৩১মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে- তামাক ছেড়ে সুস্বাস্থ্য গঠনের আহ্বান জানালেন অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত
তৌহিদ উদ দৌলা রেজা : তামাক একটি নেশা সৃষ্টিকারী পণ্য। পৃথিবীর অর্ধেক শিশুই নিকোটিনপূর্ণ বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। সুস্থ পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য তামাককে বর্জন করতে হবে। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এট̂ রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) আয়োজিত “তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও যুবসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা এ দাবি জানান।
ওয়েবিনারে টিসিআরসির প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের মাননীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ডাঃ এস. কাদির পাটোয়ারি, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। এসময় অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মী ও প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ওয়েবিনারে অংশগ্রহন করেন।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ধূমপানের ফলে পৃথিবী ব্যাপী প্রতি বছর ৫.৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ এ মৃত্যু ১১ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। শুধুমাত্র একটা তামাক পাতায় ১৯টি ক্যান্সারের উপাদান থাকে। চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত মানব শরীরের এমন কোন অঙ্গ নেই যা ধূমপানের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়না। পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। পাবলিক প্লেসে একজনের ধূমপানের ফলে অন্যরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। কিশোর- তরুণদের ধূমপান আসক্তির দায় তাদের পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতার উপরও বর্তায়। তিনি তার উপস্থাপনায় তামাকের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্ষতি উল্লেখের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষতিও তুলে ধরেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তামাককে বর্জন করার ও তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এস কাদের পাটোয়ারি বলেন, তামাকের কোন ভালো দিক নেই। এরপরেও তামাকের ব্যাপারে কিছু ভুল ধারনা এবং পারিবারিক ও মানসিক নানা ধরনের হতাশার কারণে কিশোর তরুণেরা অল্প বয়সেই ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ধূমপান থেকেই আসলে সব রকম নেশার দিকে যাওয়া শুরু হয়। তিনি তরুণদেরকে তামাক থেকে দূরে থেকে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যবসার প্রসার এবং টিকিয়ে রাখার জন্য নানা কৌশলে বিজ্ঞাপন প্রচার করেই চলেছে যেনো সাধারণ মানুষ তামাকপণ্য গুলোকে তেমন একটা ক্ষতিকর বলে মনে না করে। আমাদেরকে তাদের এই ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। তামাক বা নেশার দিকে ধাবিত না হয়ে, তরুণ যুবকেরা যেন শারিরীক ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভাসে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে সে বিষয়ে তিনি সুপরামর্শ দেন।
সমাপনী বক্তব্যে ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী(এমপি) বলেন, তামাক কোম্পানি গুলো তরুণদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং মানুষরা বুঝে উঠতে পারছে না যে তারা টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছে। তামাক পণ্যের উপরে প্রচুর করারোপ করা প্রয়োজন যাতে তা তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ধূমপান করা কোন স্মার্টনেস এর বিষয় নয়- এটা তরূণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে। তামাক বিরোধী আন্দোলনকে সফল করতে গেলে তরুণদের অংশ জরুরী। তিনি আরও বলেন ধূমপায়ীরা সরকারি চাকরি পাবে না- এই মর্মে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে তরুণদের মাঝে ধূমপানের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।
টিসিআরসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় উক্ত ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের তামাক নিয়ে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। তরুণদের তামাক বর্জন করার আহবান জানিয়ে ও এবারের তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য “আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি” স্লোগানের মাধ্যমে ওয়েবিনারটি শেষ করা হয়।