রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট হবে না

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়, অবৈধ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপতৎপরতা চালায়, তাদের গণপিটুনি দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রমজানে কোনো জিনিসের অভাব হবে না।

এরই মধ্যে সব কিছুর ব্যবস্থা করা আছে। এটা নিয়ে অনেকে কথা বলবে, কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না। রমজান তো কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য, রমজানে একটু কম খাই। আমাদের দেশে রমজানে খাবারদাবারের চাহিদা একটু বেড়ে যায়।

সাধারণত রমজানে যে বিষয়গুলো, যেমন—ছোলা, খেজুর, চিনি, এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা। এগুলো পর্যাপ্ত আনার ব্যবস্থা আছে, এগুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। সেই ব্যবস্থা অনেক আগেই করে রেখেছি।’

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/February/24-02-2024/2/kalerkantho-ft-1a.jpgসংরক্ষণের ব্যবস্থা অনেক সময় শাঁখের করাতের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি এলাকার কথা বলি, যেমন পাবনায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, মাচা করে করে বাতাস দিয়ে রাখা হয়। আপনি জানেন, কৃষকরা কত চালাক, তারা কিন্তু ওই বাজারের দাম দেখে এর পরে ছাড়ে। মোবাইল ফোন সবার হাতে আছে, দামটা তারা ঠিকই খবর পেয়ে যায়, কোথায় কী দাম। দাম যদি না পায়, বাজারে ছাড়ে না। এটা অনেকটা শাঁখের করাতের মতো।

আপনি উৎপাদন করবেন, কৃষক উৎপাদন করবে, উৎপাদিত পণ্যটা সে বাজারজাত করবে, আপনি যদি এখন বেশি দাম কমাতে যান, কৃষক তার মূল্য পাবে না। আবার দাম বাড়লে যাদের নির্দিষ্ট আয়ে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট।’

প্রত্যেক বিভাগে আলাদা আলাদা পণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

বাজার কারসাজিতে সরকার উত্খাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র

নিত্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উত্খাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনাটি ‘নির্বাচন বানচালের ঝড়যন্ত্রের অংশ ছিল’ বলেই তিনি মনে করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো যে হঠাৎ করে করা তা তো না, এটা পরিকল্পিতভাবে।

প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশে মার্চের দিকে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে তিনি নির্বাচনের আগে মন্তব্য করেছিলেন, সেই শঙ্কা এখনো আছে কি না। আর বাজার কারসাজি কিভাবে মোকাবেলা করা যায়?

উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র আছে। আপনারা জানেন, আমি আসার পর থেকে বারবার আমাকে বাধা দেওয়া, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি। পঁচাত্তর সালে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনাই ধরুন না কেন, রাসেলকেও তো ছাড়েনি, কেন, যেন ওই রক্তের কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গেছি, ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতি দেশ স্বাধীন করেছে, সেটা পূরণ করা। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে, বারবার—আজকে মানুষের ভোটের অধিকার, আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি, তার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনটা যাতে না হয়, তার জন্য একাটা বিরাট চক্রান্ত ছিল, আপনারা জানেন। আপনারা ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করেন। ২০১৩ সালের যে অগ্নিসন্ত্রাস, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, এরপর আবার গত বছর ২৮ অক্টোবর।’

সেই ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এ ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন দেখল যে ইলেকশন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের একটা স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হলো যে জিনিসের দাম বাড়বে, সরকার জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, তখন আন্দোলন করে সরকারকে উত্খাত করব। এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ। কাদের, সেটা আপনারা ভালো বোঝেন, আমি আর কারো নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে।’

এদের গণপিটুনি দেওয়া উচিত

সেই মহামারির সময় থেকে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এবং সেটা শুধু বলা না, কার্যকরও করেছি।’

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় তো বাংলাদেশে অভাব হলে বলত পেটে ভাত নাই। এখন কি সেই কথাটা বলে? বলে না। কী বলে? ডিমের দাম, পেঁয়াজের দাম, মুরগির দাম, গরুর মাংসের দাম, অথবা পাঙ্গাশ মাছের পেটি খেতে পারছে না, এই তো? এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরে তো এই পরিবর্তনটা এসেছে, সেটা তো স্বীকার করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আগে কী ছিল? ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন-ভাত, ভাতের ফ্যান চাইত, এখন তো ভিক্ষা চায় না।

