পর্যটক শুণ্য পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালনশাহ সেতু ।

পর্যটকের দেখা নেই পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালনশাহ সেতু এলাকায় ।

0

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের অন্যতম প্রাচীন জেলা পাবনা। নানা ঐতিহ্যে ভরপুর এ জেলা । কিন্তু দর্শণার্থীদের নেই কোন বিনোদনের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা। জেলা সদরে কালেক্টরেক্ট ভবনের সামনে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ দূর্জয় পাবনা। আর সেটি শেখ রাসেল শিশুপার্ক হিসেবে পরিচিতি। শহরের ভিতরে হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে সে মনোরম পরিবেশ নেই। শহর থেকে কমপক্ষে ১৫/২০ কিলোমিটার দুরে দক্ষিণ ও পশ্চিমকোণে বাংলাবাজার লঞ্চঘাট। তার পাশের পদ্মানদীর শিলাইদহ ঘাট। পর্যটন স্পট না হলেও বিনোদন পিপাসুদের কাছে ‘নাই মার চেয়ে কানা মা-ই ভাল’ এমনটি।

অন্যদিকে শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে উত্তর ও দক্ষিণ কোণে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে ব্রিটিশ নির্মিত শতবছরের ঐতিহ্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। পাশেই লালনশাহ সেতু। দুই সেতুর নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মা নদী। পাবনাসহ আশপাশের জেলা বিশেষ করে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, এদিকে নাটোর, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার বিনোদন পিপাসু ও দর্শণার্থীরা ভীড় জমান এই স্পর্টে। এটি সরকারি ভাবে পর্যটন স্পট না হলেও বিনোদন প্রেমিদের জন্য এখানে সময় কাটানো আর নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার জন্য এটি পর্যটন কেন্দ্রে রুপ নিয়েছে । সাথে সুশীতল বাতাস তাদের টেনে আনে এখানে। মূলত দুপুরের পর থেকেই এই স্পর্টে বেড়ে যায় দর্শণার্থী বা বিনোদন পিপাসুদের আড্ডা। দুপাশে সেতু, মাঝে কাঁশবন দুলছে। সামনেই বয়ে চলেছে পদ্মা নদীর স্রোত ধারা। সারিসারি ডিঙ্গি নৌকায় দর্শণার্থীদের মাঝনদীতে ভ্রমণ যেন দৃষ্টি নন্দন একটি পর্যটন কেন্দ্রে রুপ দিয়েছে ।

সরকারি ছুটির দিনে একটু প্রশান্তি আর বিনোদনের লোভে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছুটে আসে এই স্পর্টে। আর ঈদকে সামনে রেখে ঈদের দিন থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতদিন থাকে জনসমাগম। মানুষের ভীড়ে এখানে পা ফেলা দায় হয়ে পড়ে। কেউ আসেন ঘুরতে, কেউ আসেন বেড়াতে। আবার কেউ বা আসেন স্বল্প বা বৃহৎ পরিসরে পিকনিট করতে। দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে নানা আয়োজন।

বৈশ্বয়িক মরণঘাতি করোনা ভাইরাস এবারে সেই আনন্দ বা বিনোদন ম্লান করে দিয়েছে। মানুষের মনের স্বস্তি, আনন্দ বা একটু নিরিবিল বিনোদনের মধ্যদিয়ে সময় কাটানো হয়ে উঠেছে দূর্বিসহ। করোনা ভাইরাসের কারণে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ওই স্থানটিকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। কোন ধরণের জনসমাগন যাতে না ঘটে, সেদিকে সচেতনতার সাথেই দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

