বাংলা ও বাঙালীর হাজার বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস সমৃদ্ধ শেকড় থেকে শিখরে’ ভাষ্কর্য

পাবনায় ইতিহাস আর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ স্থাপত্য শৈলী গড়ে উঠায় আনন্দিত উত্তর জনপদের মানুষ। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় গর্বিত শিক্ষার্থীরা

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলা ও বাঙালীর হাজার বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস সমৃদ্ধ শেকড় থেকে শিখরে’ ভাষ্কর্য পাবনায় আজ ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে । নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালীর হাজার বছরের যে আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। এ সব কিছু স্বনিবেশিত শেকড় থেকে শিখরে’ এক চত্বরে। দেশের মধ্যে এই প্রথম পাবনায় ইতিহাস আর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ স্থাপত্য শৈলী গড়ে উঠায় আনন্দিত উত্তর জনপদের মানুষ। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় গর্বিত শিক্ষার্থীরা।

নবাব সিরাজুদ্দৌলার পলাশীর প্রান্তরে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পতনের মধ্যে দিয়ে বাঙালী যে স্বাধীনতার স্বাধীকার হারায়। তা অর্জনের লক্ষে বিভিন্ন সময়ে বাংলা বাঙালীর যে আন্দোলন সংগ্রাম, সেই আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ইংরেজ আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলার ফকির – সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাশেঁর কেল্লা বানিয়ে তিতুমীরের বিদ্রোহ ঘোষণা ও আত্মত্যাগ। প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন করে বাংলার কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম,ফরায়েজী আন্দোলনের পুরোধা হাজী শরিয়ত উল্লাহ, মুহম্মদ মহসীন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম, ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহ, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কুশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন ভারতের সিপাহী জনতার বিদ্রোহ। নীল বিদ্রোহ। বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে সূর্যসেন ও ক্ষুদিরামের ভূমিকা। ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন ও সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর গণহত্যা, স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর শাসনামল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড। এ ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়ায়ে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র-মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির মূলধারা’য় প্রত্যাবর্তন। পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মাসেতু সহ উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানামুখি অগ্রযাত্রা এ সমস্ত কিছুই স্বনিবেশিত হয়েছে একটা ছাদের নিচে, নির্মিত হয়েছে এই চত্বরে ‘শেকড় থেকে শিখরে। এটি পাবনার আমিনপুর থানার নাটিয়াবাড়ি ধোপাখোলা করনেশন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের পাশে পরিত্যাক্ত খাল ভরাটের মাধ্যমে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয় ও দৃষ্টি নন্দন চত্বর। যেখানে বাংলার আপোষহীন কৃত্তি মানদের স্বচিত্র কথা উল্লেখ থাকায় প্রতিদিন এখানে শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। বিদ্যালয়ের টিফিন সময়ে আর ছুটির পড়ে তাদের অন্যতম প্রিয় জায়গা এটি। এখান থেকেই তারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছেন। জানাতে পারছেন কৃত্তিমান মানুষদের সর্ম্পকে। শিল্পী বিপ্লব দত্তের শিল্পকর্মে এবং খন্দকার আজিজুল হক আরজু’-পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পাবনা ২ আসনের সাবেক এমপি’র পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শেকড় থেকে শিখরে’এ ভাষ্কর্যটি ২০১৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানান এটা দেশের মধ্যে প্রথম কংক্রিটের স্তম্ভে তৈরি বঙ্গবন্ধুর অবক্ষ ভাস্কর্য, এটা আমাদের বিদ্যালয়ের পাশে তৈরি হওয়ায় আমরা সত্যিই গর্বিত। এখানে আমাদের শিক্ষার অনেক বিষয় রয়েছে। আমাদের পাঠ্য বই এর বাহিরে এখানে মাঝে মধ্যে ক্লাসের শিক্ষকদের সাথে এসে তাদের কাছ থেকে হাতে কলমে শিখতে পারছি, এখান থেকে আমরা প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছি। এছাড়া এখানকার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ম্পকে বিশেষ কিছু জানা হয় না। আমাদের বইয়ে সামান্য কিছু দেয়া থাকে। বিস্তারিত না থাকলেও ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা জানতে পারছি। এ জন্য আমরা খুবই আনন্দিত।

বিভিন্ন এরাকা থেকে দর্শনার্থীরা জানান বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস একসাথে এক চত্বরে এসে দেখতে ও জানতে পারায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি। পাবনা-২ আসরনর সাবেক সংসদ সদস্য  ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আজিজুল হক আরজু বিডি২৪ ভিউজ কে বলেন , শেকড় থেকে শিখরে’ এটা গড়ে তোলার পেছনে একটি বড় উদ্দেশ্যে কাজ করে, নতুন প্রজন্ম যারা, তারা এখান থেকেই শিক্ষা নেবে, তারা এখান থেকেই ইতিহাস জানবে। বাংলা বাঙালীর গৌরব উজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস কে জানবে। এবং তাদের পুরনো যে ঐতিহ্য যা তাদের কাছে অজ্ঞাত ; সেই অজ্ঞাত সত্যকে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় এটি নির্মাণ করি।

স্কুল শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা মোহন বলেন এটা স্থাপিত হবার ফলে আমাদের যে শিশু সন্তানরা আছে, তারা অতীত ও বর্তমান সর্ম্পকে জানতে পারছে, এটা আমাদের গর্ব। অবসর সময়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে এসে ইতিহাস বির্নিমানে যাদের অবদান তাদের জীবনী পড়ে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছে । শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, এখানকার স্থানীয়দের ভালোবাসার আঙিনায় পরিণত হওয়া চত্বরটি আগামীদিনে আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে। সে আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। এমনটাই প্রত্যাশা পাবনাবাসীর।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.