প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং পদ্মা সেতু । মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
এ কৃতিত্ব একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। এই কৃতিত্বে কেউ অংশীদার হতে পারে না বা প্রশ্নও ওঠে না। কথা দুটি সূচনায় উল্লেখ করলাম এ কারণে যে- বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভেতরে ও বাইরে সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়েছিলেন। তার দেশপ্রেম ও জাতির প্রতি অঙ্গীকারের ফলে আজ তাই স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ ধারণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেতুর ৫ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। মূল সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮১ ভাগ। দিন-রাত অবিশ্রান্ত চলছে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৩৮টি সংযোজিত হয়েছে। চলছে ৩টি স্প্যানের কাজ। পিলার উঠেছে ৩১টি। ৭টি ওঠার অপেক্ষায়। নদীশাসনের কাজের অগ্রগতি ৭৩ ভাগ। পদ্মা সেতুর মোট ২ হাজার ৯২৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৮৭০টি; ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৪০০টি এবং ৪৩৮টি ভায়াডাক্ট গার্ডারের মধ্যে ১৯৫টি স্থাপন করা হয়েছে। শিগগিরই আরও বাকি স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর সব স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে। সেতুর ৪২টি পিলারের সব কটির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে পানির স্তর খানিকটা বেশি। এটা কমলেই স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে। নদীর ভাঙন বা অন্য কোনো কারণে সেতুর কোনো কাজ থেমে নেই বলে প্রকৌশলীরা নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ের কাজ ইতিধ্যেই শেষ এবং তা উদ্বোধন করা হয়েছে। কাজেই দৃশ্যমান পদ্মা সেতু এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রাক্কালেই ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত হয়েছিল। মূল সেতু প্রকল্পের টেন্ডার-প্রক্রিয়ায় আজগুবি দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকে অনুসরণ করে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাইকা। কিন্তু কেন? কোনো সংস্থা তো তখনো অর্থের ছাড় দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশসহ মর্মাহত হলেন। কিন্তু অদম্য সাহস ও দৃঢ়তায় তিনি প্রকল্পের কাজ নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করার ঘোষণা দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে সরকারের ভেতরের কতিপয় নীতিনির্ধারক মনেপ্রাণে স্বাগত জানাতে পারেনি। কথিত সুশীল ও একশ্রেণির মিডিয়াও স্বাগত জানানোর পরিবর্তে বিরূপ সমালোচনায় লিপ্ত হয়। তবে দিন শেষে প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তাই তো স্বপ্ন আজ পূরণ হওয়ার পথে।
অর্থায়ন বন্ধ করা যে একটি ষড়যন্ত্র ছিল, তা এখন নির্দ্বিধায় বলা যায়। তাই আমার নজরে আসা এ-সম্পর্কিত ঘটনাপ্রবাহের কিছু বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। জাতির স্বার্থে সত্য উদঘাটন ও প্রকাশ করাই সংগত হবে বলে আমি মনে করি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ৫টি প্যাকেজ রয়েছে। এগুলো হলো- মূল সেতু নির্মাণ, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন এবং নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত টাকা বরাদ্দ ছিল। মূল সেতুর প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় ১১টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। আর মধ্য থেকে বিশ্বব্যাংকের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণপূর্বক মূল্যায়ন শেষে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য ও ৬টি প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য বিবেচনা করে মূল্যায়ন কমিটি তা অনুমোদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠায়। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে সম্মতিও প্রদান করেছিল। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী চায়না রেলওয়ের ফিফটিন ব্যুরো গ্রুপ করপোরেশনের বরাত দিয়ে এর স্থানীয় এজেন্ট হেলাল উদ্দিন দাবি করেন, তাদের মূল প্রতিষ্ঠানে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ওই চিঠিতে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এই পত্রের একটি কপি বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকার কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাছে পাঠানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পত্রটি পাঠায় এবং অনুসন্ধানের জন্য অনুরোধ করে।
