কলেজ ভবন, শিমুল গাছ , মোবাইল টাওয়ারটি যেন মৌমাছির রাজ্য এক গাছেই ৩০০টি মৌচাক

0

ইউসুফ আলী মন্ডল, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি: ছোট ছোট রাজ্য মিলে বিশাল এক সামাজ্য, লাখ লাখ সৈন্যের স্বাধীনভাবে বিচরণ আর উড়াউড়ি, প্রতিটি রাজ্য শাসন করছেন এক এক জন রাণী। এটা কোন মানব রাজ্য নয় বলছি শৃঙ্খলাবদ্ধ ও কর্মট ক্রিয়ার প্রতঙ্গ মৌমাছির কথা। শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ডিগ্রি কলেজের ৪ তলা ভবনের চারদিকের কার্নিশ, সিলিং, বারান্দার দেয়ালে নিজেদের নিরাপদ আবাস্থল গড়ে তুলেছে প্রায় ৭৫টি মৌচাক। এছাড়াও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে আরও সহস্রাধিক মৌচাক। যা নজর কাড়ছে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শকদের। এসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।

চন্দ্রকোনা ইউনিয়নে উপজেলা সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়। একটু পরপর মৌচাক থেকে মৌমাছি বের হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাশের এসব সরিষা ক্ষেতে। মধুসংগ্রহ করে জমা করছে নিজ নিজ চাকে। কলেজটি নকলা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে বহ্ম্রপুত্র নদের পাড় ঘেষা ইউনিয়ন চন্দ্রকোনায় হলেও নকলা-চন্দ্রকোনা সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানবাহনের যাত্রীরা আসা-যাওয়ায় দৃষ্টিনন্দন মৌচাকের মৌ মৌ শব্দ উপভোগ করছেন। এছাড়াও কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। এতে কলেজের ছাত্র শিক্ষক কারও কোন অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পাশাপাশি মানিকারচর,চন্দ্রকোনা বাজারের দুটি মোবাইল টাওয়ার অসংখ মৌমাছির চাক বেধে রয়েছে। মানিকারচর একটি গাছে ৩০০ টি চাক এর সন্ধ্যান পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্টিত হয় চন্দ্রকোনা কলেজ। আর কলেজের চারতলা এ নতুন ভবনটি নির্মাণ হয় ২০১৮ সালে। ভবন নির্মাণের পর থেকেই শীতকালে কলেজের এ নতুন ভবনে বাসা বাধা শুরু করে মৌমাছিরা। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হতে থাকে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস। মৌচাকগুলো কলেজটির সৌন্দর্য যেন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। চারদিক থেকে দল বেঁধে মানুষ আসে মৌচাক দেখতে।

এসব মৌচাকের মধু মৌয়ালিদের কাছে আগাম টাকায় চুক্তি হিসেবে বিক্রি দেওয়া হয়। চন্দ্রকোনা কলেজের অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম জানান, এবছর ৫২ হাজার টাকার অগ্রিম চুক্তিতে মৌচাক গুলো বিক্রি করা হয়েছে। যা থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে কলেজের সাধারণ তহবিলে টাকা। পাশাপাশি এলাকাবাসী বিশুদ্ধ মধুও সংগ্রহ করতে পারছেন। তাছাড়া চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বাজারসহ চর বাছুরআলগী, চরমধুয়া, ছোট ডৌহারচর, বড় ডৌহারচর ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ছাদ, জানালার কার্নিশে ও বড় বড় গাছের ডালে বাসা বেঁধে আসছে বা চাক করে আসছে বুনো মৌমাছি।

স্থানীয়রা জানান, সরিষার মৌসুম এলেই দলে দলে মৌমাছি এসে কলেজ ভবনে বাসা বাঁধতে শুরু করে। চারদিকে কোলাহল বেড়ে যায়। প্রতিদিন বিকেল হলেই আশপাশের লোকজন কলেজ মাঠে জমায়েত হয় মৌচাক দেখতে। আমরা দর্শনার্থীদের পরামর্শ দেই কেউ যেন মৌচাকে ঢিল না ছুড়ে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, নকলার আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য উপযোগী। চলতি বছর উপজেলায প্রায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষা চাষ বৃদ্ধির ফলে যেমন দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমনি এ সরিষা মাঠের আশে পাশে মৌমাছি চাষ করে এবং মৌমাছি বাসা বেঁধে বিশুদ্ধ মধু উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মৌ চাষি এবং মধু উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণসহ সবধরণের সহযোগীতা করছে কৃষি বিভাগ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.