কৃতকর্মের জন্য হেফাজতে ইসলাম নেতা আল্লামা মামুনুল হক এর অনুতপ্ত হওয়া উচিৎ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
আল্লামা মামুনুল হক ও সোনার গাও রয়েল রিসোর্ট বর্তমান সময়ে দুটি আলোচিত নাম। কয়েক দিন ধরে সরকারী বেসরকারী টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন ভাবে ব্যপক সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। আলোচনার বিষয় বস্তু হচ্ছে আল্লামা মামুনুল হক সোনার গাও রয়েল রিসোর্টে একটি মেয়ে সহ ৫০১ নং রুম বুক করে তথায় অবস্থান করাকালে কতগুলো মানুষের সন্দেহের শিকার হন। সেখানে পুলিশ, প্রসাশনের লোক, সাংবাদিক ও কিছু উৎসুক লোকজন ছিলেন। মামুনুল হক সাহেব অনকটা হেনেস্তাও হয়েছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে কিছু লাইভ ভিডিও, মামুনুল হক সাহেব এর নিজস্ব কিছু পোস্ট, রিসোর্টে মামুনুল হক এর সঙ্গে থাকা মেয়েটির ও তার পুত্রের মোবাইলে দেয়া কথোপকথন, তাঁর স্ত্রীর সহিত মোবাইলে তাঁর বোনের আলাপচারিতা, এবং বিষয়টি নিয়ে আরও বিভিন্ন ব্যক্তির আলোচনা সমালোচনা সব কিছু মিলে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সঠিকটা বুঝা যাচ্ছে না।
যে ঘটনাগুলো আলোচনায় এসেছে তা হলো :
১। হোটেল বা রিসোর্টে স্ত্রী সহ বেড়াতে যাওয়া দোষের কিছু নয়। কিন্তু জনাব মামুনুল হক তার স্ত্রী আমিনা তৈয়বা নামে রুম বুক করলেন আর সময় কাটালেন জান্নাত আরা ঝর্নাকে নিয়ে। কেন এটা করেছেন মামুনুল হক সাহেব। রূম বুক করার সময় ছাত্রলীগ যুবলীগ ছিল না এবং তখন তারা তো কোন চাপ দেয়নি।
২। পুলিশ, সাংবাদিক ও জনতার সামনে মামুনুল হক মেয়েটিকে তার বিবাহিতা স্ত্রী বলে জানান এবং তাঁর স্ত্রীকে মোবাইল করে বলেন ঐ মেয়েটি তার বন্ধু জাফর শহিদুল ইসলাম এর স্ত্রী। এ নিয়ে অন্য কিছু মনে না করার জন্য বলেন আর কেউ কিছু জানতে চাইলে এমনিভাবেই তাঁর স্ত্রীকে বলতে বলেন। অন্য দিকে মামুনুল হক এর এক বোন তাঁর স্ত্রীকে ঐ মেয়েটি মামুনুল হক এর দ্বিতীয় স্ত্রী, বিবাহের কথা সবাই জানে এবং কেউ জিজ্ঞেস করলে এমনিভাবেই বলতে বলেন। জানা যায় কথিত দ্বিতীয় বিবাহের কথা মেয়েটির বাড়ি লোক, আত্মীয় স্বজনরা এবং মামুনুল হকের স্ত্রী, আত্মীয় স্বজনরাও জানে না। বিয়ে নিয়ে এসকল লুকোচুরি স্বাভাবিক ভাবে ই সন্দেহের জন্ম দেয় এবং তা নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ।
৩৷ এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুনুল হক সাহেব এর আরেকটি স্ত্রীর সন্ধান মিলেছে। তার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি এবং তিনি একটি মাদ্রাসার শিক্ষিকা। তাকেও নাকি মামুনুল হক সাহেব গোপনে ২০২০ সালে বিয়ে করে তার সাথে মেলামেশা করে চলেছেন। তাজ্জব ব্যাপার। তাহলে জান্নাত আরা ঝর্ণা তাঁর দ্বিতীয় নয় তৃতীয় স্ত্রী হচ্ছে।
৪। বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ জনাব মাওলানা মিজানুর রহমান আজাহারী ও মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ উভয়ই মতামত দিয়েছেন প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিবাহ করা জায়েজ না। তাছাড়া প্রচলিত আইনও পালন করা হয় নাই।
৫। জনাব মামুনুল হক এর মত একজন হাফেজ, মাওলানা, আল্লামা, খ্যাতনামা বক্তা, হেফাজতে ইসলাম এর গুরুত্বপূর্ণ নেতা, রাজনৈতিক নেতা, মুফতি ও সর্বোপরি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। কোরআন, হাদীস ও শরিয়তের বিষয়ে তিনি অঘাত জ্ঞানের অধিকারী বলেই সবাই জানে। তিনি দেশের প্রচলিত সাধারণ আইন জানা সত্বেও মানবেন না ভাবতেও অবাক লাগে। তার অপরাধ মুলক কাজ হচ্ছে।
