নেত্রকোণায় অবৈধ ইটভাটা গ্রাস করছে নদী, পরিবেশ হুমকীর মুখে

0

মেহেদী হাসান আকন্দ : ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংশোধনী এনে ইটভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক, নির্দিষ্ট এলাকায় ইটভাটার জায়গা ও ভাটার সংখ্যা নির্ধারণ, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা চালালে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সংযোজন করে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন, ২০১৯’ বিল সংসদে পাস হয়েছে। ধারা-৪ এ সংশোধন এনে প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছেÑ “আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা ও ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে ইটভাটা। এসব ইটভাটায় নেই কোন সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, গ্যাস ও ধুলায় বিনষ্ট হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য, চিরচেনা প্রকৃতি-পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ-ধর্মপাশা সড়কে কংস নদীর ব্রীজ সংলগ্ন সামাইকোনা গ্রামে মোহনগঞ্জের মৃত রাধাচরনের ছেলে বিপ্লব রায় নদী ভরাট করে “ডি সি এস” ইটভাটা স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে একদিকে নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে অন্য পরিবেশ ও জলবায়ু দূষনের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার বাসিন্দারা। ইটভাটার বিপরীতে ২০০গজ দুরেই ধর্মপাশা থানা ভবন, ৩০০গজ দুরে ব্রিটিশ আমলে গড়া ধর্মপাশা জামে মসজিদ ও ৫০০গজ দুরে ধর্মপাশা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্্র ভবন অবস্থিত।
স্থানীয় বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম জানান, বসতবাড়ির পাশে ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধুয়ায় আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছি। গাছের ফল-ফলাদিও কমে গেছে। আবার নদী ভরাট করে যেভাবে দখল করা হচ্ছে তাতে নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এই নদীতেই গোসল করেন। ইটভাটার কারণে নদীর পানি ব্যবহার দিন দিন অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
ধর্মপাশা থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, এই ইটভাটার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা। কিন্তু ইটভাটাটি মোহনগঞ্জ সীমানায় হওয়ায় আমাদের কিছুই করার নাই।
এছাড়াও সামাইকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন “এ কিউ সি” ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার দশধরী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীর ছেলে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। ২০০০সালে ইটভাটা লাইসেন্স গ্রহণ করে ২০১৭সাল পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন করলেও ইটভাটা সংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় জনৈক তালেব আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা হবেনা মর্মে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়ার পরও ইটভাটার কার্যক্রম অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
ইটভাটার মালিক আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ইটভাটা চালাতে স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিন তাকে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছে। এছাড়াও লাইসেন্স নবায়নের নিমিত্তে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী বরাবর আবেদনে স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিন সুপারিশ প্রদান করেছেন।
সামাইকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, ১৯৮৭সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়ে বর্তমানে ২৪৮জন শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। ইটভাটাটি স্কুল সংলগ্ন হওয়ায় ভাটার কালো ধুয়া ও কালিতে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বসবাসকারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। জনৈক আবু তালেবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের পর জেলা প্রশাসন থেকে ইটভাটার মালিককে লিখিতভাবে ভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদ ইকবাল ইটভাটায় এসে স্কুলের সভাপতি ও আমাকে ডেকে অনেক লোকজনের মধ্যে বলেন, এমপি সাহেব ইটভাটা চালাতে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন আপনারা কোথাও কোনো অভিযোগ করবেন না।
সামাইকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ডা: আব্দুল হান্নান জানান, ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধুয়ার কারণে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বসবাসকারীরা প্রায় সর্দিকাশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্্রান্ত হয়ে থাকে। চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন, এমপি সাহেবের অনুমতি আছে। এমপি সাহেব, চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের নেতা তারা অনুমতি দিলে আমাদের কি করার আছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.