগুলো যেহেতু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে, এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখনই তথ্যগুলো নিয়ে একবার বক্তব্য দিলাম, আমাদের দেশের একজন লেখক, যাঁর বাবার ভাষা আন্দোলন ও তাঁর অবদান নিয়ে লেখেন, তিনি আমার ওপর খেপে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখলেন, আমি নাকি এসব তথ্য বানিয়ে লিখেছি। আমি আর বেবী মওদুদ তথ্যগুলো নিয়ে এম আর আক্তার মুকুল ভাইয়ের বাসায় যাই। আমরা তো চুনোপুঁটি, আমরা লিখলে হবে না। তাই মুকুল ভাইকে বললাম আপনি লিখবেন, আপনি জবাব দেবেন। উনি লিখলেন, তারপর আর কোনো কথা নেই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা, এটা আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ করত। এখনো দেখবেন, যা কিছু করেন কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না। ভালো না লাগার গ্রুপই আমাদের বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়। তাদের কিছু ভালো লাগে না, এটাই হলো বড় কথা।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। মহান একুশ যে আদর্শের শিক্ষা দিয়েছিল, সেই আদর্শে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে বলেই মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা এবং বিশ্বাস অর্জন করেছে। ফলে জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। পঁচাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশে যে কয়টা নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। হাজার চেষ্টা করে, অপবাদ ছড়িয়ে, দেশে বিদেশে নানা তদবির করেও জনগণকে ঠেকাতে পারেনি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আবার শুনি তাদের বড় বড় কথা, আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেবে।’ তিনি এ সময় বাম রাজনীতির কিছু দলের সমালোচনা করে বলেন, ‘সরকার হটানোর আন্দোলনে কিছু বামপন্থী দলও রয়েছে—তারাও এখন লাফায়। তারাও আন্দোলন করবে, বিপ্লব করবে।’

বারবার তাঁকে হত্যাচেষ্টার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ও তাঁর দলের নেতাকর্মীরাই তাঁকে মানব ঢাল রচনা করে বারবার বাঁচিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারি, সে জন্য অনেক রকম চক্রান্ত হয়েছে। তার পরও আসতে আসতে (ক্ষমতায়) এই পঞ্চম দফায় এসে গেছি এবং বাংলাদেশটা এই ১৫ বছরে অন্তত বদলে গেছে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের উন্নতি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ সভায় বক্তব্য দেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.