করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : লকডাউনের পথে নিউইয়র্ক সিটির ৯টি এলাকা

0

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সিটির বেশ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েক দিনে বেড়েছে সংক্রমণের হার। ফলে সিটির কয়েকটি এলাকায় ফের জারি হয়েছে লকডাউনের বিধি-নিষেধ। বুধবার (৭ অক্টোবর) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে বলে সংশ্রিস্ট সূত্রে জানা গেছে।নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিস সূত্রে জানা যায়, সিটির বিভিন্ন স্থানে নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০টি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সেগুলো মূলত: সিটির ৫ বরোর মধ্যে দুই বরো ব্রুকলীন ও কুইন্স এলাকায়। পাশাপাশি এসব এলাকার স্কুলগুলো পুনরায় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিটির ১৪৬টি জিপ কোডের মধ্যে ৯টি জিপ কোড এলাকায় থাকবে কড়া বিধি-নিষেধ। জিপ কোডগুলো হলো: ১১৬৯১, ১১২১৯, ১১২২৩, ১১২৩০, ১১২০৪, ১১২১০, ১১২২৯, ১১৪১৫ এবং ১১৩৬৭।

এসব জিপ কোড এলাকায় গত ১৪ দিনে ৩ থেকে ৮% করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে গোটা নিউইয়র্ক শহরের সংক্রমণের হার মাত্র ১.৫ শতাংশ। সিটির বাকি এলাকাগুলোর বাসিন্দারা কিছু ব্যাপারে ছাড়া পাবে। ওই ৯টি এলাকার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ যাতে শহরের বাকি অংশে ছড়িয়ে না পড়ে, যে জন্যই এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ৭ অক্টোবর বুধবার সকাল থেকে কুইন্স ও ব্রুকলীনের এলাকাগুলোতে জারি হবে বিধি-নিষেধ। উল্লেখিত এলাকায় অত্যাবশ্যক পরিষেবা ছাড়া বাকি সব কিছু বন্ধ রাখা হবে। সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খোলা থাকবে না ওই এলাকার রেস্তোরাঁও। তবে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার শুধু ‘টেক আইট’-এর ব্যবস্থা থাকবে। বাকি ১১টি এলাকায় রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলেও স্কুল বন্ধ রাখা হবে না।

অপরদিকে সিটির ১১২০৫, ১১২১১, ১১২৪৯, ১১২৩৫, ১১২৩৪, ১১২১৩, ১১২১৮, ১১৩৭৪, ১১৩৬৬, ১১৪৩২ এবং ১১৩৬৫ জিপ কোড এলাকাগুলো হাই-রিক্স এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জিপ কোড এলাকায় গত ১৪ দিনে ১ থেকে ৩% করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, ১১৪৩২ জিপ কোট এলকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। চলতি বছরের প্রথম দিকে অর্থাৎ মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে এই এলাকায় বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় সিটির কুইন্স বরো ‘করোনার ডেথ জোন’-এ পরিনত হয়। নিউইয়র্কের মেয়র ব্লাজিও রোববার তাঁর সংবাদ সম্মেলনে সিটির কোন কোন এলাকায় নতুন করে লক ডাউন-এর বিধি-নিষেধ জারি নিয়ে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আজকের দিনটি উদযাপনের নয়। আজ কঠিন দিন।’ নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শহরের কিছু এলাকা, বিশেষত কুইন্স ও ব্রুকলীনে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বসন্তেও সমস্যা এত প্রবল ছিল না। তা ঠেকাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি এর পরই ওই সব এলাকায় কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ বলবৎ হবে তা জানিয়েছেন।

আরো উল্লেখ্য, করোনায় এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার নিউইয়র্কে। করোনায় মারা গেছে ৩৩ হাজার মানুষ। গত এক মাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। করোনাভাইরাস যখন প্রথম ছড়াতে শুরু করে আমেরিকায়, সে সময় কেন্দ্রবিন্দু ছিল নিউইয়র্ক। হু হু করে সেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী ভাইরাস। এখন অবধি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সাক্ষী নিউইয়র্ক সিটি। জন হপকিন্সের তথ্য অনুসারে নিউইয়র্ক শহরে এখন অবধি ৩৩ হাজারেও বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক-এর সভাপতি কামাল আহমেদ সহ সিটিতে বসবাসকারী আড়াই শতাধিক বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.