শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাবার অনুপ্রেরনায় আইনজীবি হলেন হাফিজুল ইসলাম
এস এম রিমন হোসেন, ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি : এ যেন দীর্ঘ পথের যাত্রা। অবশেষে ক্লান্ত পথিক পৌঁছাল তার গন্তব্যে। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাবার অনুপ্রেরনায় আইনজীবি হয়েছেন হাফিজুল ইসলাম বাদল। কিন্তু যার অনুপ্রেরনায় আজ শত বাধা পেরিয়ে হাফিজুল আজ আইনজীবি হলেন সেই খুশির খবরটা শুনে যেতে পারলেন না তার বাবা। কারন গত ৮ মে ইহকাল ত্যাগ করে পরকালে চলে গেছেন হাফিজুলের বাবা।
হাফিজুল ১৯৮৬ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম মৃত খলিলুর হক দেওয়ান। তার পিতা একজন দিনদার পরহেজগার মানুষ ছিলেন। পিতামাতার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হাফিজুল। হাফিজুলের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সালে মানিকনগর পূর্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। প্রাথমিক শেষে মানিকনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সলিমপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। এরপর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএসএস রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পাশ করেন। তারপর পাবনা আমিনউদ্দীন আইন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এলএলবি পাশ করেন। বারকাউন্সিলের সেশন জটিলতার কারনে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক এমসিকিউ, লিখিত ও ২০২১ সালে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হন।
এক সাক্ষাতকারে হাফিজুল ইসলাম তার অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি যেন আইনজীবি হই। সেই স্বপ্ন নিয়েই আইন বিভাগে লেখাপড়াকরি। বারকাউন্সিলের সেশন জটিলতার কারনে পরীক্ষা দিতে পারি নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সফলতা লাভ করি। অনেক প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে যখন সফলতা লাভ করলাম। কিন্তু আজকের এই খুশির দিনটা আমার বাবা দেখে যেতে পারলেন না।
আমার আজকের এই সফলতার সবটুকু আমি আমার বাবাকে উৎসর্গ করছি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন (আমিন)।
প্রসঙ্গত : হাফিজুল ইসলাম বাদল যুদ্ধপরবর্তী মানিকনগর গ্রামের সর্বপ্রথম আইনজীবি হলেন। উল্লেখ্য, বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৫ হাজার ৯৭২ জন। এখন থেকে তারা সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করতে পারবেন। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বার কাউন্সিলের সচিব রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে তারা মৌখিক, লিখিত এবং এমসিকিউ- এই তিন ধাপে পরীক্ষা দিয়েছেন।
গত ৩১ আগস্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়াম ও সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ধাপে ধাপে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রায় ৬ হাজারের মতো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর আগে বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্তির জন্য লিখিত পরীক্ষায় ১৩ হাজারের মতো শিক্ষানবিশ আইনজীবী অংশ নেন। এর আগে ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে এমসিকিউতে উত্তীর্ণ হন মাত্র আট হাজার ৭৬৪ জন। এছাড়া ২০১৭ সালে ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বাদ পড়া তিন হাজার ৫৯০ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২ হাজার ৮৭৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।