হাডসন ভ্যালির সৌন্দর্য ও চেরি পিকিং । আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

0

সামারে হাডসন ভ্যালির সবুজ বনানী, পর্বতে আকাশের হেলান দিয়ে থাকার দৃশ্য দেখার অর্থ জীবনে অপূর্ণতার কিছুটা পূরণ হওয়া। হাডসন নদীর উভয় পাশেই চোখ জুড়ানো ঘন বন। মরুর দেশে কোরআন নাযিল হলেও সুরা আর-রাহমানের কথায় যেন হাডসন উপত্যকার বর্ণনাই তুলে ধরা হয়েছে : “ যাওয়াতায় আফফান। ফাবি আইয়ে আলা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান।” (উভয় উদ্যানই ঘন শাখা, পত্র-পল্লব বিশিষ্ট। অত্রএব, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে?) অনেক ক্ষেত্রে হাডসন উপত্যকার সৌন্দর্যকে জার্মানির রাইন উপত্যকার সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

হাডসন নদী খুব দীর্ঘ নয়। আপস্টেট নিউইয়র্কের অ্যাডিরনডেক পর্বত (Adirondack Mountain) থেকে দক্ষিণ দিকে ৩১৫ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে নিউই্য়র্ক সিটির ম্যানহাটানের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে মিঠা পানি ঢেলে দিচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। ম্যানহাটানের পূর্ব পাশ ঘেঁষে আরেকটি নদী আটলান্টিকে মিশেছে, যেটির নাম ‘ইস্ট রিভাব’। ইস্ট রিভারের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৬ মাইল। তবে ইস্ট রিভার মিঠা পানির নদী নয়। সাগরের জোয়ার-ভাটার সাথে ইস্ট রিভার বেশি সম্পর্কিত। মানুষের প্রয়োজনে হাডসন নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৪৪টি সেতু। ১০টি রেলযোগাযোগের জন্য, ৩৪টি সড়ক পরিবহনের জন্য। এছাড়া নিউইয়র্ক সিটিতে প্রবেশের সুবিধার জন্য হাডসন নদীর নিচ দিয়ে ৫টি টানেলও নির্মিত হয়েছে। আমরা হাডসন ভ্যালির শোভা দর্শনের জন্য অতিক্রম করেছি ‘নিউবার্গ-বীকন ব্রিজ’। এখানে আসলে পাশাপাশি দু’টি ব্রিজ, একটি পূর্বদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রবেশের জন্য জন্য, আরেকটি সিটি থেকে বের হয়ে পশ্চিমদিকে যাওয়ার জন্য। সেজন্য এটিকে প্যারালাল ব্রিজও বলা হয়। সংস্কার কাজের জন্য উত্তর দিকের ব্রিজটি বন্ধ থাকায় উভয় দিকে যাওয়ার জন্য আপাতত একটি ব্রিজই ব্যবহৃত হচ্ছে।

নিউইয়র্ক সিটি থেকে হাডসন নদী বরাবর আপস্টেট নিউইয়র্কে আমাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল চেরি পিকিং বা গাছ থেকে নিজ হােেত চেরি ফল পেড়ে ইচ্ছেমতো খাওয়া এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে কেনা। বাগান কর্তৃপক্ষ চেরি পিকিং এর তারিখ জানিয়ে দিলে দলে দলে লোকজন ভিড় করে বাগানে। শুধু চেরি নয়, ব্লুবেরি, ষ্ট্রবেরি, আপেলসহ আরও কিছু ফল পরিপক্ক হলে বাগান মালিকরা এ ব্যবস্থা করেন। এর আগেও কয়েক দফা চেরি, আপেল আহরণে এসেছি। তবে সেই বাগানগুলো নিউইয়র্ক সিটির অদূরে লং আইল্যান্ডে। আমার মেয়ে ও ওর স্বামী কর্মসূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাওয়ায় গত তিন বছর আর কোনো ফলের উদ্যানে যাওয়া হয়নি।

আমাদের একটি ক্লাব আছে। হন্টন ক্লাব। আমরা সময় পেলে সারাদিনের খাবার নিয়ে কোনো পার্কে চলে যাই। হাঁটি, খাই, কখনো গান ও আবৃত্তি শুনি। তবে হাঁটাই মুখ্য বলে ‘হন্টন ক্লাব’। প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন পার্ক। এবারের উদ্যোক্তা মানবাধিকার নেত্রী কাজী ফৌীজয়া ও কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ফৌজিয়া ফলের বাগান, পার্ক সম্পর্কে খোঁজখবর ভালো রাখে। কোথায় কী সুবিধা সে অনুযায়ী তিনিই স্থান ঠিক করেন। কবি জহির মেহেরবানি করে আমাদের সাথে নেন। কবির স্ত্রী মুক্তি, দুই মেয়ে সারাফ ও নভো। আমি ও আমার স্ত্রী। পরে দুপুরের খাবার নিয়ে যোগ দেন ড. দোলা ও তার কন্যা। চেরি বাগানে পৌছতে দুপুর সাড়ে ১২টা পেরিয়ে যায়। ততক্ষণে বাগানে সকল বয়সের হাজার হাজার নরনারী। কেউ যদি চেরি না কিনে শুধু খেতে চায় তাহলে তারা বিনা পয়সায় উদর পূর্তি করে খেতে পারে। কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু আজকাল সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। অতএব পরিমাণ মতোই খায়। যারা কিনবে তারা আগাম মূল্য পরিশোধ করলে বাগান কর্তৃপক্ষ বাক্স দিয়ে দেয়। ছোট বাক্স, মাঝারি বাক্স ও বড় বাক্স। দাম যথাক্রমে ২৫ ডলার, ৫০ ডলার ও ৬৫ ডলার। ফৌজিয়া বড় প্যাকেটের দাম পরিশোধ করে। নিউইয়র্ক সিটি থেকে দূরত্ব ৮৫ মাইলের মত। কাছেই বলা যায়। বাংলাদেশীদের প্রচুর ভিড়। চেরি আহরণকারী জনসমষ্টির সিকিভাগের কম হবে না।

বাক্স ভরে চেরি নিয়ে গাড়ির কাছে পৌছার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। দৌড়ে একটি ক্যানোপির নিচে পৌছার আগেই বেশ ভিজে যাই। এখানকার বৃষ্টি বাংলাদেশের মত দিনভর বর্ষণ নয়। একটু পরেই থেমে যায়। ড. দোলার জন্মদিন। তিনি কেক এবং নান-চিকেন এনেছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হাডসনের তীরে ছোট্ট “মিলটন ল্যান্ডিং পার্কে পৌছে একটা টেবিল সাজিয়ে ড. দোলার কেক কাটি। তার আনা নান-রুটি দিয়ে বিলম্বিত মধ্যাহ্নভোজ সেরে নদী তীরে একটি ভাসমান প্ল্যাটফর্মে বসে প্রকৃতি উপভোগ করি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.