প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনি নিজেই তো বললেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো। আপনার কি এটা মনে হয় না, এই যে যারা সরকার উত্খাতের আন্দোলন করে, এখানে তাদেরও কিছু কারসাজি আছে? এর আগে এ রকম পেঁয়াজের খুব অভাব, দেখা গেল বস্তাকে বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোকে কী করা উচিত? সেটা আপনারাই বলেন। এদের গণপিটুনি দেওয়া উচিত। কারণ আমরা সরকার কিছু করতে গেলে বলে সরকার করছে, তার চেয়ে পাবলিক যদি এটার প্রতিকার করে তাহলে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।’

জেলেনস্কিকে যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছি, পুতিনকে পেলেও বলব

ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের ঘটনাপ্রবাহে ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে আবারও যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মানিতে নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে তিনি যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পেলেও একইভাবে কথা বলবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি যে যুদ্ধটা কিভাবে বন্ধ করা যায়, সেটা আমাকে বলেন। আমার সোজা প্রশ্ন ছিল, যুদ্ধ কিভাবে বন্ধ করা যায়, এটাতে তো সবাই কষ্ট পাচ্ছে; মহিলা, শিশু, যুবসমাজ কত জীবন দিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হলেও সেই একই কথাই আমি বলব যে আমি যুদ্ধ চাই না, আপনি যুদ্ধ বন্ধ করুন। আমি আমার কথা বলে যাব, এরপর কেউ বুঝলে বুঝুক, আমার কিছু আসে যায় না।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের পর জেলেনস্কির কী উত্তর ছিল, এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি অনেক ব্যাখ্যা দিলেন, কী কী হয়েছে, অনেক কিছু।’

ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখি যে বিশ্বমোড়লরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। এক জায়গায় ফিলিস্তিনের সব জমি দখল করে ফেলছে, ওটা ইনভেশন না, আর ইউক্রেনেরটা ইনভেশন। তো, দুমুখো নীতি কেন হবে, সেটা আমার প্রশ্ন ছিল।’

অন্যদের দ্বিমুখী নীতির বিপরীতে নিজের স্পষ্ট অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি জানি, অনেকে স্পষ্ট করে বলবে না সাহস করে। নানা জনের নানা দুর্বলতা থাকে, আমার তো কোনো দুর্বলতা নাই। আমার তো চাওয়া-পাওয়া নাই, আমার কাছে ক্ষমতাটা হলো, ‘থাকে লক্ষ্মী, যায় বালাই’ বলে একটা কথা আছে না…আমার কাছে সেটাই। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নাই। আমার একটা লক্ষ্য ছিল—২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হবে, বাংলাদেশকে একটা ধাপ তুলতে হবে, আমি সেটা করে দিয়েছি। আর এখন আমি ক্ষমতা আসব কি আসব না, আমি তো পরনির্ভরশীল হয়ে করি নাই। আমার একমাত্র নির্ভরতা হচ্ছে আমার দেশের জনগণ।”

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বও প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হবেই। আমার দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হবে, এখন তো বিশ্বটা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ।’

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময় মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধে না যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, ‍ওদের সঙ্গে যুদ্ধে যাইনি, মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়াও করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করছি এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি যে তারা ফেরত নিক। এখনো যে অবস্থাটা বিরাজ করছে, আমি আমার সহকর্মীদের বলেছি, ধৈর্য ধরে আমরা লক্ষ রাখব, কোনো কিছুতে আমাদের উত্তেজিত হলে চলবে না, শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এবং সেটা করে আমরা কিন্তু সুফল পাচ্ছি।’

টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের, কেউ নিতে পারবে না

‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ বাংলাদেশ না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য, এমন বিতর্কের মধ্যে নিজে এই কাপড় টানা কয়েক দিন পরার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; উদ্দেশ্য এই পণ্যকে নিজেদের হিসেবে ‘দেখানো’।

সংবাদ সম্মেলনে নিজের এমন কৌশলী অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটা যে আমাদের, সেটা দেখানোর জন্য আমি কয়েক দিন একটানা শুধু টাঙ্গাইলই পরলাম যে এটা আমাদের, কাজেই অন্য কেউ নিতে পারবে না।’

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.