পাবনায় অ্যাসাইনমেন্ট’র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ গত রোববার সকালে জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় সরকারি সিন্ধান্তনুযায়ী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হোম অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে অর্থ আদায় করলে সেই সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন ঘোষনা দেয়ার একদিনের মাথায় পাবনার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হোম অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় বেশ কিছু উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় হোম অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে মৌখিক ও রশিদের মাধ্যমে ইচ্ছে মাফিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বেড়া উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তথ্যমতে, বেড়া বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও নাকালিয়া সাড়াশিয়া বনিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে হোম অ্যাসাইমেন্ট পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ৬শ শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করে কমপক্ষে ২শত বা ইচ্ছে মাফিক ভাবে টাকা আদায় চলছে। এ ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মহামারী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে হোম অ্যাসাইমেন্টর প্রশ্ন পূরন করে শিক্ষার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে বাড়িতে বসে হোম অ্যাসাইমেন্ট তৈরি করে স্কুলে সেই অ্যাসাইমেন্ট পৌছে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীর নিকট থেকে জোর করে টাকা আদায় করছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
জানা যায়, বেড়া বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেনী থেকে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ৬শ শিক্ষার্থী রয়েছে, অন্য দিকে নাকালিয়া সাড়াশিয়া বনিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী, সরকারি ভাবে ৩ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হোম অ্যাসাইমেন্টর সময় নির্ধারন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ৫শ শিক্ষার্থীর নিকট থেকে শ্রেনী ভেদে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট হতে গড়ে ২০০ টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজের খেয়াল খুশি মতো টাকা আদায় করেন। অভিভাবকরা আরো জানান, করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ ছিলো, তাদের আয়ের কোনো পথ নেই। তারপরও প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করে হোম অ্যাসাইমেন্টর নামে বকেয়া বেতন ও সেশন ফি, বিদ্যুৎ বিল ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফিসহ বিভিন্ন খাতে অর্থ আদায় করছেন।
বেড়া বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নায়েব আলী বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় না করার জন্য সরকারি কোন নির্দেশনা নেই তাই শিক্ষার্থীদের নিকট হতে বকেয়া বেতন সহ অন্যান্য খাতে টাকা আদায় করছি। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক হাজীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। আটঘরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের চিত্র একই ধরণের। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেও এর সঠিক সদ্যুত্তর পাওয়া যায়নি।
বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খবির উদ্দিন জানান, উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়ে দিয়েছি করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের হোম অ্যাসাইমেন্টের সময় কোনো ধরনের ফি বা বেতন নেওয়া যাবে না। বেড়া বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও নাকালিয়া সাড়াশিয়া বনিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।