নেত্রকোণায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

0

মেহেদী হাসান আকন্দ : নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ঘরের নকশার পরিবর্তন ও সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতেও করা হয়েছে অনিয়ম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীন যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নিমার্ণ উপখাতের আওতায় জেলার ৮টি উপজেলায় ১ কোটি ৯৮লক্ষ টাকা ব্যয়ে সরকার ১৬৫টি সেমি পাকা গৃহ নিমার্ণ করে দেন। এছাড়াও গত ৩০এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৩টি গৃহ নিমার্ণ বাবদ ১৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্ধ প্রদান করেন। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় ৪টি গৃহ নিমার্ণ বাবদ ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ১৩মে কলমাকান্দা উপজেলায় ১৩টি গৃহ নিমার্ণ বাবদ ১৫লক্ষ ৬০হাজার টাকা বরাদ্ধ প্রদান করেন। ২৭মে ৩টি গৃহ নিমার্ণ বাবদ ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় ২টি গৃহ নিমার্ণ বাবদ ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।

৩টি আদেশে মোট ১৯টি গৃহ নিমার্ণ বাবদ ২২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করেন। ১৯টি গৃহের মধ্যে ১৬টি গৃহ কৈলাটি ইউনিয়নে নিমার্ণ করা হয়। কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের ঘনিচা গ্রামের উপকারভোগী সায়েদুর রহমানের স্ত্রী আরিফা জানান, ঘর নিমার্ণের সকল সামগ্রী তাদের নিজ খরচে পরিবহণ করতে হয়েছে এবং কিছু সামগ্রী নিজ অর্থে ক্রয় করতে হয়েছে। এতে তাদের প্রায় ২০হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। ঋণ করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার পাওয়া ঘরের পিছনে এতোগুলো টাকা খরচ করে তারা বিপাকে পড়েছে। দিনমজুর স্বামীর আয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে সংসার চালাতে হিমসীম খেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। আরিফা আরোও জানান, গৃহ নিমার্ণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। ঘরের ছাউনী দিতে গিয়ে বারান্দার ৩টি পিলার ভেঙ্গে পড়েছিল। এটি একটি খেলনা ঘরের মতো। এই খেলনা ঘরে তাদের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। একই ধরনের অভিযোগ করেন, উপকারভোগী ঘনিচা গ্রামের নবী হোসেনের ছেলে দিনমজুর বাচ্চু মিয়া, ফুলেছা আক্তারের স্বামী রুক্কু মিয়া, বামনীকোনা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে আবু বকর, দক্ষিণ কান্দাপাড়া গ্রামের মঞ্জিলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন। বামনীকোনা গ্রামের হাদিস মিয়ার স্ত্রী জানান, ঘনিচা গ্রামের হাফিজুর রহমানের স্ত্রী শরিফার নামে বরাদ্ধকৃত গৃহ তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ঘনিচা গ্রামের উপকারভোগী জাহানারার স্বামী শফিকুল ইসলামের নিজস্ব বাড়ীর জায়গা ২০শতাংশ ছাড়াও মাঠে ফসলী জমি রয়েছে। জাহানারার ঘর নিমার্ণের নকশা পরিবর্তন করে বিশাল আকারের ২টি ঘর, বারান্দা ও রান্না ঘর নিমার্ণ করে দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে জাহানারা আক্তারের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় ২টি ঘর সাথে নিমার্ণ করা হয়েছে রান্না ঘর। যা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের নকশাঁর মধ্যে পড়েনা।

জাহানারার স্বামী শফিকুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার নিজস্ব বাড়ীর জায়গা ২০শতাংশ এবং মাঠে রয়েছে কয়েক কাঠা ফসলী জমি। এছাড়াও একই গ্রামের মৃত ইনছান মিয়ার ছেলে মোঃ মোস্তফার নামেও রয়েছে অনেক সম্পদ। নিয়ম অনুয়ায়ী মোস্তফা উপকারভোগীর তালিকায় না আসলেও তিনিও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোস্তফার নামে বরাদ্ধকৃত ঘরে কেউ বসবাস করেনা। মোস্তফার ছোট ভাই মোখলেছ মিয়া জানান, ঘরের সঙ্গে জোড়া দিয়ে আরোও ঘর নিমার্ণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগে ২লক্ষ টাকা খরচ করে ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধান কাটা হলে ঘরের সাথে আরোও ঘর করে বড়ভাই এই বাড়ীতে বসবাস করবেন। কলমাকান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। এই প্রকল্পের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা। উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ বুলবুল হোসেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন তিনি এবিষয়ে বলতে পারবেন। উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ বুলবুল হোসেন বলেন, এই প্রকল্পে যে পরিমান বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে গৃহ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। আমি বাড়ীর জমি বিক্রি করে এনে সরকারের ঘর নির্মাণ করে দিতে পারবোনা। প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প বাস্তবায়ন জোর করে আমাদের উপর চাঁপিয়ে দিয়েছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.