স্মার্ট দেশ গড়তে তরুণদের মতামত নিলেন শেখ হাসিনা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক :স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দেশের তরুণ প্রজন্মের মতামত নিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৭ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করবে দলটি। ইশতেহার ঘোষণার আগে তরুণদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে দ্বিতীয়বারের মতো গতকাল শুক্রবার তাঁদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) আয়োজনে ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ২০১৮ সালের লেটস টক অনুষ্ঠানে তরুণদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিনির্ধারণী বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং তরুণদের কথাও শোনেন। ২০০৮ সালে তরুণদের জন্য ‘দিনবদলের সনদ’ ইশতেহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বরাবরই তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আর এ কারণেই তরুণদের সঙ্গে আরো একবার মুখোমুখি আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ২৫০ জনের বেশি তরুণ-তরুণীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শেখ হাসিনা। দেশ গঠনে এগিয়ে আসা তরুণ, চেঞ্জমেকার, ইনফ্লুয়েন্সার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ট্রান্সজেন্ডারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এবারের লেটস টক অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণ বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বিশেষ পর্বে তরুণরা তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও মতামত জানান সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবন ও ভাবনা নিয়েও বেশ কিছু নতুন তথ্য মিলবে এবারের লেটস টক অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানটি আগামী ২৮ ডিসেম্বর সম্প্রচার করা হবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুষ্ঠানের সময়সূচি পরে জানা যাবে সিআরআই ও ইয়াং বাংলার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে।
এ বিষয়ে আয়োজক সিআরআই জানায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে সব কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতা আমাদের সবার সামনে।
নিম্ন আয়ের দেশ থেকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি। আর এই সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের তরুণসমাজ। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের কাছ থেকে তাঁদের কথা জানতে চান। তরুণদের নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা বলতে চান। এরই অংশ হিসেবে আমরা আরো একবার আয়োজন করেছি ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’।
বাংলাদেশের সর্বশেষ জনশুমারির পরিসংখ্যান বলছে, তারুণ্যের জয়গান চলছে দেশজুড়ে। মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ এখন তরুণ, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে; মোট সংখ্যায় চার কোটি ৭৪ লাখের বেশি। জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুসারে তাঁরা দেশে বর্তমানে কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা প্রায় ৬২ শতাংশ। আর এই জনমিতিকে কাজে লাগাতে তরুণদের মতকে প্রাধান্য দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ। মূলত এ কারণেই তরুণদের সঙ্গে দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আলোচনা, তাঁদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সরাসরি জানা এবং দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদকে নিয়ে এর আগে বেশ কয়েকবার ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠানের।
প্রধানমন্ত্রীকে তরুণদের প্রশ্ন ও উত্তর
অনুষ্ঠানের প্রশ্ন-উত্তর পর্বে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিত্বকারী মনীষা মীম নিপুণ জানতে চান, ‘কিভাবে আমরা আমাদের সমাজকে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের প্রয়োজনগুলোর প্রতি আরো সহানুভূতিশীল করতে পারি?’ এ সময় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের এক অ্যাক্টিভিস্টের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান বাতিল করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনদের ওপর চলমান গণহত্যায় ইসরাইলিদের সমর্থন দিচ্ছে। এটি তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কি না, তা জানতে চান দেশ গঠনে তরুণদের সংগঠন নিয়ে কাজ করে যাওয়া শাহরিয়ার বাবলা।
ভালো কাজের হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং তরুণ সংগঠক আরিফুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, সরকারি প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দিনে একটি ভালো কাজের বিষয়ে উৎসাহ প্রদান বা বাধ্যতামূলক করা সম্ভব কি না? এর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, একটি ভালো কাজ করতে উৎসাহিত বা বাধ্য হলে তা আরো অনেক খারাপ কাজ থেকে এমনিতেই মানুষকে বিরত রাখে।
বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নূর নাহিয়ান জানতে চান, শারীরিকভাবে বিশেষ সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এই ধরনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনা কী?
অবশ্য শুধু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রশ্ন নয়, তরুণরা তাঁদের আগ্রহ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্তিগত বেশ কিছু প্রশ্নও করেন। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে কনটেন্ট তৈরি করা মারিয়ার কাছে বেশ আকর্ষণীয় গ্রামের জীবনযাপন। প্রধানমন্ত্রী গ্রামে গিয়ে থাকতে চান কি না এবং গ্রামীণ জীবনযাপন তাঁর কাছে কেমন লাগে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন তিনি।
নারীর নিরাপত্তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন রয়েছে, কিন্তু এখন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে এক নারী শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় নারীর নিরাপত্তায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও আইনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী অরিত্রি রায় প্রিয়তা জানতে চান, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নারীর নিরাপত্তাবিষয়ক একটি সুস্পষ্ট আইনের বিষয়ে উল্লেখ ছিল, সেটি বাস্তবায়ন কবে হবে? উত্তরে নারীর নিরাপত্তার জন্য পারিবারিক সুরক্ষা আইনের অধীনে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নারীরা অনেক সময় পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে খোলামেলাভাবে তাঁদের সমস্যার কথা বলতে চান না। এ জন্য বর্তমানে প্রতিটি থানায় নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। সেই সঙ্গে রয়েছে লিগ্যাল এইড কমিটি। কিন্তু এতটুকু যথেষ্ট নয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সেই সঙ্গে বদলাতে হবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমাদের মানসিকতা।’
অন্য এক প্রশ্নে ব্লগে কর্মরত নারী এ আর তাহসীন জাহান বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আশাতীতভাবে বাড়লেও নারীরা গর্ভধারণের পর অনেক সময়ই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন, যার মূল কারণ ভালো এবং পর্যাপ্ত ডে কেয়ারের অভাব। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না? এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ডে কেয়ার সেন্টার নির্মাণের বিষয়টি জানান। সেই সঙ্গে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার সেন্টার নির্মাণের বিষয়ে বর্তমান সরকারের উৎসাহ প্রদানের বিষয়ে কথা বলেন। নারীদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের বিষয়ে জানান।