সুলভে তাজা ফল ও শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে নগর কৃষি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি

0

তৌহিদ উদ দৌলা রেজা : প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবজি এবং ফলমুল উৎপাদনকারী দেশ হলেও, এখানে জনগোষ্ঠী প্রয়োজনের তুলনায় কম তাজা-ফল ও শাক সবজি গ্রহণ করছে। তাজা ফল ও শাকসবজি গ্রহণের সাথে প্রাপ্তি ও দামের একটি নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে। নগরে তাজা ফল ও শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে নগর কৃষি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। শনিবার সন্ধা ৭টায় ‘নগরে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য নিশ্চিতে সহায়ক নীতি গ্রহণে করণীয়’ শীর্ষক শিরোনামে এক ওয়েবিনারে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।

আর্ক ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও মেয়র এলায়েন্স ফর হেলদি সিটি’র যৌথ উদ্যোগে এ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা বলেন, অসংক্রামক রোগ সারা বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশেও এটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কারণ বর্তমানে দেশে ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামণজনিত রোগ। এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া নগরায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা; অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস; তাজা শাক-সবজি-ফলমূল কম খাওয়া; শরীরচর্চা, ব্যায়াম বা পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব; অতিরিক্ত স্থুলতা; অনিয়ন্ত্রিত মাদক সেবন এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার এবং পরিবেশ দূষণ। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে ফল, সবজি গ্রহণে উৎসাহী এবং ট্রান্সফ্যাট, অতিরিক্ত চিনি, লবণ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতা, পুষ্টি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানদন্ড প্যাকেটে যুক্ত করা, খাদ্যে লবণ গ্রহণে নিরুসাহিত করা, উচ্চ কর আরোপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং বিজ্ঞাপন বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী।

এছাড়াও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে জনগণকে উৎসাহী করতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ এ দুটি সমান্তরালভাবে করা সম্ভব না। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি এবং কর হ্রাস একটি কার্যকর উপায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ফুড সাপ্লাই চেইনের আইন ও সাহায়ক নীতি প্রণয়ন, সংশোধন, পরিমার্জন করা না হলে জনগণের কাছে সুফল পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। নগরে ছাদ কৃষি কৃষির জন্য নিজের কর্মএলাকায় গাইড লাইন প্রস্তুত ও বাস্তবায়ন, ছাদ কৃষিতে উৎসাহ করতে নাগরিকদের প্রণোদনা প্রদান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গায় ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ, নগরের আশে পাশে হতে সহজে এবং কম খরচে যেন মালামাল নিয়ে আসতে পারে তার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নগরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী(হকার,ফেরিওয়ালা,কৃষকদের) বসার ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,জাতীয়ভাবে নগর কৃষি নীতিমালার প্রণয়নের জন্য সম্মিল্লিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম, ধামরাই পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কবির, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ ডাবলু, গাইবান্ধা ১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএলপিএ সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম। ওয়েবিনারে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), এইড ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, ডাস, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.