বাঘারপাড়ায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ধান-চালও সংগ্রহ হয়নি
যশোর প্রতিনিধি : যশোরের বাঘারপাড়ায় সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা একদমই পিছিয়ে রয়েছে। সংগ্রহ অভিযানের প্রায় সাড়ে ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হয়নি।
বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষক। তবে এবার ধানের উৎপাদন অনেক ভালো ছিল বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা বলছেন, সরকার যে দামে ধান কিনছেন সেটা মূলত মোটা ধানের দাম। যা এই অঞ্চলে নামমাত্র উৎপাদন হয়েছে।
এবার ধান কাটার মুহুর্তে পাকা ধান বাড়ি তুলে পরিষ্কার করা মাত্রই বাজারে বিক্রি করে ধারদেনা শোধ করেছেন। শুরু থেকেই তাঁরা দাম পেয়েছেন চড়া। অন্যদিকে, বাড়তি দামে ধান কিনে চালের পড়তা বেশি পড়ায় চুক্তিবদ্ধ মিলাররা গুদামে চাল সংগ্রহ করতে পারেননি। লাইসেন্স বাঁচাতে লোকসানের মুখেও মিলারদের কেউ কেউ চাল সরবারহ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
খাজুরা খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, বোরো মৌসুমে ২৭ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ১শ’ ৪৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। একই সময়ে চুক্তিবদ্ধ উপজেলার ৪৩ জন মিলারের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৫শ’ ৪২ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী গত ২৮ এপ্রিল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়, যা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকবে। অভিযান শুরুর পর গতকাল বুধবার পর্যন্ত কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে ১শ’ ২৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে একই সময়ে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮শ’ ৩৬ মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরে উপজেলায় ১৫ হাজার ৯শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯শ’ ৭২ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। এত ভালো উৎপাদনের পরও মাত্র ২ হাজার ১শ’ ৪৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
পৌর এলাকার দোহাকুলা গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ‘প্রথম অবস্থাতেই স্থানীয় বাজারে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছি। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করিনি।
বন্দবিলা ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দিতি গিলি ধান কড়কড়ে করে শুকোনো লাগে। আবার ধান ফিরেয় দেয়। হাটে ধান বেচতি কোন ঝামেলা নেই। এখনো হাটে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফাতেমা সুলতানা জানান, ‘লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো পর্যন্ত চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে খোলা বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহী নন। চুক্তিবদ্ধ ৪৩ মিলারের অধিকাংশই অটো’র মিলার। এর মধ্যে হাসকিং মিলাররা চাল দিলেও অটো’র মিলাররা দেননি। চাল সরবারহে ব্যর্থ মিলারদের বিরুদ্ধে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’