বেড়া সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

বদলি চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ

0

 বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা বেড়া উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব সরকারের বিরুদ্ধে মাঠকর্মীদের যোগসাজশে (বয়স্ক,বিধবা, প্রতিবন্দী,স্বামীপরিত্যক্তা) ভাতা বাণিজ্য সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বিএনপি জামায়েত এর সহযোগিতায় ভাতা বিতরণ করা সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার এমন আচরণে তার বদলি চেয়ে উপজেলার কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরসহ সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকা আগারগাও বরাবর অভিযোগ করেছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১১১ টি উপজেলার মধ্যে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলাকে শতভাগ (বয়স্ক,বিধবা, প্রতিবন্দী,স্বামীপরিত্যক্তা) ভাতার আওতায় আনার ঘোষণা করেছেন সরকার। জানা যায় উপজেলায় মোট ২১ হাজার ৫০০ শত ৫৩ জন বিভিন্ন ভাতাভোগী রয়েছেন। লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোতালেব সরকার জামায়েত ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য। জামায়েত ইসলামের বেড়ার এমপি প্রার্থী ডাঃ আব্দুল বাসেদ খাঁনের সাথে নিয়মিত বৈঠক করেন।

তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাজের সাথে লিপ্ত থাকেন। এতে আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোপের সৃষ্টি হয়েছে। এম.আই.এস করতে গিয়ে ভাতাভোগিরা হয়রানির শিকার হয়। এম.আই.এস করতে টাকা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। নিতিমালা অনুযায়ী ভাতাভোগী নির্বাচন করার কথা কমিটি/ ইউনিয়ন পরিষদের। তারা তালিকা তৈরী করে উপজেলা কমিটি কর্তৃক অনুমোদন দেয়ার পর তা বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অফিস। কিন্তু কোন চেয়ারম্যান মেম্বারদের না জানিয়ে বিএনপি জামায়াতের লোকজনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতার কার্ড নির্ধারণ ও বিতরণ করেন। অভিযোগে আরও জানা যায় ইতিপুর্বে তার নামে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগও করা হয়। যার স্বারক নং- ৪১.০১.০০০০.০০৪.১৯.০০৫.১২.২৪৩ তারিখ ৩০/০৬/২০১৯ খ্রিঃ। এতে তাহার নামে একটি বদলীর আদেশ হয়। এই বদলীর আদেশ অগ্রায্য করে সে অদ্যবদি স্ব-পদে বেড়া উপজেলাতেই বহাল রয়েছে।

আরও একটি অফিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রুপপুর ইউনিয়নে (বয়স্ক,বিধবা,প্রতিবন্দী,স্বামীপরিত্যক্তা) ভাতা করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে মোবাইল নম্বর, ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড জমা দেয়া হয়। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব সরকার উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অবগত না করেই (বয়স্ক,বিধবা, প্রতিবন্দী,স্বামীপরিত্যক্তা) ভাতার বই মাঠকর্মী এনামুল হক এর যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে বিতররণ করেন। পুরাতন ভাতাভোগীদের বই এম.আই.এস করে মাঠকর্মী গোপনে নিজেদের আত্মীয় স্বজনের মোবাইল নাম্বার বসিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে। পুরাতন এম.আই.এস কৃত বই উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের অনলাইন তালিকা হতে বাতিল করা হয়েছে (বই নাম্বার ৪৩৩৮ এস আই এস নাম্বার ০১৭৬০-০৭০১৬০)।

মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিকবার সমাজসেবা অফিসারকে অবগত করার পরেও কোন পরিবর্তন হয়নি। মাঠকর্মী টাকার বিনিময়ে যাদের স্বামী জীবিত আছেন তাদেরকে বিধবা ভাতা করেন যা ওয়ার্ড মেম্বর বুঝতে পারলে রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জলকে জানায়। চেয়ারম্যান উক্ত বইগুলো জব্দ করে তা সঠিক বিধবাদের নামে প্রতিস্থাপন করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে অবগত করেন। কিন্তু সে বইগুলো এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। উল্লেখিত তাহার কার্যকলাপে সরকারি কাজ পরিচালনায় সমস্যাসহ অন্যদিকে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে। রুপপুর ইউনিয়নে দায়ীত্বে থাকা মাঠকর্মী এনামুল হক এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন যে কেই ভাতা কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারে। ভুল হতেই পারে। এ রকম কয়েকটি কার্ড পাওয়া গেছে যা ইতি মধ্যে জব্দ করে আমাদের অফিসার এর নিকট রাখা আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সুস্থ্য মানুষ প্রতিবন্ধি ভাতা পাচ্ছে। প্রকৃত প্রতিবন্ধিরা ভাতা পেতে নানা রকম ভোগন্তিতে পরছেন। নামে বেনামে অন্যের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. সবুর আলী (বয়স্ক,বিধবা, প্রতিবন্দী,স্বামীপরিত্যক্তা) ভাতার বিষয়ে সঠিটকভাবে যাচাই বাছাই করছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জল বলেন, আগে যখন ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভাতা আসত তখন কোন অসুবিধা হত না। বর্তমানে যখন বিকাশ বা নগদ এজেন্ট এর মাধ্যমে মোবাইল নাম্বারে ভাতার টাকাগুলো পাঠানো হচ্ছে তখন থেকেই ভাতা গ্রহিতারা নানান অসুবিধায় পরেছেন। এমন লোকও আছে যাহারা অনেক আগে থেকেই বইয়ের মাধ্যমে ভাতার টাকা তুলত তারা এখন টাকা পাচ্ছে না।

সমাজসেবা অফিসার এবং মাঠ কর্মীরা প্রকৃত ভাতাভোগীদের নাম বাদ দিয়ে আমাদের অবগত না করেই তাদের ইচ্ছে মত বিভিন্ন ভাতার আওতাভুগত করছেন। এ বিষয়ে আমি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি করছি। চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, সমাজসেবা অফিসার চেয়ারম্যানদের সাথে অশোভন আচরন করেন। শুধু আমার সাথে না প্রতিটি চেয়ারম্যানদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলে। উপজেলার কাউকেই তিনি তোয়াক্তা করে না। জামায়েত ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য ডাঃ আব্দুল বাসেদ খাঁনের সাথে নিয়মিত বৈঠক হয় বলে তিনি জানান। তাহার নানা অপকর্মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি তাতেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। বেড়া সমাজসেবা অফিসের কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, মোতালেব সরকার বেড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রায় ৯ বছর ধরে কর্মরত। তার নিজ গ্রামের উপজেলায় অনেকদিন চাকুরির সুবাদে সে প্রভাব খাটিয়ে চলেন। তার ব্যবহারে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে অনেক কর্মকর্তারাই অতিষ্ঠ হয়ে পরেছন।

তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না সরকারি কোন প্রোগ্রামেই তিনি উপস্থিত থাকেন না। এবং ১৫ আগষ্ঠ জাতীয় শোক দিবসে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তার বিএনপি, জামায়েত ইসলামের কর্মীদের সাথে তার উঠাবসা বলে তারা জানান। সবাই উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্তের মোঃ আরিফুর মোঃ আরিফুর রহমান দাবি করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু জানান, সমাজসেবা অফিসের মাঠকর্মীসহ অনেকের অনেক অনিয়মের কথা আমি শুনেছি। তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা নেয়া হবে। বেড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোতালেব সরকার এর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে যে সকল মাঠকর্মী অনিয়ম করেছিল সেটা আমি তদন্ত করে বেড় করে আমাদের ইউএনও সাহেব ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবগত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অন্য অভিযোগ মিথ্যা ও ভিক্তিহী চেয়াম্যানদের নিজ স্বার্থে তারা এটা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. সবুর আলী জানান, এ বিষয়ে আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.