কেমন আছে রানা প্লাজার রেবেকা ?

0

কমল চন্দ্র রায়, দিনাজপুর থেকে : সময়ের সাথে সাথে দেশের গার্মেন্টস খাতে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ধসের স্মৃতি ও বিলীন হতে চলেছে। এখনো থামেনি পরিবারের কান্নার রোল। স্বজন হারানো পরিবার গুলোতে এখনো চলে শোকের মাতম। ২৪ এপ্রিল শনিবার ট্র্যাজেডির এই দিনটির ৮ বছর পূর্ণ হলো, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের এই দিনে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা খাতুন ভয়ানক দুর্ঘটনায় দুইটি পা হারিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পা হারানো রেবেকা খাতুন নিজ বাড়িতে তার দুই বছরের পুত্র মাদানী আন্নুর শুয়ে, ছয় বছরের কন্যা সিজরা তুনমুনকে তাহার পাশে নিয়ে বসে আছে।

রেবেকা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ১০ মাসের অধিক সময় হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। দুই পায়ে মোট আটবার অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই দিনের দূর্ঘটনায় পরিবারের মাসহ আরো দুইজন কে হারিয়েছে। সেই দিনের ঘঁনার বর্ননা দিতে দু চোখে ছলোছলো অশ্রু নিয়ে বিজরিত কণ্ঠে রেবেকা খাতুন জানায়, আট বছর হয়ে গেলে, রানা প্লাাজা ধসের ঘটনার লোম হোর্ষক ঘটনার কথা বলতে গেলে এখোনো গা শিউরে উঠে। সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফেলে এখনো তাকে। রানা প্লাাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে মোস্তাফিজুর রহমানকে বিয়ে করেন।

জীবনে সুখের আশায় পারিজমায় ঢাকার সাভারে, মোস্তাফিজুর রাজ মিস্ত্রিও কাজ কওে, রেবেকা খাতুন রানা প্লাজায় গার্মেন্ট চাকরী নেয় সবেমিলে দুজোনার বেশ চলছিলো। এরপর রানা প্লাাজা ধসের ঘটনায় মোস্তাাফিজুর আর রেবেকার সুখের সংসার হয়ে যায় ল-ভ-। দুর্ঘটনায় ইট-পাথরের স্তূপে হারিয়ে যান মা চান বানু বেগম, দাদী কহিনুর বেগম ও ফুপু রাবেয়া খাতুন। সেই কষ্টের কথা আজো ভুলতে পারেনি। তিনি আরো জানায়, ঘটনার পর তার জ্ঞান ছিলোনা। দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে দেখেন পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা অবস্থায়,অন্ধকার এক জায়গায় পড়ে আছে। তখন চিৎকার করতে থাকলে কয়েক জন উদ্ধার কর্মী কাছে আসেন। কিন্তু বড় বোঝা তার শরীরে চাপা থাকায় তখনো মুক্ত করতে পারেনি উদ্ধারকর্মীরা। এ সময় রেবেকা উদ্ধার কর্মীদের তার স্বামীর মুঠো ফোন নম্বর দেন।

পরে তার স্বামী এসে উদ্ধার কর্মীদেও সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে এক বছর রেবেকা কেচিকিৎসা নিতে হয়। বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে তার। এর পর দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেছে এর মধ্যে একটি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে রেবেকা’র। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সেটি স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে রয়েছে। সেই স্থায়ী আমানতের টাকা থেকে যাটাকা পায় তাদিয়ে কোনো মতে তাদের সংসার চলে। তার দেখা শুনার জন্য স্বামী বাইরে কাজ করতে পারে না। তিনি বলেন, প্রস্রাব-পায়খানা করা, বাচ্চাদের সামলানোসহ ঘর-সংসারের সব কাজে সহোযোগিতা করে স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর বলেন, এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ রাখেনা। বেসরকারী সংস্থা ব্রাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় ৭ লক্ষ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে বারাই আলাদিপুর ইউনিয়নে ৫ শতাংশ জমির উপর একটি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে দেয়। বাড়ীতে ২টি বিশ্রাম কক্ষ, ১টি কমোট বাথরুম ও ১টি কিচেন, সোলার এবং সাপ্লাই পানির সু-ব্যবস্থা। এছাাড়াও ব্রাক ২০১৫ সাল থেকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে এ পর্যন্ত ৩ লক্ষ টাকা সহায়তাও দিয়েছে। নতুন বাড়ী পেয়ে রোকেয়ার পরিবার এবং প্রতিবেশিরা এখন খুশি।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.