ঈদের দিনে কমপক্ষে ২ হাজার লোকের সমাগম হওয়ার সাথে সাথেই নজরে আসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। দ্রুত সেখান থেকে জনসমাগম বিচ্ছিন্ন করে দেয় তারা। ঈদের পরের দিনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সকাল থেকেই অবস্থান নেন। ঈদের পরের দিনে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান কালে পুলিশ সদস্যরা কোন ধরণের দর্শণার্থীদের বা বিনোদনের জন্য আসা মানুষকে স্পটে অনেক দুর থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু বিনোদন স্পর্টে চারিদিকের কয়েকটি স্থানে পুলিশের বিশেষ পাহাড়া বসানো হয়েছে। কোন ধরণের মোটর সাইকেল, কার, মাইক্রোবাস, অটোরিক্সা, সিএনজি প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি কোন ধরণের মানুষও সেখানে অবস্থান করতে পারছেন না।
কথা হয় পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, নমনিয়তা এবং কঠোরতা অবলম্বন করেই এখানে জনমানব শুন্য রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু মানুষ প্রভাব খাটিয়ে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাদেরকে নিয়ম অনুসারেই দমন করা হচ্ছে। ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সব ধরণের মানুষকে। তিনি বলেন, এই স্পর্টে এতো পরিমান মানুষ হয়, এখানে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা দায় হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সংক্রমণ রোধেই আমরা নিরলশভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাকি আল্লাহপাকের ইচ্ছে।

এই বিনোদন স্পট ঘিরে পদ্মা নদীর চরে এবং উপরিভাগে ছোট বড় শতাধিক দোকানপার্টের পসরা বসে। এখানে বেশ জমে উঠে কেনাবেচা। করোনার কারণে এই স্পট বন্ধ করে দেওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। এই স্পট ঘিরে বিভিন্ন পেশার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।

কয়েকজন দোকানদারের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আপনাদের সাথে কথা বলতে হচ্ছে স্পট থেকে কত দুরে। অথচ আপনাদের সাথে কথা হবে আমার দোকানের সামনে। তাদের দাবী, এখানে আমরা ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমাদের এ ব্যবসা ফুটপাতের হলেও মওসুমি নয়। সারাবছর এখানে ব্যবসা করি। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা আজ বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।

দুই সেতুর মাঝখানে পদ্মার পাড়ে বাঁধা থাকে ছোট ছোট অসংখ্য নৌকা। যে নৌকায় চড়েই মাঝনদীতে ঘুরে ফিরে আনন্দ উপভোগ করেন এখানে আসা দর্শণার্থীরা। অথচ করোনার কারণে ওই গাটে একটি নৌকাও নেই। ডাঙ্গায় থাকা মাঝি আব্দুল রফিক বলেন, সবনৌকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এখানে কোন ধরণের দর্শনার্থী আসা নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা যারা নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। তারা আজ বেকার হয়ে বসে আছি ।

রুপপুর মোড়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন বিনোদন পিপাসুদের সাথে। তারা বলেন, আমরা জানিনা এখানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জানলে নগরবাড়ি কাশিনাথপুর থেকে এখানে আসতাম না। বনপাড়ার কামরুল, তাড়াশের জিয়া, ভেড়ামারার কাওছার, পাবনা শহরের জসিম, খালেদ, মিরোজ, বনগ্রামের আবেদ, কুষ্টিয়ার শিশিরসহ কমপক্ষে ২৫ জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের পরের দিন বিনোদনের জন্য মূলত তারা এখানে একটু সময় কাটানোর জন্য এসেছেন। কিন্তু স্পটে আসার আগেই তাদের ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। তাই ফিরে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই স্পটে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ নানা ভাবে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখানে দুপুর থেকেই ঝাল মুড়ি, ফুসকা, আইসক্রীম, কোমল পানি, হোটেল রেস্তরো, চায়ের দোকান, কফি শপ, রকমারী আইটেম, বাদাম, ছোলা, বুট, টকঝালমিষ্টি, চানাচুর, নৌকা ভ্রমণ, ফুটপাতের নানা খেলনা সামগ্রী বিক্রিসহ বিপুল সমাহারে পসরা বসিয়ে জীবিকার তাগিদে ব্যবসা করা হয়। অথচ করোনা ভাইরাসের কারণে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। পথে বসেছেন নানা আয়ের মানুষ। তাদের দিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.