বাউবি’র যুগ্ম পরিচালক মনছুর ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা

0

পাবনা প্রতিনিধি : আদালতের ভুয়া রায় তৈরী করে জমি দখলের অপচেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত প্রতারণা মামলায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মনছুর আলম ও তার ভাই মাহমুদ এ হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছেন আদালত।

রোববার (১২ জুন) বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৫ এর বিচারক আশরাফুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট আদেশ জারী করেন। আসামীদের গ্রেফতার করে আগামী ১৬ আগস্ট আদালতে হাজির করতে সাঁথিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন লিটন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্ত মনছুর আলম ও মাহমুদ এ হাসান পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গোপালপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিন শেখের ছেলে। মামলার বাদি সাখাওয়াত হোসেন একই গ্রামের মৃত আছাব আলীর ছেলে। আদালতের ভুয়া রায় তৈরী করে জমি দখলের অপচেষ্টার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৫ এ গত ১২ এপ্রিল প্রতারণা মামলা করেন সাখাওয়াত হোসেন। মামলা নং সিআর ১৭৩/২০২২।

মামলা সুত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর পাবনা যুগ্ম জজ-২য় আদালতে ওই গ্রামের কয়েকজন সহ সরকারি বেশকিছু জমিতে নিজের স্বত্ত দাবি করে মামলা করেন মনছুর আলীর পিতা রিয়াজ উদ্দিন শেখ। মামলা নং ১১৫। মামলায় জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসি ল্যান্ড ও গ্রামের ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। ২০১৬ সালের শেষেরদিকে মারা যান রিয়াজ উদ্দিন। তদবিরের অভাবে ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।

অথচ একই মামলার বিষয়ে ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মনসুর আলমদের পক্ষে আদালত ডিগ্রি দিয়েছে উল্লেখ করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সম্প্রতি একটি ভুয়া রায় তৈরী করেন মনসুর আলম ও তার ভাই মাহমুদ এ হাসান। ২০২১ সালের ২০ জুন সাঁথিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে ওই ভুয়া রায় দাখিল করে জমি খারিজের আবেদন করেন মনসুর আলম গং। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩১ মে উপজেলা ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর পক্ষে ৬ দশমিক ১৫ একর (সাড়ে ১৮ বিঘা) জমি খারিজও করে দেন।

জালিয়াতির ঘটনা জানতে পেরে ভুক্তভোগী জমির মালিকদের একজন শাহাদৎ হোসেন ভূমি কর্মকর্তার কাছে মনসুর আলমের ওই খারিজ বাতিলের আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মনিরুজ্জামান চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পাবনা আদালতের সরকারি কৌশুলীর কাছে আদালতের রায়ের বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি দেন। ১৪ মার্চ সরকারি কৌশুলী অ্যাডভোকেট হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী ওই চিঠির জবাবে জানান ২০০৮ সালে এমন কোনো মামলার রায় হয়ইনি। বরং ওই মামলাটি ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে এবং তদ্বিরের অভাবে খারিজ হয়ে যায় মনসুর গংদের বিপক্ষে।

আদালতের নথি যাচাই বাছাই ও তদন্তে মনুসর আলমদের দাখিল করা আদালতের রায়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত হন এসি ল্যান্ড। তিনি মুলত জমি দখল করতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর চলতি বছরের ৩০ মার্চ মনসুর গংদের খারিজ বাতিল করে প্রতিবেদন দেন ভূমি কর্মকর্তা। এরপরই মনছুর ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতের রায় জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী সাখাওয়াত হোসেন। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম সোমবার দুপুরে বলেন, আদালতের আদেশ এখনও হাতে পাইনি। পেলে আদেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মনুসর আলী গংদের খারিজ বাতিলের আবেদন পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখতে পাই তার মধ্যে সরকারি বেশকিছু জমিও রয়েছে। আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মনসুর পক্ষ ২০০৮ সালের একটি ভুয়া রায় দাখিল করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তদন্তে আদালতের রায় জালিয়াতি করার বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.