কক্সবাজারের মাছ ব্যবসা থেকে কোটিপতি ব্যাংক একাউন্টবিহীন কাইয়ুম সওদারগর নিরাপদ অবস্থানে
উপকূলীয় প্রতিনিধি : কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সাথে জড়িত দালালরা দুদকের জালে আটকা পড়ছে একে একে। ইতিমধ্যে মহেশখালী কালারমারছড়া ভূমি তহসিলদার জয়নাল আবেদীন ও দুই শীর্ষ দালাল মুহিব উল্লাহ ও সাবেক সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা আটক হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে শীর্ষ দালালরা। আবার অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে।
অপরদিকে কে এই কাইয়ুম? বছর দশেক আগে যিনি সামান্য ফেরি করে মাছ বিক্রি করতেন, তিনি এখন কক্সবাজারে কোটিপতির কাতারে। প্রভাবশালী নেতারা টাকার কাছে তার হাতে জিম্মি। তারঁ উত্থান যেন রূপ কথার গল্পের মত। মহেশখালীর বাসিন্দা ‘কাইয়ুম’ এখন ‘টক অব দি টাউন’ কি নাই কাইয়ুম সওদাগরের? এছাড়া বর্তমানে দুর্নীতি বিরুদ্ধী অভিযান শুরু হলে কাইয়ুম সওদাগর নিরাপদে অবস্থান করায় আগের মত তার প্রকাশ্য তেমন দেখা মিলছেনা বলে ও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। আর যে সব সংবাদকর্মীরা তার অটল সম্পদ ও কোটিপতির খাতারে সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের মাধ্যমে কাইয়ুমের পক্ষে সাফাই তুলে ধরতে একটি চক্র মোটা অঙ্কের মাধ্যমে ম্যানেজ করতে উক্ত সংবাদকর্মীদের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করে ও ব্যর্থ হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে ‘ ব্যাংক একান্টবিহীন কাইয়ুম থেকে কোটি’ শিরোনামে স্থানিয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন পোট্রোলে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদকসহ নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগও কাইয়ুম সওদাগরের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে। তবে বিষয়টি ও এখনো নিশ্চিত করেনি।
জানাগেছে,দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী কাইয়ুমের জন্ম পৈত্রিক বাড়ী হলেও বর্তমান কক্সবাজারের বাসিন্দা আলোচিত কাইয়ুম সওদাগরের অবৈধ সম্পদ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদ বন্ধের জন্য মোটা অংঙ্কের লবিষ্ট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। পাশাপাশি অবৈধ আয়ের উৎস অনুসন্ধানে থাকা কয়েকটি তদারকি সংস্থার কাছে ধর্ণা দিচ্ছে কাইয়ুম সওদাগরের একটি সিন্ডিকেট বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তাদের টাকা দিয়ে মাঠে নামিয়ে এবং স্থানীয় সংবাদপত্রের কয়েকজনের কাছে হরহামেশাই যোগাযোগ করতে দেখা গেছে কাইয়ুম সওদাগরকে। তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত চলমান সংবাদ বন্ধ করতে মোটা অংকের মিশনে কাজ করছে প্রভাবশালী চক্রটি।
জানাগেছে,সরকার বিরোধী একটি পরিবারকে সাথে নিয়ে নিজের অবৈধ ও অপরিদর্শিত আয় জায়েজ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করা কায়েম সওদাগরকে খুঁজতে শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় পত্রিকায় করফাঁকি এবং সন্দেহজনক লেনদেনের সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে আয়কর বিভাগ ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা কাইয়ুম সওদাগরের ডিটেইলস তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। একটি সংস্থা ইতোমধ্যে তার বেশকিছু অবৈধ আয়ের উৎসের বিষয়ে খবরাখবর নিতে শুরু করেছে। সামান্য মাথায় ফেরি করে মাছ ব্যবসায়ি কিভাবে এত টাকার মালিক হলো তার রহস্য শীগ্রই খুলে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, আদম পাচার করে কাইয়ুম সওদাগর এখন ১০ টি ফিশিং বোটের মালিক। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি দিতে নগদ লেনদেন সেরে জায়গার মালিক বনে গেছে। তার ১০ টি ফিশিং বোটে কয়েকটি ইয়াবার চালান সাগর পথে পাড়ি দিয়ে গেল ৩ বছরে কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুমোদনহীন অবৈধ টাকায় কেনা তার মালিকানাধীন বোটগুলো হলো এফবি কামরুল হাসান, তার বড় ছেলের নামে এফবি রিফাত, এফবি রফিকুল হাসান নাম ২ টি, ছোট ছেলে ফরহাদের নাম ২ টি ফিশিং বোট রয়েছে। তৎকালীন সময়ে হঠাৎ কিভাবে এত টাকার মালিক বনে যায় এ বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে ২০১৮ সালের শেষের দিকে মানব পাচারকারী হিসাবে কাইয়ুম সওদাগরকে আটক করে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ। কালো টাকার মালিক বনে যাওয়া কাইয়ুম আটকে পরপরই রাতে অদৃশ্য কারণে বেরিয়ে আসে থানা থেকে।
চলাচল দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি কোটি টাকার মালিক। বলছি শহরের এন্ডারসন রোডের ভাড়া বাসায় থাকা মরহুম সৈয়দ আহমদের পুত্র কাইয়ুম সওদাগরের কথা। কেউ বলে বহদ্দার, কেউ বা সওদাগর, অনেকের কাছে কাইয়ুম কোম্পানি। মাছ ব্যবসা থাকলেও নিজের দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই। বছরের পর বছর করেছেন বেকার জীবন। তার পরে ছোট খাটোও খুচরা মাছ বিক্রি করতেন। এখন তিনি কোটিপতির কাতারে। চলাফেরা আলিশান না হলেও তকমা লাগিয়েছেন বড় মাফের সওদাগর হিসেবে। নাম তার কাইয়ুম সওদাগর।
এছাড়া নিজ ভূমি মহেশখালী উপজেলার পৌরসভার চরপাড়ায় নিজ এলাকায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে ৭০ লাখ টাকায় ফিশিং বোট। উক্ত ফিশিং বোটের আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকার উপরে। এছাড়াও রয়েছ যৌথ মালিকানায় রয়েছ আরো ৪ টি ফিশিং বোট যার মূল্য ২ কোটি টাকার উপরে হবে। এছাড়া রয়েছে পৌরসভায় ৯ নং ওয়ার্ড চরপাড়ায় কিনেছে আরো ৮০ শতক জমি, কলাতলিতে রয়েছে আরো ৪ শতক জমি যার আর্থিক মুল্য উভয় জমির ১ কোটি টাকার কাছাকাছি। চট্টগ্রামে স্ত্রীর নামে রয়েছে প্লট।স্ত্রীর বড় ভাইয়ের নামে কিনেছে প্রাইভেট কার। এছাড়া ও একটি জাতীয় পত্রিকা কাইয়ুম সওদাগর ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা কক্সবাজারে একটি ব্যক্তিকে ধার দিয়েছে বলে স্বীকারও করেছেন। ধার দেয়ার খবরে আলোচনায় আসে কাইয়ুম সওদাগর। বিষয়টি স্থানিয় সংবাদকর্মীদের নজরে আসলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোস্যল মিড়িয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এটা নিয়ে রীতিমতো তুলোধুনো চলছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে।
কম সময়ে কিভাবে এত টাকার মালিক হলো সে রহস্য উদঘাটনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ও আয়কর বিভাগের আরো তৎপরতা বাড়ানো জরুরী। ধরা পড়ার ভয়ে ব্যাংকিং লেনদেন না করায় তাকে ঘিরে রহস্যের দানা বাঁধছে খোদ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।
এ বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী উপ পরিচালক মোঃ শরিফ উদ্দিন বলেন- কাইয়ুম সওদাগরের অবৈধ সম্পদ অর্জন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ও তার আয়ের উৎস বিষয়ে তদারকি করা হবে।