পরকীয়ার জেরে গৃহবধূ আরজিনা হত্যা, মামলা না নেওয়ার অভিযোগ
পাবনা প্রতিনিধি : স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় গৃহবধূ আরজিনা বেগম (৫০) কে এসিড দিয়ে হত্যার ১৩ দিন পার হলেও, মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়া এবং ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন নিহতের পরিবার। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলে দাবি তাদের।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন নিহত আরজিনার বোন রোজিনা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে রোজিনার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের ভাবী দিলশাদ আরা বেগম।
নিহত আরজিনা বেগম পাবনা সদর উপজেলার দিয়ার রাজাপুর গ্রামের সেকের মোল্লার মেয়ে এবং একই উপজেলার চর শিবরামপুরের ঝুটপট্টি এলাকার আসলাম হোসেনের স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, নিহত আরজিনা বেগম দীর্র্ঘ ৩০-৩২ বছর তার স্বামী আসলাম হোসেনের সাথে সংসার করছিলেন। তাদের ঘরে তিনটি কন্যা সন্তাান রয়েছে, তাদেরও বিয়ে হয়েছে। আসলাম একই এলাকার এক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। প্রতিবাদ করায় আরজিনাকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতেন আসলাম।
তারই জেরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতের কোনও এক সময় আরজিনাকে এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ নিজ ঘরের ডাবের সঙ্গে ঝুলিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে আসলাম ও তার পরিবার। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক আসলাম।
লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করে রোজিনা খাতুন বলেন, ‘আমার বোনকে যে এসিড দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার আলামত দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। তার গায়ের বিভিন্ন অংশ পুড়ে ঝলসে গেছে, মুখ পুড়ে কালো হয়ে গেছে। গলায় ছিদ্র হয়ে গেছে। হাত-পায়ের রগগুলোও পুড়ে গেছে। শরীরে মারধরের একাধিক চিহ্ন রয়েছে, অথচ বলা হচ্ছে সে গলায় দঁড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এমনতাবস্থায় ঘটনার পরের সবকিছুর ছবি, ভিডিও থাকলেও পুলিশ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ঘটনাস্থলেই পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিলে তারা কোনও কর্ণপাত করেনি। এক পর্যায়ে থানায় ডেকে নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগে বাদী হিসেবে রোজিনা খাতুনের স্বাক্ষর নিয়ে বিদায় করা হয়েছে, অথচ অভিযোগের কোনও কপি পরিবারকে দেয়নি পুলিশ।
রোজিনা খাতুন বলেন, আজ ১৩ দিন হতে চললো, এখনও পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি এবং আসামির বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মামলা গ্রহণের বিষয়ে থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কথা বলে কালক্ষেপণ করছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাদী রোজিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৌরভ আমাদের নানা ধরনের হুমকিমূলক কথাও বলেছে। তিনি আমাদের কোনও ধরনের পাত্তাই দিচ্ছেন না। ময়নাতদন্তের পর আমরা লাশ চাইলে এসআই লাশ দিতে অস্বীকার করেন এবং লাশ টুকরো টুকরো করে দেয়ারও হুমকি দেন। আমরা একাধিকবার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে এসআই সৌরভ বাধা দেন এবং কঠোরভাবে নিষেধ করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বোন রোজিনা খাতুন, চাচাতো ভাই আলম হোসেন, নজরুল ইসলাম, ভাবী দিলশাদ আরা বেগম, ননদ রাবেয়া আক্তারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আরজিনা খাতুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৌরভ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তো আমি শুনেনি, আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এই বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই ইউডি মামলা হয়েছে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি, রিপোর্ট পেলেই আমরা বিষয়টি দেখবো।