শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালুর অপেক্ষা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চলতি বছরেই পুরোপুরি চালু করতে সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক।

ইতোমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এপ্রিলের শুরুতেই তাদের কাছ থেকে টার্মিনাল বুঝে নেবে বেবিচক। আর সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে অক্টোবরেই পুরোদমে চালু হবে এ টার্মিনাল।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা আছে এ বছরের অক্টোবরেই চালু করার। আর এ টার্মিনাল পরিচালন করবে জাপান। পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় তারা এটি পরিচালন করবে। সেই চুক্তিটা সম্পন্ন হতে একটু সময় লাগছে।”

ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগামী ৬ এপ্রিল টার্মিনালের সবকিছু বুঝে নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ওদের কাজ প্রায় শেষ। আমারা লিমিটেড রিসোর্স দিয়ে চেষ্টা করব এটাকে চালু করার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। আমাদের লোকবলের স্বল্পতা আছে। যেহেতু জাপানকে দেওয়া হবে, আমরা লোকবলও নিইনি।

“আমি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাও দিয়েছি। মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও আলাপ করছি। আর যদি জাপানকে দিয়েই চালু করতে হয়, তাহলে হয়ত একটু সময় বেশি লাগতে পারে। যেভাবে করলে ভালো হবে, আমরা সেটিই করব।”

গত বছরের ৭ অক্টোবর এই টার্মিনালের সফট ওপেনিং বা আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় বেবিচক জানিয়েছিল, ২০২৪ সালেই পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হবে থার্ড টার্মিনালের। সেই লক্ষ্য ধরেই এগোচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে কে

সফট ওপেনিংয়ের পরই থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কে পাবে, সে নিয়ে জল্পনা ছিল। বর্তমানে শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব নিতেও আগ্রহী তারা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং উন্নত করতে গত এক বছরে বিমান ১ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছে। জনবলের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত নিয়োগ কার্যক্রম চালু রাখার পাশাপাশি তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে প্রতিদিন শাহজালালে ৬০ থেকে ৭০টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে। সেই সেবা তো আমরাই দিচ্ছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের ২০০টির বেশি ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।

“আমাদের তো ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালেও আগে অনেক কিছুই ছিল না। ধীরে ধীরে সেই জায়গায় উন্নতি হয়েছে। এখন আমরা আরও বড় পরিসরে কাজ করছি।”

তবে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব কারা পাবে, সেটি জাপানই নির্ধারণ করবে বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান।

তিনি বলেন, “যেহেতু তারাই এটি পরিচালনা করবে। আমরা সরকারের পক্ষে জাপানকে দিচ্ছি। জাপানিরা কাদের দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করাবে সেটা তাদের ব্যাপার। বিমান চেষ্টা করছে উন্নত করতে। উন্নতি কিছুটা হয়েছেও। তবে যে পরিমাণ প্যাসেঞ্জার আসবে, প্লেন চলাচল করবে থার্ড টার্মিনাল হলে ওটার সক্ষমতা যাচাই করবে জাপান। সেটি যাচাই করে যারা যোগ্য, তারাই পাবে।

“কারণ আমরা তাদের কাছে ভালো সার্ভিস চাইব এবং ভালো রেভিনিউ চাইব। এটা করতে হলে ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং লাগবে। এখন জাপান যাচাই করুক।”

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “তবে এয়ারলাইন্সগুলোর আশা হচ্ছে দুই-তিনটা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার থাকলে ভালো হয়। তাহলে সার্ভিসটা উন্নত, কম্পিটিটিভ হবে এবং বেশি পরিমাণ ট্রাফিক আমরা এখানে হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হব।”

বিকল্প রানওয়ে কতদূর

থার্ড টার্মিনালকে ঘিরে বিকল্প একটি রানওয়ে তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। শাহজালালে এমন উদ্যোগ এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালেও নেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল এই বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) নিয়ম অনুসারে, উড়োজাহাজ নিরাপদে ওঠানামা করতে দুটি রানওয়ের মধ্যে অন্তত ৭৫০ ফুট দূরত্ব থাকতে হয়। ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং বা আইএলএস ব্যবহার করে ফ্লাইট ওঠানামার ক্ষেত্রে এই দূরত্ব আরো বেশি রাখতে হয়। এই দূরত্ব মেনে আলাদা রানওয়ে তৈরি ‘সম্ভব নয়’ বলে আগের উদ্যোগগুলো থেকে জানা গিয়েছিল।

তবে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলছেন, “বিকল্প রানওয়ের জন্য আমরা ফিজিবলিটি স্টাডি করে রেখেছি। এখন সরকারের অনুমোদন নিয়ে আমাদের আশা যে ২০২৫ সালের দিকে আমরা কাজটা শুরু করতে পারব। এখন প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত আর অর্থের যোগান- এই দুটো হয়ে গেলে আমরা কাজটা শুরু করতে পারব।”

২০১৭ সালে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকার যোগান দিচ্ছে সরকার। এভিয়েশন কনসোর্টিয়াম ঢাকার (এডিসি) মাধ্যমে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.