বিশ্বব্যাংকের রেফারেন্স রিপোর্টের একটি কপি দুর্নীতি দমন কমিশনেও পাঠানো হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধানকালে কথিত চিঠির যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য চায়না রেলওয়ের ফিফটিন ব্যুরো গ্রুপ করপোরেশনের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এ ধরনের পত্র তারা পায়নি এবং তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি হেলাল উদ্দিনের কাছেও এ ধরনের কোনো পত্রের কপি পাঠানো হয়নি। পরে হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পত্রটি সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। হেলাল উদ্দিন পরবর্তী সময়ে আত্মগোপনে চলে যান। যে পত্রের বরাত দিয়ে বিশ^ব্যাংক অনুসন্ধানের জন্য অনুরোধ করেছিল; সেই পত্রটি সম্পর্কে সব তথ্য চায়না রেলওয়ের ফিফটিন ব্যুরো গ্রুপ করপোরেশন সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এবং তারা বিস্ময় প্রকাশ করে। ওই পত্রের কপি পর্যালোচনায় সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, সৃজিত প্যাডে স্বাক্ষর সুপার ইমপোজ করে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পত্রটি সৃজন করা হয়েছে। প্রথম ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত এখান থেকেই। টেন্ডারে যারা অংশগ্রহণ করেছিল, তারা স্পষ্টতই জানায়, আমাদের কাছে বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাইলেন্ট এজেন্ট নিয়োগের শর্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়নি। তারা এও বলে যে, প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী দরপত্রের বিষয়ে তাদের কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই।
অভিযোগের সমর্থনে কোনো দালিলিক বা মৌখিক সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় বিশ্বব্যাংকের আনীত প্রথম অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনসন্ধানে এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিতর্কিত পত্রখানা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৃজনকৃত এবং তা ভুয়া। উল্লেখ্য, অযোগ্য বিবেচিত অপর একটি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’র প্রাক-যোগ্যতা বিবেচনার জন্য তাদের দরপত্র পুনঃপরীক্ষার বিষয়ে দুবার মূল্যায়ন কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছিল। মূল্যায়ন কমিটি তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দুবার তাদের সুযোগ দেয়। কিন্তু তারা বারবার ভুল তথ্য ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় বিবেচনায় আসতে পারেনি। অবশেষে তারা প্রাক-যোগ্যতার আবেদন প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু তাদের স্থানীয় এজেন্ট ক্যাপ্টেন রেজা সেতু কর্তৃপক্ষকে ভবিষ্যতে খারাপ পরিণতির হুমকি দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এই কোম্পানির বিষয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে মূল্যায়ন কমিটির ওপর চাপও সৃষ্টি করা হয়েছিল। কাজেই এটাও একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। এই অনুসন্ধান প্রতিবেদন সম্পর্কেও বিশ্বব্যাংকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এভাবেই প্রথম অভিযোগের সমাপ্তি ঘটে।
অতঃপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোনো কোনো পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প ও নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং অনুসন্ধানের জন্য অনুরোধ করা হয়। পরামর্শক নিয়োগসংক্রান্ত অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বব্যাংক অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের বরাবর পত্র পাঠালে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে তা জানানো হলে শর্ত সাপেক্ষে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা গ্রহণ করতে দুদক রাজি হয়। দুদকের স্বাধীনতা এবং আইন ও বিধিকে সমন্বিত রেখে দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের এই সহায়তা গ্রহণে দুদক রাজি হয়েছিল। পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি ১৩টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কানাডীয় প্রতিষ্ঠান SNC Lavalin প্রথম থাকায় তাদের কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ করে; কিন্তু বিশ্বব্যাংক সম্মতি দেয়নি। বিশ্বব্যাংক একটি এক্সপার্ট টিম গঠন করে দুদকে পাঠায়। তাদের সঙ্গে দুদকের একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ তাদের সামনে উপস্থাপিত করা হলে তারা মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেনি। একপর্যায়ে তারা বলে, পরামর্শক নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি না হলেও ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্র’ হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। তাদের এ দাবির পক্ষে দালিলিক, মৌখিক এবং ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য চাওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের রেফারেল রিপোর্ট অভিযোগের ভিত্তি হলেও ওই রিপোর্টে বর্ণিত বক্তব্যের সমর্থনে প্রণিধানযোগ্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্যের অভাব ছিল। তারা বারবার ভবিষ্যতে সরবরাহ করবে জানালেও শেষ পর্যন্ত তারা সাক্ষ্যপ্রমাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়।
