ইছামতিতে নৌকা বাইচ, দেখতে লাখো মানুষের ঢল
পাবনা প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার ফাইনাল এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পাবনার সাঁথিয়ায় ইছামতি নদীপাড়ে নৌকা বাইচ দেখতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।
বুধবার বিকেলে সাঁথিয়ার বাজার সংলগ্ন ইছামতি নদীতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু।
সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন, সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার, সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদ হোসেন প্রমূখ।
এবার প্রতিযোগিতায় জেলা ও জেলার বাহির থেকে ৮টি দল অংশ নিয়েছে। শেষ দিনের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিজয়ী হয়েছে বাগচী চ্যালেঞ্জার এবং রানারআপ হয়েছে মায়ের দোয়া আফ্রা। চ্যাম্পিয়ন এবং রানারআপ দলদুটিকে মোটরসাইকেল পুরস্কার দেয়া হয়। অংশগ্রহণকারী বাকি সবাইকে একটি করে ফ্রিজ পুরষ্কার দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুল হক টুকু বলেন, ‘নৌকাবাইচ আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূল অনুষঙ্গ। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। এতে গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পান।
মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। খেলাধুলা মানুষকে সকল অনৈতিক কাজ থেকে দুরে রাখে। যুব সমাজকে ধ্বংক করে নেশা জাতীয় জিনিস খাওয়ার মাধ্যমে। আর নেশাকে ধ্বংস করতেই প্রতি বছর ইছামতি নদী পাড়ে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচ। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রতিবছরই ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকার ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে নদী- নালা খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক নদী বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সেটি প্রবাহবান রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় ইছামতি নদী প্রবাহমান করে খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস চাষে ব্যবহার করা যাবে। এজন্য সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে ইছামতি নদী পাড়ে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয় মানুষকে আনন্দ দিতে। এর কারণ হলো প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গ্রাম হবে শহর। অর্থ্যাৎ গ্রামেই শহরের সুবিধা পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ পেতাম না। সেই বাংলাদেশের বর্তমান হাল ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রী সম্পর্কে মানুষকে জানাতে জন্মদিনে এমন আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে নৌকার হাল ধরেছেন বিস্ময়কর নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যিনি দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নতির শিখরে। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে আছে নৌকা প্রতীক। উন্নয়নের সবদিক আছে এই নৌকায়। শেখ হাসিনার জন্মদিন মানেই জাতির উৎসবের দিন।
যিনি যাদুকরী নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়েছেন, বিশ্বমঞ্চে দেশের পরিচিতি এনে দিয়েছেন। জাতিসংঘের ঘোষণায় আদায় করে নিয়েছেন বিশ্বের তৃতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা। আর এ সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে নৌকা প্রতীক। আগামী নির্বাচনে এই নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। তবেই দেশের উন্নয়ন ঠিক থাকবে। দেশের মানুষ ভালো থাকবে শান্তিতে থাকবে এসব কিছু চায়না একটি মহল। তাই শান্তিপ্রিয় মানুষের ছাঁয়াতলে থাকতে আহবান জানান তিনি।
শুধু জেলার মধ্যেই নয়, তারা বাইরের জেলাতেই অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতিটি নৌকাতে ৬০ জন করে মাল্লার ও দুজন ছন্দের লোক একজন মাঝি দোয়া-কালাম পড়ে উঠে পড়েন নৌকায়। দুপুর থেকে তারা নদীতে নৌকা নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিতে থাকেন। নদীর পূর্ব পাড়ে প্রায় দুই কিমি দূর থেকে পশ্চিশ পাড়ের মঞ্চ প্রাঙ্গণে আসতে হয়েছে প্রতিটি নৌকাকে।
জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার মানুষও এখানে অংশ গ্রহণ করে ও প্রতিযোগিতা দেখতে আসেন। এ ছাড়া জেলার বাইরে সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, নাটোর, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।