ক) দ্বিতীয় বিবাহ করতে হলে বৈধ প্রয়োজন দেখিয়ে প্রথম স্ত্রীর নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে। না নিলে তা সাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তিনি তা করেননি। খ) যে কোন বিবাহের ক্ষেত্রে ভবিষ্যত জটিলতা এড়ানোর জন্য বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। না করাটা সাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেটাও করেননি।
৬। আশ্চর্যের বিষয় হেফাজতে ইসলাম এর কিছু কিছু নেতা বিষয় টির প্রতি গুরুত্ব আরোপ না করেই দুই জন সাক্ষীর কথায় মামুনুল হকের দাবীকৃত দ্বিতীয় বিবাহকে শরিয়ত সম্মত বলেছেন। তাঁরা এটা বিবেচনা করেননি যে মামুনুল হক এর মত একজন লোকের পক্ষে দুই জন কেন দুই শত সাক্ষী যোগাড় করা কোন ব্যপারই না। বিষয়টির পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেন নাই। তবে অনেকেই এখন বিষয়টা দেরীতে হলেও মাথার নিয়েছেন এবং হেফাজতে ইসলাম এর কিছু সমর্থক মুখ খুলতে শুরু করেছেন যা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
৭। হেফাজতে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকে বিষয়টি মামুনুল হক এর ব্যক্তিগত হিসেবে সাব্যস্ত করে সে ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে অনিহা প্রকাশ করেছেন। অথচ সোনার গাও রয়েল রিসোর্ট এর ঘটনার কারণে হেফাজতে ইসলাম এর কিছুকিছু নেতার নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম এর লোকজন ব্যপক ধংসযজ্ঞ চালিয়ে সরকারী বেসরকারী সম্পত্তির অপূরনীয় ক্ষতি করেছে তা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। হেফাজতে ইসলাম এর অনেক আলেম ওলামা জনাব মামুনুল হককে কোন কিছু না ভেবে অন্ধের মতো সমর্থন দিয়েছেন। আর এখন বিষয়টি মামুনুল হক এর ব্যক্তিগত বলে সব দায় দায়িত্ব কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কি অদ্ভুত ব্যপার।
৮। মামুনুল হক সাহেব এর বিষয়ে ইসলামী আলেম ওলামা দের নানা বিতর্কিত ও নিন্দনীয় বক্তব্য ও কার্যকলাপের ফলে আলেম ওলামা দের প্রতি সাধারণ মানুষের বিস্বাস ও আস্থার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এবং তারা রীতিমতো বিব্রত বোধ করছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে আলেম সমাজের ভাবমূর্তি ও সম্মান।
সে যাই হোক মানুষ কেহই ভুলের উর্দ্ধে নয়। বলা হয় মানুষ মাত্রই ভুল করে। মানুষ কোন কারণে অস্বীকার করলেও মহান আল্লাহ তালা আলীমুল গায়েব সব কিছু দেখেন ও জানেন। তাঁর কাছে অস্বীকার ও গোপন করার কোন সুযোগ নাই। বিদায় হজ্বে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন ” হে মানুষ প্রত্যেককেই শেষ বিচারের দিনে তার সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও। ”
জনাব মামুনুল হক জান্নাত আরা ঝর্ণা ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে স্ত্রী হিসেবে রাখতে চাইলে প্রচলিত আইন ও শরিয়তের বিধানানুসারে পূর্বের স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের জানামতে পরিসুদ্ধ ভাবে বিয়ে করতে ও বিয়ের কাবিননামা রেজিষ্ট্রেী করতে হবে। আমরা আশা করি তিনি তা করে তার বিচক্ষণতা পরিচয় দিবেন। করুণাময় মহান আল্লাহ তালার নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে ক্ষমা করে দিবেন।
( তথ্য সুত্র : ফেসবুক ও লেখকের ভাবনা )
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, কলাম লেখক ও আইনজীবী