ত্রাণ দিচ্ছে শুনেছি কিন্তু আমরা পাইনি
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : বরকলের ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের গ্রামবাসীরা জানান, সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিচ্ছে শুনেছি কিন্তু আমরা কিছুই পায়নি। আমাদের এলাকায় সাড়া শব্দ কোন খোঁজখবর নেই মনে হয় পাবো না। গতবছর কয়েকশত পরিবার পেয়েছি কিন্তু নাম মাত্র ৫ কেজি চাল দিয়েছে বাড়িতে গিয়ে মাপে দেখি শুধুমাত্র ৩ কেজি চাল। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার নগদ অর্থ ২৫০০ হাজার টাকা যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটা গতবছর যারা পেয়েছে এ বছরও তারা পেয়েছে আবার অনেকে পায়নি শুনেছি। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে চালের পাশাপাশি অন্যকিছু বরাদ্দ থাকলেও বাকীগুলো আমরা স্বপ্ন ও দেখি না। আমাদের একদিকে পানির তীব্র সংকট অন্যদিকে আর্থিক সংকট কোন কাজকর্ম নাই। খাবো কি যদি কিছু হলে পেতাম। কর্মহীন অবস্থায় মানবতের জীবন-যাপন করছি। সরকারী সহায়তা পেলে আমরা হয়তো কয়েকদিন উপকৃত হবো।
মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের ফলে সংকটে পড়েছে দিন আনে দিনে খাওয়া মানুষগুলো। সে কথা মাথায় রেখে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা তথাকথিত দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলোর পাশে দাড়িয়ে সাহায্য করে চলেছেন। তাদের বিভিন্ন রকম ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে মানবিক রুপ ফুটে উঠেছে। কিন্তু রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে তাদের সেই সাহায্যে হাত পৌঁছায়নি। পিত্তিছড়া, রকবিয়ছড়া, জুংছড়া, লেত্তিছড়ি, বামে কুকিছড়া, বাজেইছড়া, তারেঙঘাট, গুইছড়ি, নন্দছড়া ৯ নং ওয়ার্ডের আরো বেশ কয়েকটি দুর্গম প্রত্যেন্ত গ্রামের কয়েকশত পরিবার সরকারের আর্থিক অনুদান ও ত্রাণ না পাওয়ায় কোনমতে মানবতের জীবন-যাপন করছেন। ৯ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রামে বেশিরভাগ পরিবারই গরিব তবে লকডাউনের ফলে কর্মহীন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে তারা জানান। ফলে তাদের অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভূষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ৯ নং ওয়ার্ডে খেয়া ঘাটে কয়েক পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি। এছাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের দূরের অন্য গ্রামগুলোতে আমার পক্ষে তো যাওয়া সম্ভব না। আমি ওখানে দেওয়ার জন্য সেক্রেটারি রুপায়ন খীসাকে পাঠিয়েছি। আমাদের তো সবার পক্ষে সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব না। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে ৫ শত পরিবারের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা। তো আমরা ৫ শত পরিবারের মাঝে রমজান উপলক্ষে যারা মুসলমান তাদেরকে বিতরণ করেছি আর যারা পায়নি তাদেরকেও দিয়েছি। সর্বোচ্চ মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা বিতরণ করেছি এবং উপজেলা অফিসে তালিকাও জমা দিয়েছি। কারোর সন্দেহ হলে যাচাই-বাচাই করতে পারেন। “‘গতবছর ২৫০০ টাকা যারা পেয়েছে এ বছরও তারা পেয়েছে সত্যতা স্বীকার করে”‘ তিনি বলেন, এটা আমাদের কিছু করার নাই এটা সরকারের প্রণোদনা। আমরা ২৬০০ নাম দিয়েছি মোট ২০০ জন ও পায়নি মনে হয় তবে সর্বোচ্চ ২৫০ জন পেতে পারে এর উর্ধ্বে পায় নাই। অথচ ২৪০০ জন বঞ্চিত। আমরা নিজেরাই অফিসে কথা বলেছি, দয়া করে যদি সবাই পায় উপকৃত হবে। আর যারা পায় তাদের তথ্য আমাদের কাছে আসে না।
“‘অনেকগুলো সংগঠন থেকে ত্রাণ বিতরণ করা সত্বেও পাহাড়ি এলাকায় কোন ত্রাণ পায়নি কেন জানতে চাইলে”‘ তিনি করে বলেন, ওরা তো ৪/৫ জন মিলে ১০ জনের ত্রাণ বিতরণের ছবি তুলে নাম প্রকাশ করে প্রচার করে দেয়। সেগুলো যদি সাধারণ জনগণকে দেয় তাহলে গ্রাম প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন আছে তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে কয়জনকে ত্রাণ দিয়েছে।
এ বিষয়ে বরকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল রানা বলেন, মানবিক সহায়তা প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ অনুযায়ী ৫০০ পরিবারকে দেওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবার বেশি এজন্য হয়তো বাদ পড়তে পারে।
‘” প্রত্যেক ইউনিয়নে ৯ টি ওয়ার্ডে ৫০০ পরিবারের মাঝে আড়াই লক্ষ টাকা নগদ অর্থসহ ত্রাণ বিতরণের পরও যদি কেউ অসহায় পরিবার বাদ পড়ে থাকে তাদেরকে আরো বিকল্প পদ্ধতিতে ত্রাণের ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে “‘ তিনি বলেন, যদি কেউ অতিরিক্ত সংকটে থাকে তাহলে আমাকে অথবা চেয়ারম্যানকে বললে হবে। আমরা তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করবো। তবে আমার জানা মতে ত্রাণ বিতরণে চাল বিতরণ করিনি জেলেদের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফ চাল ২/৩ দিনের মধ্যে হয়তো বিতরণ করবো। এছাড়াও মাননীয় প্রধামন্ত্রীর প্রণোদনা ২৫০০ টাকা নাম থাকা সত্বেও যারা পায়নি তারা উপজেলা অফিসে আসলে হবে সমস্যাটা কোথায় আমি চেক করে দেখবো।
তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউপি সদস্যের মাধ্যমে দিলে তারা ঠিক মতো ত্রাণ পায় না অনিয়ম হয়। তাছাড়া সমতল এলাকাগুলো বেশিরভাগ ত্রাণ পায় কিন্তু বঞ্চিত থাকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো। সুষ্ঠু তদন্ত তদারকি পরিদর্শন না থাকায় ঠিক মতো পায় না এবং উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ না করায় ত্রাণ থেকে বঞ্চিত বলে জানান তারা।