অসহায় মানুষের পাশে পাবনায় তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন

বহুমুখী সাহায্যের কর্মকান্ড নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে পাবনার সামাজিক সংগঠন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন।

0
পাবনা প্রতিনিধি : বহুমুখী সাহায্যের কর্মকান্ড নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে পাবনার সামাজিক সংগঠন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন। তার মধ্যে রয়েছে অসহায় অসুস্থ্য মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, দুস্থ নারীদের নিজ পাঁয়ে দাঁড়াতে ব্যবসার জন্য কাপড় প্রদান, সেলাই মেশিন ও ছাগল বিতরণ। এছাড়া মাছ চাষে সহযোগিতা, বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিউবওয়েল প্রদান এবং করোনা উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফন। আর এসব মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী ও বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের আর্থিক সহায়তায়।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব ও স্বেচ্ছাসেবী শিশির ইসলাম অসহায় মানুষদের জন্য দিনরাত ছুটে চলেছেন সমাজের অবহেলিত এবং সুবিধা বঞ্ছিত মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। তার তাদের কাজে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন অনেকেই। সম্প্রতি পাবনায় করোনা আক্রান্ত হয়ে বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী তিনজন মানুষের মরদেহ যখন কেউ দাফন কাফনে এগিয়ে আসছিল না, তখন সেই মরদেহ গোসল করানো ও দাফন সম্পন্ন করে আলোচনায় আসেন মাহবুব ও শিশির।
আলাপকালে জানা গেছে, মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে ২০১১ সালে তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশন চালু করেন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের দর্শন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আলহাজ্ব দেওয়ান আজিজুল ইসলাম। তিনি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী তহুরা বেগম মারা গেছেন। ছেলে দেওয়ান মাহবুব বর্তমানে সংগঠনটি পরিচালনা করছেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংগঠনটির উদ্যোগে অসহায় ও দুস্থ মানুষদের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করে আসছে। গত ৯ বছর ধরে এক লাখ ২৫ হাজার অসহায়, দরিদ্র মানুষকে বিনামুল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করছে সংগঠনটি। সম্প্রতি তারা চিন্তা করেন শুধু ওষুধ দিলে তো মানুষ সারাজীবন ওষুধ বিনামুল্যে নিয়ে যাবেন, টাকা দিয়ে কিনবেন না। তাই তাদের স্বাবলম্বী করতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টির উদ্যোগ শুরু হয় এবছর থেকে।
পাবনা সদর উপজেলার দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ মল্লিকের মেয়ে কামনা আক্তার রুনা জানান, বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও এখন পর্যন্ত তার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। অনেক চেষ্টা করে তালিকায় নাম তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। একমাত্র মেয়ে ও এক ভাইকে নিয়ে খুব অভাব অনটনের মধ্যে চলছি। প্রথমে এনজিও থেকে চাকুরী করেছি। পরে সেখান থেকে বাদ দিলে নিজে কিছু গজ কাপড় কিনে পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রি করে সংসার চালাই। কিন্তু আস্পান ঝড়ে আমার সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। দিশেহারা হয়ে পড়ি। তখন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের মাহবুব আমার কথা শুনে আবার নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য আমাকে ৫ হাজার টাকা কাপড় কিনে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে আমি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।একইভাবে পাবনা পৌর সদরের মাসুম বাজার খাঁ পাড়া মহল্লার মো: ভুলুর স্ত্রী আসুরা খাতুনকেও ব্যবসা করার জন্য ৫ হাজার টাকার কাপড় কিনে দেয়া হয়েছে।

শিবরামপুর মহল্লার আফজাল হোসেনের স্ত্রী লাকী খাতুন জানান, স্বামীর একার আয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই আমি যদি একটু পরিশ্রম করে যদি কিছুটা আয় হয় তাহলে সংসারটা আরেকটু ভালভাবে চলবি। তাই মাহবুব ভাইয়ের কাছে বলার পর গত রোযার মধ্যে তিনি একটি সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছেন। তা দিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি।

সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের মৃত এস কে আহম্মেদের ছেলে ফারুক আহম্মেদ জানান, তিনি ভ্যানে করে সবজি নিয়ে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি ভ্যানটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে মাহবুব ভাই একটি ভ্যান কিনে দিয়েছেন। সেটা দিয়ে এখন আমি আবার আয় রোজগার শুরু করছি।

এছাড়া শহরের জোড়বাংলা পাড়া এলাকার মহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন ও কালাচাঁদপাড়া মহল্লার কামাল হোসেনের স্ত্রী সুমী খাতুনকে এক জোড়া করে ছাগল দেয়া হয়েছে। যাতে তারা এর মাধ্যমে টানাটানির সংসারে একটু বাড়তি আয় করতে পারেন।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব জানান, আমার বন্ধু-বান্ধব, সমাজের বিত্তবান ও দয়ালু মানুষের আর্থিক সহায়তায় আমরা ইতিমধ্যে দুইজনকে দুই জোড়া ছাগল দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে দুইজন নারীকে কাপড় কিনে দিয়েছি। বিভিন্ন মসজিদ, গোরস্তান ও হাট-বাজারে ১০টি টিউবওয়েল স্থাপন করিয়ে দিয়েছি। সেলাই মেশিন দিয়েছি দুইজন নারীকে। একজন মানুষকে মাছ চাষের উদ্বুদ্ধ করতে তাদের বাড়ির পাশে পুকুর সংস্কার করে সেখানে পোনা মাছ দিয়েছি। মাছ চাষের খরচও আমরা দিব। দুইজনকে ভ্যান কিনে দিয়েছি। দুই হাজার পরিবারকে একটি করে গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া তিনজন ব্যক্তির মরদেহ দাফন করেছি আমরা। এর আগে করোনা মহামারীর শুরুতে ১৮শ’ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। একশ’ পরিবারকে সবজি, একশ’ পরিবারকে ডিম ও ৫শ’ কিশোরীর মাঝে সেনেটারী ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়েছে।

মাহবুব আরও জানান, আমরা আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি সেটি হলো, করোনা পরিস্থিতির কারণে আসন্ন ঈদুল আযহায় অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ কোরবানী দিতে পারবেন না। তারা কারো কাছে কোরবানীর মাংস চাইতেও পারবেনা। তাই আমরা সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছি সাত হাজার টাকার একভাগ অথবা ৫০ হাজার টাকা মুল্যে একটি গরু কোরবানী দেয়ার অর্থ আমাদের দিতে। আমরা তাদের নামে কোরবানী করে সেই মাংস মধ্যবিত্ত মানুষদের বাড়িতে গিয়ে গোপনীয়তার সাথে দিয়ে আসবো।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে দেওয়ান মাহবুব জানান, প্রথম অবস্থায় সদর উপজেলার এক হাজার মানুষকে আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবো। এটা সফলভাবে শেষ হলে পর্যায়ক্রমে জেলার বাকি আটটি উপজেলাতেই একইভাবে আরো আট হাজার মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এতে করে বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পাবে পাবনা জেলা। সেইসাথে পাল্টে যাবে জেলার অর্থনৈতিক চালচিত্র।

সংগঠনের জনসংযোগ পরিচালক ও স্বেচ্ছাসেবী শিশির ইসলাম বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে এক অন্যরকম মানসিক শান্তি অনুভব করি। একারণে ছুটে চলা। বর্তমানে আমরা কোনোরকমের সরকারি বেসরকারি সহায়তা পাইনা। যদি সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে এই বহুমুখী কার্যক্রমকে আরো ভালভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান জানান।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.