বিশ্বব্যাংক মনোনীত মূল্যায়ন কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ও প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট ড. দাউদ আহমেদ। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলাকালে বাংলাদেশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা সরকারি কর্মকর্তা তার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেননি বা মূল্যায়ন কাজে কোনো প্রভাবও বিস্তার করেননি। পরামর্শক তদারকির জন্য যে প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বিশ্বব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালার আলোকেই করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই অনুসন্ধান চলাকালে ৫টি রেসপনসিভ প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ রয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে তারা মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক বক্তব্য দেয়নি। SNC Lavalin নামীয় প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচিত হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল দাবি করে, এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার কাছে পাওয়া একটি নোটপ্যাডে বর্ণিত তথ্যের আলোকে তারা মনে করেন, দুর্নীতির অভিপ্রায় ছিল এবং দুর্নীতির জন্য ষড়যন্ত্রও করা হয়েছিল। রমেশ সাহা ও ইসমাইল নামের দুজন কর্মকর্তা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত ছিল বলে তারা দাবি করেন। দুদকের অনুসন্ধান টিম এই রমেশ-ইসমাইলের বক্তব্য এবং কথিত নোটপ্যাড বিশ্বব্যাংকের এক্সপার্টের টিমের কাছে চাইলে তারা ‘দিচ্ছি, দেব’ বলে আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও তা দিতে ব্যর্থ হয়। কথিত নোটপ্যাডের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিরপেক্ষ সাক্ষী ও সমর্থনযোগ্য দালিলিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। কথিত ঘুষের যে পার্সেন্টেজের কথা নোটপ্যাডে লিখিত আছে মর্মে বিশ^ব্যাংক দাবি করলেও সেই নোটপ্যাড দুদককে সরবরাহ করা হয়নি। বিশ্বব্যাংক স্বীকার করে যে, ঘুষ লেনদেন হয়নি; তবে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া যায় যে, রমেশ সাহা লিখিত যে নোটপ্যাডটি তাদের অভিযোগের ভিত্তি; তবে তা একান্তই রমেশের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কে কখন কোথায় কী লিখেছে, তা প্রমাণের দায়িত্ব তার। সে লেখনী দ্বারা অন্যের ওপর দায় বর্তায় না। দুদকের সামনে রমেশও নেই, নোটপ্যাডও নেই; বিশ্বব্যাংক তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ। তাহলে ষড়যন্ত্রের ভিত্তি কোথায়? কোনো ভিত্তি ছাড়া তো অনুসন্ধান কার্যক্রম চলতে পারে না। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল দুদকের অনুসন্ধান টিমের যুক্তি মানলেও শেষ পরিণতিতে তাদের একটি দাবি, দুর্নীতি না হলেও ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ জন্য একটি কথা বাংলাদেশে প্রচলিত আছে, ‘সালিশ মানি, তবে তালগাছ আমার’। এ ক্ষেত্রে এটাই বলতে হয়।
কানাডার অন্টারিও কোর্ট অব জাস্টিসে এরূপ অভিযোগে একটি বিচার চলছিল। দুদকের পক্ষে তৎকালীন দুদকের মুখ্য আইন উপদেষ্টা (বর্তমানে আইনমন্ত্রী) আনিসুল হককে ওই কোর্ট থেকে তথ্য আনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনিও যথারীতি কানাডা গিয়ে কোর্ট থেকে তথ্য আনার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু আদালত থেকে আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ সরবরাহ করা হয়নি। তবে তিনি কোর্ট থেকে যে সাক্ষ্যের প্রসিডিং প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে দুর্নীতি বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশেষে ৪-৯-২০১৪ ইং তারিখে দুর্নীতির জন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্তকালীন সময়ে দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রতিশ্রুত ঋণ-সহায়তা পাওয়ার স্বার্থে কোনো কোনো মহল থেকে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দুদককে কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করতে পরোক্ষ ইঙ্গিত দেয়া হলেও দুদক বিবেকের তাড়নায় সত্য ঘটনা প্রকাশের দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, গোয়েবলসীয় কায়দায় পদ্মা সেতু নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে। একটি মিথ্যাকে বারবার বললে সেটি সত্যের মতো শোনায়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও বারবার বলা হয়েছে, দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জনগণের মগজে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক ব্যক্তি জড়িত। অবশেষে দুদকের তদন্তে এসব অপপ্রচার ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে কানাডার অন্টারিও কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারের রায়ে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং চায়ের কাপে ঝড় তোলার সমান। নেয়ায়েত একটি গালগপ্প। আজ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দৃঢ় প্রত্যয়ী সাহসী দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা ব্যতীত সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই আবারও দৃঢ়ভাবে বলতে হয়, এই অর্জন ও কৃতিত্ব একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এবং এই কৃতিত্বের কেউ ভাগীদার নয়।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা , উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।