বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এতে ঈদের ছুটির পর প্রায় সব শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। তারপরও চলতি জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড হতে যাচ্ছে। ফলে মহামারির মধ্যেও চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের প্রথম মাস (জুলাই) শেষে পণ্য রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি ডিপোর একাধিক সূত্র জানায়, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৮ হাজার ২৬৪ একক পণ্যবাহী কনটেইনার রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি ডিপোতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মনোনীত কোম্পানির কাছে ১২ হাজার ৯৭৯ একক পণ্যবাহী কনটেইনার বুঝিয়ে দিয়েছে রপ্তানিকারকেরা। আবার ডিপোর বাইরে ক্রেতাদের মনোনীত কোম্পানির হাতে বুঝিয়ে দিতে অপেক্ষায় আছে রপ্তানি পণ্যবাহী অসংখ্য কাভার্ড ভ্যান।
বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের মনোনীত কোম্পানির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার হিসাব আমলে নিলে চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনে ৭১ হাজার ২৪৩ একক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছর জুলাইয়ে ৩১ দিনে ৭২ হাজার ৭৬১ একক কনটেইনার রপ্তানি হয়েছিল। গত বছর প্রথম ২৫ দিনে রপ্তানি হওয়া পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার ৬৭৮। তার মানে গত বছরের ১ থেকে ২৫ জুলাইয়ের তুলনায় চলতি মাসের একই সময়ে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের প্রবৃদ্ধি ২১ শতাংশ। যদিও গত বছরের জুলাইয়ে তার আগের দুই-তিন মাসে প্রস্তুত হওয়া অনেক পণ্যও রপ্তানি হয়েছিল। কারণ, গত বছর করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রচুর ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়। পরে ধীরে ধীরে সেগুলো রপ্তানি হয়। চলতি বছর অবশ্য সেই সমস্যা হয়নি।
এদিকে চলতি বছরের জুনের প্রথম ২৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪৪ হাজার ৭৭৬ একক কনটেইনারে পণ্য রপ্তানি হয়। আর চলতি জুলাইয়ের প্রথম ২৫ দিনে ৭১ হাজার ২৪৩ একক কনটেইনার। তার মানে ১ থেকে ২৫ জুনের চেয়ে জুলাইয়ের একই সময়ে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৯ শতাংশ, যা রপ্তানি বাণিজ্যে রেকর্ড। অবশ্য মাস শেষে এ প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে, সেই সম্ভাবনাই প্রবল।
মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি, বিকেএমইএ পণ্য রপ্তানিতে তিন দশক ধরে ছড়ি ঘোড়াচ্ছে তৈরি পোশাক। বিদায়ী ২০২০–২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছে ৮১ শতাংশ বা ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলার। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী কনটেইনারের সিংহভাগই তৈরি পোশাকের। পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বাড়লে পাল্লা দিয়ে পোশাক রপ্তানিও বাড়ে।
কয়েকজন পোশাক রপ্তানিকারক জানান, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পণ্যের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সে জন্য আগামী শীত ও বড়দিনের পোশাকের প্রচুর ক্রয়াদেশ পেয়েছে কারখানাগুলো। ঈদের বন্ধ ও বিধিনিষেধের কারণে কারখানা লম্বা সময় বন্ধ থাকবে সে কারণে সব প্রতিষ্ঠানই ঈদের আগে স্বাভাবিক সময়ের বেশি ওভারটাইম করিয়ে পণ্য প্রস্তুত করেছে। কিছু কারখানা ঈদের ছুটির সময়ও উৎপাদন চালিয়েছে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, সারা বছরের মধ্যে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়। এই সময় শীতের পোশাক বেশি যায়। এসব পোশাকের দাম বেশি এবং কনটেইনারে জায়গাও বেশি নিয়ে থাকে। আর শীতের পোশাকের প্রচুর ক্রয়াদেশ আসায় চলতি মাসে রপ্তানি বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বাড়লেও এখনো রপ্তানি আয়ে তার পুরোপুরি প্রতিফলন হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বরাত দিয়ে বিজিএমইএ জানায়, চলতি জুলাইয়ের প্রথম ২৬ দিনে ২২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম ২৬ দিনে রপ্তানি হয়েছিল ২৪২ কোটি ডলারের পণ্য।
শহিদউল্লাহ আজিম , সহসভাপতি, বিজিএমইএ
কনটেইনার পরিবহনের বিপরীতে রপ্তানি আয় কম হওয়ার কারণ হিসেবে পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারকেরা জানান, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মনোনীত ফ্রেইড ফরোয়ার্ড কোম্পানির প্রতিনিধিরা ডিপোতে রপ্তানিকারকদের পাঠানো পোশাক বুঝে নেন। তারপর সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কোন গন্তব্যে কোন পণ্য যাবে তার ভিত্তিতে কনটেইনারে তোলেন। সেই কনটেইনার সিঅ্যান্ডএফ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট জাহাজে তোলার জন্য বুঝে নেন। সে সময় কাস্টমসের কর্মকর্তারা পণ্যের মূল্যায়ন বা অ্যাসেসমেন্ট করেন। তখনই পণ্য রপ্তানির মূল্য সরকারি তালিকায় নথিভুক্ত হয়। তার মানে ডিপোতে যাওয়া সব পণ্যের অ্যাসেসমেন্ট না হওয়ার কারণেই রপ্তানির পরিমাণ কম।
করোনার প্রথম ধাক্কায় পোশাক রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমলেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরও ভালো রপ্তানির আশা করছেন রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা জানান, ইতিমধ্যে আগামী গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আগামী মার্চ পর্যন্ত তাদের কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী ক্রয়াদেশের বুকিং পেয়ে গেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ সক্ষমতার চেয়েও বেশি।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার আগে দিনরাত কাজ করে অনেক কারখানা পণ্য রপ্তানি করেছে। ঈদের দশ দিন পর যেসব পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল সেগুলোও আগেই প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে। সে জন্য মাসের প্রথম ২৫ দিনে পণ্যবাহী কনটেইনার রপ্তানি হয়েছে বেশি। তবে চলমান বিধিনিষেধের কারণে আগামী মাসে রপ্তানি কমে যাবে।