বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলসহ (সিডিসি, ইউএসএ) কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখন এ পরামর্শ দিচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যদানকারী নারীকে টিকা দেওয়া হলে এ থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি তার শরীর থেকে সন্তানের শরীরে পৌঁছায়-যা শিশুর শরীরে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলে। তবে স্বল্পপরিসরের গবেষণায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যুক্তিতে বাংলাদেশে এখনো গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী মায়েদের টিকা দেওয়ার অনুমোদন দেয়নি সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আগের চেয়ে বেশি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি এ কারণে গর্ভধারণকালে অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় এখনই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক মাস আগেও বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের করোনা টিকার আওতার বাইরে রেখেছিলেন। কারণ এ দুই শ্রেণির ওপর টিকার ট্রায়াল করা হয়নি।
তবে বর্তমানে বলা হচ্ছে, এ দুই শ্রেণির মানুষের জন্যও করোনা টিকা নিরাপদ। পৃথিবীতে কয়েক কোটি মানুষের শরীরে করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো তীব্র কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিপরীতে গর্ভবতী নারী করোনায় সংক্রমিত হলে মা ও শিশু উভয়েরই মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব বিষয়ে মাথায় রেখেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীকে করোনা টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাপী সব ধরনের করোনা টিকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি-সব মিলিয়ে বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে করোনা টিকা নিয়ে নানা ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশেও যে কোনো মুহূর্তে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসির মতো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের সুরক্ষায় টিকা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। তাই দেরি না করে জরুরিভিত্তিতে এ দেশে তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ।
সম্প্রতি ‘করোনা টিকা এবং বুকের দুধ খাওয়ানো : মায়েদের কী জানা উচিত’ শীর্ষক এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ‘প্যারেন্টস’ জার্নালে। প্রবন্ধে নিকোল হ্যারিস বলেছেন, কয়েক মাস অপেক্ষার পরে তিনটি কোভিড-১৯ টিকা শেষ পর্যন্ত খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এর থেকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। টিকাগুলো বর্তমানে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
কিছু ক্ষেত্রে করোনার টিকার সুরক্ষা সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে। এর মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরাও রয়েছেন-যারা মূলত ক্লিনিকাল ট্রায়াল থেকে বাদ পড়েছেন। তাদের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা টিকা নিতে পারবেন। যদিও টিকা এখনো নতুন এবং এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। এ সম্পর্কে ‘ল্যানসিনোহ ক্লিনিকাল অ্যাডভাইজরি নেটওয়ার্ক’-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, টিকা নেওয়ার পর গর্ভবতী নারীদের অন্য কারও চেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। ল্যানসিনোহ ক্লিনিকাল অ্যাডভাইজরি নেটওয়ার্কের সদস্য সহযোগী অধ্যাপক হেনরি সি লি বলেন, যত বেশি লোক টিকা দেবে, সম্ভাব্য প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে আরও জানা সম্ভব হবে।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (এসিওজি) ও একাডেমি অব ব্রেস্টফিডিং মেডিসিন (এবিএম)-ও সুপারিশ করেছে, স্তন্যদানকারী নারী টিকা নিতে পারবেন। এতে টিকার উদ্দীপিত অ্যান্টিবডি ও টি-সেলগুলো নিষ্ক্রিয়ভাবে দুধে স্থানান্তরিত হয়। দুধে স্থানান্তরিত অ্যান্টিবডি শিশুকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। সংস্থা দুটির বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের টিকায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবসট্রাক্টিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)-এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি এ সংক্রান্ত অনুমোদন দেয় তখনই আমরা বলেছিলাম। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘ভ্যাকসিন ডেপ্লায়মেন্ট’ কর্মসূচির প্রধান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আমাদের এক্ষেত্রে অনুৎসাহিত করেন। তাই সরকারিভাবে আমাদের দেশে গর্ভবতী নারী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের টিকা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।
সরকারের বক্তব্য, যেহেতু এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা আমাদের হাতে নেই, তাই টিকা না দেওয়াই ভালো। অধ্যাপক রওশন আরা বেগম বলেন, যেহেতু বর্তমানে অধিক সংখ্যক গর্ভবতী মা, প্রসবকালে বা তার আগে পরে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাই মা ও শিশুর সুরক্ষায় টিকাদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।