বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করলে ব্যবস্থা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, আমদানি সংকট, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণ দেখিয়ে গত বছর অত্যাবশ্যকীয় ওষুধসহ বেশ কয়েক জেনেরিকের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। ওষুধভেদে ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়। ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে তীব্র হারে অসন্তোষ ও দুর্ভোগ বেড়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে। বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল একটি সভা করেছে অধিদপ্তর। সেই বৈঠকে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই), পুলিশের বিশেষ শাখাসহ (এসবি) সরকার এবং ওষুধ শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ওষুধের দামের বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি জানান, দামের বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। ১১৭টি ওষুধের দাম অধিদপ্তর থেকে নির্ধারণ করা হয়। বাকি দামও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। তবে দামের ওপর নতুন করে লিখে, স্টিকার বা ঘষামাজা করা যাবে না। গত বছর যেসব ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওষুধের উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত খরচ আমরা বিশ্লেষণ করেছি। এক্ষেত্রে উৎপাদন ও যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে আমরা ১০ থেকে ১১ শতাংশ লাভ দিয়ে দাম অনুমোদন করেছি। কোথাও ফার্মেসি যদি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি বিক্রি করে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আর ২ লাখ ২ হাজার ফার্মেসি রয়েছে দেশে। স্বল্পসংখ্যক লোকবল দিয়ে পরিপূর্ণভাবে নিয়মিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। এ বিষয়ে আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছি। দেশে শুরু থেকেই ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তাদের ওষুধ লিখতে অনুরোধ করে। এ চর্চা থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে আসা কঠিন। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএমএ) অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সভায় উপস্থিত ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—উৎপাদন খরচ সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের দামে কাঁচামাল পাওয়া যায় না। আগের চেয়ে মুনাফ কমেছে। এ অবস্থায় তাদের জন্য বিপণন কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কারণে দাম বেশি বলে এক ধরনের প্রচারণা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা দ্রুত সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আইয়ুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বেশি রাখার সুযোগ নেই। দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা ডিভাইস ও কিছু ওষুধের দাম ভারত ও বাংলাদেশে ভিন্ন। এ দাম একই রাখা যায় কিনা সে বিষয়ে কথা হয়েছে।

তবে ক্যাব জানিয়েছে, দাম কমাতে হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বৈঠকে হয়নি। প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়া হোক। ভোক্তার ওপর দাম বাড়ানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দাম কমানোর জন্য নির্দেশনা ‌এলেও ঔষধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তি খরচ (আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার) বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে এ খরচ ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ ৬৯ শতাংশের মধ্যে শতকরা হিসাবে ৬৭ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক মেডিকেল পণ্য। আউট অব পকেট এক্সপেনডিচারের বাকি ৩৩ শতাংশ খরচ হয় রোগী ভর্তি, রোগ নিরীক্ষা ও অন্যান্য সেবার জন্য।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.