পাবনায় সাংবাদিক ও আইনজীবী দম্পতির বাসায় ফুটেছে নাইট কুইন ফুল
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা শহরতলীর শালগাড়িয়া মহল্লায় সাংবাদিক ও আইনজীবী দম্পতির বাসায় ৫ বছর পর নাইট কুইন ফুল ফুটেছে। গেলরাত দিবাগত বারোটায় এই ফুট ফুটে শেষ রাত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দেশ টেলিভিশনের পাবনা প্রতিনিধি, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, খাজা হোমিও ল্যাবরেটরীজ ও খাজা হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী জি কে সাদী এবং পাবনা নারী ও শিশু কোর্টের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট বিথিকা খোন্দাকারের বাসায় নাইট কুইন ফুলের গাছ টবের মধ্যে পরিচর্যা করা হচ্ছিল।
সাংবাদিক জি কে সাদী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বুঝতে পারছিলাম ফুল ফুটবে। ফুল ফুটবে ফুলের রানীকে দেখবো বলে অধীর আগ্রহে ছিলাম। দিবাগত রাত বারোটার দিকে ফুলের রানীর সাক্ষাত পেলাম। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার যেন অবসান হলো। আইনজীবী বিথিকা খোন্দকার বলেন, আমার বাসার চারপাশেই নানা ফল ফুল, বনজ ঔষধের গাছ আর কাঠের গাছের বাগান। সব ফুলের মধ্যে টবে নাইট কুইন গাছও ছিল। পরিচর্যাকারীরা নিয়মিত ভাবে বাগান পরিচর্যা করলেও সবার অগচরে থেকে যায় নাইট কুইন টবটি।
তিনি বলেন, টানা চার বছর অবহেলার মধ্যেই ছিল নাইট কুইন গাছটি। হঠাৎ বাগানের আড়ার স্থানে গাছটি দেখে আমি তুলে আনি দৃষ্টিসীমায় রাখি। বছর খানের হলো গাছটির কদর বেড়ে যায় অনিচ্ছাতেই। কিছুদিন হলো গাছে কুড়ির দেখা মেলায় যেন বাসায় সবার যত্ন-আত্মি বেড়ে যায়। অবিশ্বাস্য ভাবেই নাইট কুইন আমার বাসায় ফুটেছে এটা সত্যি আমি অভিভূত হয়েছি। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
এই দম্পত্তির ছেলে বর্ষন চিশতি আর মেয়ে সুজানা সাদী বর্ননার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। তাদের দাবী টিভিতে ও পত্রিকায় দেখেছি ও পড়েছি নাইট কুইন ফুল ফোটার সংবাদ। এটা যে আমাদের বাসায় হবে এটা ভাবতে অনুভূতিটা অন্যরকম বেড়ে যাচ্ছে।
তথ্যমতে, নাইট কুইন নাম শুনে সহজেই অনুমান করা যায় রাতের আঁধার আলো করে ফোটে ফুলটি। সৌন্দর্য-সৌরভ-প্রস্ফুটন সব মিলে ফুলটিকে দিয়েছে রানীর আসন। নামকরণও সার্থক। এছাড়া নাইট কুইনকে বলা হয় সৌভাগ্যের প্রতীক। মনে করা হয় যে বাড়িতে ফুলটি ফোটে তার বাড়িতে সৌভাগ্য বয়ে আনে। সন্ধ্যা থেকেই ফুল ফোটা শুরু হয়। এক সময় সবগুলো পাপড়ি ছড়িয়ে অপার সৌন্দর্যে বিলিয়ে দেয় চারদিকে। ক্যাকটাস জাতীয় এ উদ্ভিদের আদি নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও মেক্সিকো। ফুলপ্রেমীদের হাত ধরে আমাদের দেশে বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নাইটকুইন চোখে পড়ে। এর ইংরেজি নাম : Dutchmans pipe ও Queen of The Night. উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম : Epiphyllum oxypetalum.
নাইট কুইন বর্ষার ফুল। অন্যান্য যে কোনো ফুল থেকে আলাদা। চারা গাছ থেকে ফুল ফুটতে সময় নেয় পাঁচ থেকে সাত বছর। এর চারা তৈরি হয় পাথরকুচি গাছের মতো পাতা থেকে। নরম মাটিতে পাতা রেখে দিলে ধীরে ধীরে চারা গজায়। এরপর চারা বড় গাছে পরিণত হয়। গাছের পাতার রং সবুজ ও বেশ পুরু। উচ্চতা গড়ে ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল ফোটার আগে গাছে প্রথমে গুটি গুটি কলি ধরে। এরপর কলি বড় হয়ে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ফুল ফোটার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। যে রাতে ফুল ফুটবে সেদিন বিকেল থেকেই কলিগুলো অদ্ভুত সাজে সাজতে থাকে। তখনই বোঝা যায় নাইট কুইনের ফোটার সময় হয়েছে। এক সময় কাক্সিক্ষত ফুলটি ফোটে। সৌরভ ছড়ায়। সবই রাতের আঁধারে।
লম্বা বোঁটায় নমনীয় কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট নাইট কুইন। মাঝে পরাগ অবস্থিত। ফুলের রং প্রধানত সাদা। তবে সাদা রঙের ফুলে মাঝে ঘিয়ে রঙের মিশ্রণ ও সুমিষ্ট গন্ধ থাকে। রাত শেষ হওয়ার আগেই ঝরে যায়। অর্থাৎ ভোরের আলো ফোটার আগেই জীবনাবসান। তাই তো ফুলটিকে দুর্লভ ফুল বলে আখ্যা দেন অনেকে। নাইট কুইন সরাসরি মাটি ও টবে রোপণ করা যায়। উঁচু ভূমি পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানে নাইট কুইন ভালো জন্মে।