চাটমোহরের কাটেঙ্গা গ্রামে ২০০ বছরের পথচলা রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় নদীর পাড় ঘেঁষে ২০০ বছর পুরোনো ২২ পরিবারের শতাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ বাঁশ দিয়ে দখল করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে একই এলাকার ওয়াজেদ আলী প্রামানিকসহ তার লোকজন।
ভূক্তভোগীরা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বারস্থ হলে তিনি বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি বিষয়টি আমলে নেননি। চেয়ারম্যানের কোন সাড়া না পেয়ে ভূক্তভোগীরা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৬৬৯/২০২৪ (চাটমোহর)। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ প্রামানিকের বাড়ি হতে মৃত ইউসুফ প্রামানিকের বাড়ি পর্যন্ত ২০০ ফিট লম্বা ও ১২ ফিট প্রশস্ত রাস্তাটি ২০০ বছর ধরে বাদীসহ ২২ টি পরিবারের শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। রাস্তাটি গুমানী নদী সংলগ্ন কাটেঙ্গা দক্ষিণপাড়া হতে কাটেঙ্গা বাজারগামী। প্রতিদিন ২২ পরিবার থেকে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাট-বাজার ও পাবনা শহরের চাকুরির সুবাদে লোকজন যাতায়াত করে থাকে। অসংখ্যবার স্থানীয় সরকারের পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাটি ভরাটসহ রাস্তা সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। গত ২৬ জুলাই ২৪ একই এলাকার ওয়াজেদ আলী প্রামানিক, আহেদ আলী প্রামানিক, অহেদ আলী প্রামানিক, সবুরা খাতুন, আফরোজ খাতুন, ফরিদা খাতুন ও শামসুন্নাহার জোটবদ্ধ হয়ে তাদের অন্য লোকজনকে সাথে নিয়ে রাস্তাটি দখল করে বাঁশের খুটি দিয়ে আটকে দেয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয়রা একাধিকবার শালিস ও বৈঠক করলেও তাতে কোন নিষ্পত্তি হয়নি। রাস্তার প্রতিবন্ধকতা দুর করতে দখলকারীদের বলতে গেলে তারা বাঁশ খুটি না তুলে উল্টো বাদীসহ অন্যদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন।
ভূক্তভোগীরা বলেন, আমাদের ২২ পরিবার কৃষি নির্ভর। মাঠে ফসল ফলাই। আবাদ করি। উৎপাদিত ফসল গরুর গাড়ী, ভ্যান বা পাওয়ার টিলারে করে বাড়ি আনতে হয়। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছি। এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই। এ জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপাশি এই অবৈধ দখলদারের কঠিন শাস্তি দাবী জানাচ্ছি।
মামলার বাদী এডভোকেট আব্দুর রউফ প্রামানিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াজেদ প্রামানিক অবৈধ ভাবে যাতায়াতের রাস্তাটি দখল করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি বাঁশখুটি দিয়ে দখল করে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে মিমাংসার জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন বিচার পাইনি। বাধ্য হয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি প্রতিবন্ধকতা মুক্ত চাই।
ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, ওই এলাকায় আমার যাতায়াত নেই। আর এমন ঘটনা ঘটেছে তাও জানিনা। ৫ আগস্টের পর আমি চেয়ারম্যান নেই। আগে কি হয়েছে সেটা মনেও নেই। ইউনিয়ন তো অনেক বড়। ছোট ছোট বিষয় আর পাড়ার খবর রাখার মতো সময় আমার ছিল না।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ আমার জানা নেই। আদালতে মামলা হয়েছে কিনা জানিনা। আদালত থেকে আমাকে কোন তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়নি।