কাপ্তাইয়ে ভিন্ন আবহে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন
মাহফুজ আলম, কাপ্তাই থেকে : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্যকে ধারন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী দিন ব্যাপী মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন – পরিষদ এবং কাপ্তাই উপজেলা আ’লীগ.অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গত শুক্রবার ও শনিবার ২৭ মার্চ দুই দিন দিবসটি উপলক্ষ্যে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের দেয়া কর্মসূচি উদযাপনে সকল সরকারি আদা- সরকারি স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা বিধি মেনে যথাযোগ্য মর্যাদায় পতাকা উত্তোলন.৩১ বার তোপধ্বনি ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিশু কিশোরদের সমন্বয়ে কুচকাওয়াজ. বীব মুক্তি যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সংবর্ধনা. আলোচনা সভা. কাপ্তাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ.বিকালে শহীদ মিনারে মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান.এবং রাতে মুক্তি যুদ্ধ. বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে নির্মিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন দেশে নারী-পুরুষের বৈষম্য দুর করতে সবার আগে প্রয়োজন পুরুষের চিন্তা ধারার পরিবর্তনের প্রয়োজন।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার,আল-বদরদের সঙ্গে মিলে বিশ্বের সবেচেয়ে বর্বোরোচিত ও বৃহত্তম গণহত্যা চালিয়েছে এই ভূ-খন্ডে। কিন্তু প্রায় পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে-পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার নিরীহ মানুষ। ওই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকে ২৫ মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশ। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেয়ার জন্য একটি বিল পাস করা হয়। এর আগে বেসরকারি উদ্যোগে ২০০১ সালে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবার তোলা হলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে তা এগোয়নি। অন্যদিকে ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা দিলে সে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের।
তবে ২০০১ সালে ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে প্রথম তুলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসান। ২০০৪ সালে ২৫ মার্চকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আবেদন জানান তিনি। জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছিল, স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে জাতিসংঘে তা তুলে ধরতে হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিক্রমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস করতে হবে। ২০০৯ সালে তিনি সরকারের কাছে তা তুলে ধরলেও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
একই দাবিতে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কো এবং গণহত্যার ভিকটিম বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে, আইন প্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিজস্ব প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ওই চিঠির ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের মার্চে আর্মেনিয়া থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি কীভাবে পালন করা হয় এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তখন জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়, বাংলাদেশে এখনো দিবসটি ঘোষণা হয়নি। তবে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। পরে আর্মেনিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ যেদিন ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করে সেদিন বাংলাদেশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু কোনো ভেটো দেয়নি, একবারও বলেনি, গণহত্যা দিবস হওয়া উচিত ২৫ মার্চ।
কারণ বিশ্বের কোথাও এক দিনে এত বড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়নি। অথচ তখন বাংলাদেশ নীরব ছিল। জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন এন্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইডে গণহত্যার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের একটি থাকলেই গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটি বৈশিষ্ট্যই ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞে রয়েছে। তাই এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাবিষয়ক দিবস থাকায় শুধু ২৫ মার্চের স্বীকৃতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানিবাহিনীর পুরো নয় মাসের অত্যাচারের স্বীকৃতি আনা সম্ভব।
এ ব্যাপারে শাহরিয়ার কবির বলেন, ২৫ মার্চের আন্তর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ও জাতিসংঘের বিভিন্ন দলিলপত্রেও বলা হয়েছে স্মরণকালের ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংয়ের আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান বলেন, সরকারের উচিত হবে ২৫ মার্চ সামনে রেখে ৯ মাসের ‘গণহত্যার স্বীকৃতি’ আদায় করে নেয়া। সেই সঙ্গে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক ‘গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করা। একাধিক বিদেশি গবেষকও একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ নামে একটি কোর্স চালু রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও বছরব্যাপী গণহত্যাবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সংক্ষিপ্ত কোর্স ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। ইতিহাসের এই ভারসাম্যহীনতা দূর করার স্বার্থেই গণহত্যার বিষয়টির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। এজন্য আমরাই দায়ী। তবে ৫০ বছর পরও তা সম্ভব। বক্তারা উপমা দিয়ে আরো বলেন আর্মেনিয়ার গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য একশ বছর লেগেছে।