৫০-এর কম শিক্ষার্থী হলে পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০-এর কম হলে পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। সচিবালয়ে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

সব বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য একই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সচিব। ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা বিগত ১০ বছরের চিত্র দেখব। যেসব স্কুলে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী আছে, সেগুলো পাশের স্কুলের সঙ্গে একীভূত করা হবে। আমরা এ ধরনের প্রায় ৩০০টি স্কুল পেয়েছি। এগুলো যাচাই-বাছাই করছি। তবে ঢালাওভাবে সব স্কুল বন্ধ করা হবে না। স্থানীয় বাস্তবতাসহ সব অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

বরিশালের একটি বিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত-আট। পাঁচ-ছয় বছর ধরে সাত-আটজন শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে। এ রকম বিদ্যালয়ের সংখ্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ রকম বিদ্যালয়ের সংখ্যা আছে ৩০০-এর কাছাকাছি। সেগুলোকে একীভূত করে দেয়া হবে।’

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘যে বিদ্যালয়গুলোয় ৫-১০ জন শিক্ষার্থী আছে, সেগুলোকে আমরা একীভূত করে দেব। যে বিদ্যালয়গুলোর চাহিদা আছে, সে বিদ্যালয়গুলোয় যা যা সুবিধা দেয়া দরকার, আমরা সেগুলো দেব। এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।’

রাঙ্গামাটির একটি বিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪২। কয়েক বছর ধরেই এ সংখ্যা ৪২। কিন্তু এ বিদ্যালয় একীভূত করা হবে না। কারণ এ ৪২ শিক্ষার্থী সাত-আট কিলোমিটারের জায়গার মধ্যে থেকে আসে। ওই প্রেক্ষাপটটিও বিবেচনায় নেয়া হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ৬৫ হাজার ৪৯৯। এসব বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৭ এবং শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫ জন। বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে চট্টগ্রামে। এ বিভাগে মোট সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৭৩। অন্যদিকে সবচেয়ে কমসংখ্যক ৫ হাজার ৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালেয় রয়েছে সিলেট বিভাগে। অন্যান্য বিভাগের মধ্যে ঢাকায় ১০ হাজার ৯১০টি, রাজশাহীতে ৮ হাজার ৬৫৯, বরিশালে ৬ হাজার ২৪৩, ময়মনসিংহে ৫ হাজার ৩৫৬, রংপুরে ৯ হাজার ৫৪৪ ও খুলনায় ৮ হাজার ১৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এখন থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িকের মতো কোনো পরীক্ষা হবে না। এর পরিবর্তে ধারাবাহিক মূল্যায়ন চলবে। তবে তা আগের মতো গতানুগতিক না।’

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে গত বছর। প্রথম বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন এ শিক্ষাক্রম শুরু হয়। আর গত জানুয়ারি শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে ওই তিন শ্রেণী ছাড়াও নতুন করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে এ শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে তা বাস্তবায়ন হবে দ্বাদশ শ্রেণীতে বা উচ্চ মাধ্যমিকে।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় বছরে তিনটি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হতো। যেহেতু এ বছর প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, তাই সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল—তৃতীয় পর্যন্ত আগের মতো প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক বা বার্ষিক পরীক্ষা হবে কিনা? জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘মূল কথা হলো তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক—এটি আর থাকবে না।

আগামী জুনের মধ্যে প্রাথমিকে ১৩ হাজার ৭৮১ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। গত বছর নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন। সব মিলিয়ে দেড় বছরের ব্যবধানে ৫১ হাজার ৩৫৫ শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন প্রাথমিকে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাত ১:৩০ করার পরিকল্পনা ছিল। তবে চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই এটি সম্ভব হচ্ছে।’

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.