স্বপ্নের ইনকিউবেটর, দেশের প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে চালু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের প্রথম বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) স্থাপিত ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন করবেন।
আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর মূলত একটি ইন্টিগ্রেটেড প্রতিষ্ঠান। যেখানে সম্ভাব্য উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সমাবেশসহ উদ্যোক্তাদের আবাসিক সংস্থান, অফিস সরঞ্জাম ও প্রশাসনিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকে। বলা হচ্ছে, একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তৈরিতে এই ইনকিউবেটর শুধু কার্যকরী ভূমিকাই রাখবে না; ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণেও রাখবে বিশেষ ভূমিকা। এর মধ্য দিয়ে সৃজনশীল তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলীতে চুয়েট ক্যাম্পাসে ইনকিউবেটর প্রকল্প এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন চোখে পড়ে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। চলছিল পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ শোভাবর্ধনের আনুষঙ্গিক কাজ। চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছিলেন উচ্ছ্বসিত।
যাত্রা শুরু আজ :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ ইনকিউবেটর উদ্বোধন করবেন। একই স্থানে নির্মিত ‘শেখ জামাল ডরমিটরি’ ও ‘রোজী জামাল ডরমিটরি’ও উদ্বোধন করবেন তিনি। অনুষ্ঠানে সংযুক্ত? থাকবেন? প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।? স্বাগত বক্তব্য দেবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে থাকবেন চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ চুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তা-শিক্ষার্থী এবং শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উপকারভোগীরা।
যা থাকছে :তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ১১৭ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। নির্ধারিত সময় ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার পাশাপাশি ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা সাশ্রয়ও হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় চুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর ৪ দশমিক ৭ একর জমির ওপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলার ইনকিউবেশন ভবন স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৬ হাজার বর্গফুটের ছয় তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন করা হয়েছে।
ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে- স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্নার, এক্সিবিশন/প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি। উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে রয়েছে একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল। অন্যদিকে, মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জন ধারণক্ষমতার সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ ধারণক্ষমতার পৃথক আটটি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। এ ছাড়া দুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সংবলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শিগগিরই স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া চারতলার দুটি আবাসিক ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। কেন এই প্রকল্প :চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এখন একটি বাস্তবতা। এরই মধ্যে বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চীন ও ভারত। সে পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।
আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পরিচালক চুয়েট অধ্যাপক ড. এম মশিউল হক বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ঘটছে মূলত ইন্টারনেটের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগের মাধ্যমে। এই বিপ্লবের যুগে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অবস্থান করেও যে কেউ ইনোভেটিভ কোনো আইডিয়ার মাধ্যমে গোটা দুনিয়াকে নিজের প্রতিভার কথা জানান দিতে পারেন। আমরা তরুণ প্রজন্মকে সে সুযোগ করে দিতে যাচ্ছি।