ভাঙচুর করে পরিবারকে তালাবদ্ধ রাখার অভিযোগ; পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে মুক্ত

0

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ভাটোপাড়া গ্রামে জমি দখলে নিতে ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরে গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশের সহায়তায় তালাবদ্ধ পরিবারটি মুক্ত হয়। সোমবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগে জানা গেছে, ওই গ্রামের আমেনা খাতুনের স্বামী হযরত আলী ২০১৪ সালে মারা যান। পার্শ্বডাঙ্গা মৌজার ১১০৮ নম্বর দাগের ৫ শতাংশের কিছু বেশি জমি আমেনা খাতুন ও তার দুই মেয়ের নামীয় সম্পত্তি হিসেবে দাবি করেন। আমেনা খাতুন তার স্বামী মারা যাবার পূর্বে থেকে ওই জমিতে একটি দ্বিতল বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি আয়ের পথ তৈরীর আশায় বাড়ি পাশে রাস্তা সংলগ্ন জমিতে দোকান ঘর তৈরী করেন। একই জমি নিজেদের মালিকানা দাবি করে আসছেন মৃত হযরত আলীর বাবা আবুল হাসান ও তার অপর চার ছেলে আবুল কালাম, আব্দুস সালামসহ অন্যরা। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

আমেনা খাতুন বলেন, তারই জেরে সোমবার মধ্যরাতের পর আবুল হাসান ও তার ছেলে সালাম, কালামসহ ৫-৬ জন নির্মাণাধীন দোকান ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ আমেনা খাতুনের। শুধু তাই নয়, বাড়ির দ্বিতলায় বসবাসরত আমেনা খাতুন ও তার মেয়েদের হুমকি ধামকি দিয়ে মারতে যান। কিন্তু ঘরের দরজা আটকানো থাকায় তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে তাকেসহ তার মেয়েদের ঘরে বন্দি রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করেন আবুল হাসান ও তার ছেলেরা।

এমন পরিস্থিতিতে আমেনা খাতুন ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে যাবার তারা আবারও বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়। এর আগে গত ১৯ জুলাই দোকান ঘর নির্মাণের সময় তারা বাধা দিয়েছিল সেজন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দয়ো আছে বলে জানান আমেনা।

এদিকে, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে খবর পেয়ে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ওই বাড়িতে গেলে আমেনা খাতুনের ঘর বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে মানবিক দিক বিবেচনা করে তারা বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানান।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, জমি নিয়ে শরীকদের মধ্যে দ্ব›দ্ব থাকতেই পারে। তার সমাধানও আছে। তাই বলে কাউকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার অধিকার কারো নেই। তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করা আইনের পরিপন্থি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে শরৎগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ওই বাড়িতে গিয়ে তালা ভেঙে পরিবারটিকে মুক্ত করেন। এ সময় সেখানে সরেজমিন পরিদর্শণে যান চাটমোহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমারসহ সঙ্গীয় ফোর্স। তিনি উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টির সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান।

পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার বলেন, দুই পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ কারো কোনো সমস্যা যাতে না করে। তাদের উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবুল হাসান বলেন, তার মৃত ছেলে হযরত জমি কিনেছিল অন্য পাশে। কিন্তু রেজিস্ট্রির সময় সামনে থেকে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। এই জমিতে তার অপর চার সন্তানের অংশ রয়েছে। তার পুত্রবধুই সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন তিনি। ভাঙচুর কে করেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান। এতদিন কেন জমি সন্তানদের মতো ভাগ বাটোয়ারা করে দেননি এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

তার ছেলে আব্দুস সালাম বলেন, আমরা থাকি ঢাকায়। মাঝে মধ্যে আসি। কিন্তু আমার ভাবী আমেনা এই বাড়িতে বিভিন্নভাবে আমাদের বাবা-মা সহ অন্যদের সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি সোমবার বিকেলে বাড়ির নিচতলায় পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘরে তালা দেন। পরে আমরা বাধ্য হয়ে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ঘরে তালা দিয়েছিলাম।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.