লক্করঝক্কর ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারে  ভোগান্তি চরমে কাজিরহাট-আরিচা নৌ রুটে

0

পাবনা প্রতিনিধি : লক্করঝক্কর ফেরি দিয়ে মন্থরগতিতে যানবাহন পারাপারে চরম ভোগান্তিতে কাজিরহাট-আরিচা নৌ রুটের শতশত যানবাহন। দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। আটকা পড়েছে প্রায় ৫ শতাধিক পন্যবাহী ট্রাক। এদিকে ঘাট কর্তৃপক্ষ জরুরী পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মিদের বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

কাজিরহাট ফেরিঘাটের বিআইডব্লিউটিএর ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান সার্বিক সমস্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত শুক্রবার দুপুর থেকে বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল নামে ফেরি দুটি এই ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘাটে যানবাহন পারাপারে শাহ জালাল, শাহ মখদুম, কপোতী দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছিল। গেল শনিবার সন্ধ্যায় শাহ মখদুম ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুুটি দেখা দিলে সেটি মেরামত করে ঘাট সচল রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে আরও একটি ফেরিতে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও চাহিদার তুলনায় ফেরি দেওয়া হয়েছে বেশি। আমাদের এখানে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও পুরাতন লক্করঝক্কর ফেরি দেয়া হয়। ব্যবস্থাপক মাহবুব জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসার পথে নলকা থেকে সেতুর পশ্চিম পাড় পর্যন্ত কয়েক দিন ধরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ট্রাকসহ অনেক যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু এড়িয়ে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ফেরিতে ঢাকায় যাওয়া-আসা করছে। এতে নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

সরেজমিনে কাজিরহাট ফেরিঘাটে দেখা গেছে, ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যানবাহন শ্রমিকরা। দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ট্রাক টার্মিনাল, আবাসিক হোটেল, পাবলিক টয়লেট, যাত্রী ছাউনি ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রাকচালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সব মিলিয়ে ঘাট হয়েছে ট্রাক শ্রমিকদের গলার কাটা।

যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা অভিযোগ করেন, এই নৌপথে কমপক্ষে ৭ ফেরির প্রয়োজন। ২২ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত চালু ছিল চারটি ফেরি। এগুলো হলো রো রো ফেরি বেগম রোকেয়া ও বেগম সুফিয়া কামাল এবং ডাম্প ফেরি কপোতী ও কলমিলতা। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর বেগম রোকেয়া ও কপোতীর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে এই নৌপথে সুফিয়া কামাল ও কলমিলতা যানবাহন যাত্রী পারাপার করছিল। কিন্তু ৪ অক্টোবর এই দুটির পরিবর্তে হজরত শাহজালাল ও শাহমখদুম নামে দুটি ফেরিকে এই নৌপথে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে যুক্ত করা হয়।

বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও বিআইডব্লিউটিসির নাম প্রকাশে একাধিক কর্মী জানান, শাহজালাল ও শাহমখদুম একদিকে যেমন ধীরগতির, তেমনি পুরোনো ও ত্রুটিযুক্ত। তাই এই পরিবর্তনে সংকট আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার সকালে কপোতী মেরামত করে কাজীরহাটে আনা হয়। সেদিনই সেটি বিকল হয়ে পড়ে।

কাজিরহাট ঘাটে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ থেকে আসা নয়ন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি। সিরিয়াল পাওয়া তো দূরের কথা। আরও চার-পাঁচদিন ঘাটে অবস্থান করা লাগতে পারে। একটি ফেরিতে ৩-৪টি করে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। লালমনিরহাট থেকে আগত পান্না ইসলাম বলেন, এই রুট দিয়ে আসলেই যানজটের দেখা মেলে। দিনের পর দিন এখানে অবস্থান করে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। আমাদের তো সংসার আছে। একটি ট্রিপ নিয়ে যদি ১০ দিন সময় লাগে বাড়িতে ফিরতে তাহলে কি অবস্থা তৈরি হয়েছে আমাদের জন্য এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুইদিন যানজটে থাকার পর কর্তৃপক্ষ বলছে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঘুড়ে যাওয়ার কথা।

নঁওগা থেকে এসেছেন আশরাফ আলী নামে এক চালক। তিনি বলেন, দিনের পর দিন এখানে অবস্থান করলেও ঠিকমতো ফেরির দেখা পাইনি। এখানে আবাসিক হোটেল, বাথরুম, টার্মিনাল নেই। নিরাপত্তার জন্য একটি লাইটও লাগানো নেই। সব সময় চুরি-ডাকাতির ভয় থাকে। ডাকাতির ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে এখানেই অবস্থান করতে হয়।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাত্র দুটি ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। যেভাবে কাজীরহাট ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ২৪ থেকে ২৬টি ট্রিপের প্রয়োজন। অথচ দুটি ফেরি দিয়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘাটে কোনো ট্রাক এলে সেটিকে ফেরিতে ওঠার জন্য কমপক্ষে দুইদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’

এদিকে গত সোমবার সমস্যা পরিদর্শনে যান সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকট শামসুল হক টুকু ও পাবনা -২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির। তারা গণমাধ্যমে বলেন,  এই সমস্যা নিরসন ও ফেরি সংখ্যা বাড়িয়ে ভালো ফেরি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন জনগুরুত্বপূর্ণ এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলকারী রুটে লক্করঝক্কর ফেরি দেয়া মোটেও ঠিক হয়নি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.