মাসিক কম্পিউটার জগৎ ম্যাগাজিনের আয়োজনে নীতি সংলাপ ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারের সংকট ও সমাধান

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, কমপিউটার জগৎ আয়োজিত ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারের সংকট ও সমাধান নিয়ে সংশ্লিষ্ট ৩৪জন অংশীজনের উপস্থিতিতে অনলাইনে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এক নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নীতি সংলাপে প্রধান অতিথি ও মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় বিজয় বাংলা কিবোর্ড, সফটওয়্যার-এর উদ্ভাবনকারী ও প্রতিষ্ঠাতা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আলোচনায় ভারত থেকে অংশ নেন এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের, কলা অনুষদ ডিন এবং ভাষা বিজ্ঞান চেয়ার, অধ্যাপক উদয় নারায়ণ সিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ভাষা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাযুক্তিক সমস্যাটার পেছনে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের ভাষায় এমন জটিল অবস্থার সৃষ্টি করেছে- এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে গণ্য না করে তারা আমাদেরকে দেবনাগড়ির অনুসারী করে যে প্রচ-রকম ক্ষতি করেছে, আমার কাছে মনে হয় যে বাঙালিদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এই জন্যই এখনো আমাদের নোক্তা নিয়ে যুদ্ধ করে বেড়াতে হচ্ছে। অথচ বংলা বর্ণে কোন নোক্তা নেই। ইউনিকোড যদি বাংলা-কে বাংলার মতো দেখে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতো তাহলে যে সমস্যাগুলো এখন ফেস করতে হচ্ছে তা করতাম না।’

মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলা সফটওয়্যারই আমার জীবিকা’ গর্বের সঙ্গে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি আরো বলেন, ‘আসকি ও ইউনিকোডের মধ্যে যে দেওয়াল আছে তা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। দেরি করে হলেও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে ২০১০ সালে। তারপরও ইউনিকোড কনভার্সনে যে জটিলতা হয় তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়; এই অপরাধ ইউনিকোডের। তাই এখনো আমরা ইউনিকোডের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরাই তাদেও মেধা-মনন দিয়ে এই যুদ্ধ জয় করবে।’

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ভারত থেকে অধ্যাপক উদয় নারায়ণ সিং বলেন, বাংলালিপির সঙ্গে একটা অদ্ভূত আত্মিক যোগাযোগ আছে। এটা নিয়ে আমরা পাঁচ পা এগিয়ে চার পা পিছিয়ে যাচ্ছি। এ কারণে এই ভাষাকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। মনোনীত আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য ডেটা সায়েন্স বইয়ের লেখক রাকিবুল হাসান, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনএনআরসি’র) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিপা জাহান। নীতি সংলাপটি সঞ্চালনা করেন কমপিউটার জগৎ-এর নির্বাহী সম্পাদক, মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু।

সংলাপে আলোচনা হয় ইউনিকোডে বাংলা লিপি ঢ-ঢ়, ড-ড়, য-য়-তে সমস্যা থাকাতে বড় তথ্য (বিগ-ডাটা) বিশ্লেষণ, সার্চ ইঞ্জিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এবং ইন্টারনেট অব থিংসে বেশ সংকট দেখা দিচ্ছে। মুদ্রণ জগতে ইংলিশ লিপির সাথে বাংলা লিপি’র সাইজের ক্ষেত্রে তারতম্য। বিভিন্ন বাংলা সফটওয়্যার ব্যবাহারে বাংলা লিপিতে চন্দ্রবিন্দু ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা প্রকট। বাংলা ডাটা মাইনিং এখনো ইন্ডাস্ট্রির সমতুল্য হয় নাই। ল্যাংগুয়েজ মডেল করতে দেখা যাচ্ছে বাংলা করপাসে বেশ সমস্যা। বাংলা লিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি মানসম্পন্ন নীতি থাকা দরকার। স্পেল চেকার, অভিধান, ওসিআর ইত্যাদিসহ বাংলা লিপি ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলা লিপি নিয়ে এডহক ভিত্তিতে কাজ না করে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কয়টি সমস্যা তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করতে হবে। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে আরো সোচ্চার হতে হবে। বিশ্বে বাংলা ভাষা-ভাষী সংখ্যা ৩৫ কোটি। ১৯৫২ সালে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা। ভাষা কোন অবস্থাতেই বন্দী জীবন যাপন করে না। মনে রাখতে হবে আমরা চতুর্থ শিল্প বিল্পবের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছি। এই সময় যদি ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারে সংকট দূর করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা হারাবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.