বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনা প্রতিরোধে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দিতে সিনোফার্মের পর চীনের অপর প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের কাছ থেকে টিকা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। একইসঙ্গে স্পুটনিক-ভি কিনতেও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সেরামের বিকল্প হিসেবে টিকাকরণ কর্মসূচীকে এগিয়ে নিতে সরকার এই দুটি উৎসের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।
ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশে টিকাদান কর্মসূচীতে বাধা আসে। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার রাশিয়া ও চীনের টিকা কেনার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মজুদ থাকা টিকা সহায়তা পেতে কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রাখে। বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু কম থাকার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশগুলো জরুরী ভিত্তিতে টিকা সহায়তা দিতে কিছুটা বিলম্ব করছে। ভারত থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না আসায় চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা তিন মাসে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চলতি মাসেই সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। এরপর দুই মাস ১ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। সিনোফার্মের পাশাপাশি সিনোভ্যাকের টিকা কেনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সিনোভ্যাকের টিকা কেনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) গত ৩ জুন সিনোভ্যাকের কোভিড-১৯ ‘করোনাভ্যাক’ এর অনুমোদন দিয়েছে। সিনোভ্যাকের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ইনসেপ্টা টিকা লিমিটেড এই টিকাটির জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা সিনোভ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আর আলোচনার অংশ হিসেবে আমরা জরুরী ব্যবহারের জন্য এর অনুমোদন দিয়েছি। এখন আমাদের আলোচনা আরও দ্রুত এগোবে। এর দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলে, চুক্তির শর্তগুলো আমাদের পক্ষে থাকলে এবং যদি সরবরাহের সময়সীমা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী হয়, তাহলে আমরা সিনোভ্যাকের কাছ থেকে টিকা কিনব, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জনগণকে গণ টিকাদান কর্মসূচীর পর অনেক দেশেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং চলাচলের বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের জনমানুষকে টিকা দিতে হবে এবং এজন্য আমাদের অনেক টিকার প্রয়োজন। টিকাকরণ কর্মসূচীকে নির্বিঘœ করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই টিকা পাওয়া যাবে।
পঞ্চম টিকা হিসেবে করোনাভ্যাককে জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি ইতোমধ্যে আরও ২২টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে। গত ১ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভ্যাককে জরুরী ব্যবহারের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। এটি নিয়ে চীনের দুটি টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল। সিনোভ্যাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকেও এই টিকাটি পেতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সিনোভ্যাকের দুই ডোজ বিশিষ্ট এই টিকা দুই থেকে চার সপ্তাহের ব্যবধানে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের দেয়া যায়। টিকাটি দুই থেকে আট ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সিনোভ্যাকের আবেদনপত্রটি তাদের পক্ষ থেকে জমা দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সিনোভ্যাকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে এবং টিকা কিনবে। সেখানে ইনসেপ্টার কোন ভূমিকা থাকবে না। কীভাবে সিনোভ্যাকের কাছ থেকে টিকা কেনা হবে সে ব্যাপারটি পুরোপুরি সরকারের হাতে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রাবক এসে পৌঁছলেই তারা ফাইজারের কোভিড-১৯ টিকা দেয়া শুরু করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর মোঃ শামসুল হক বলেন, এই দ্রাবকটি (টিকা দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়) সোমবার রাতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর আমরা টিকা দেয়ার দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করতে পারব। তিনি জানান, এই টিকাটি রাজধানীর চারটি টিকাদান কেন্দ্র থেকে দেয়া হবে এবং যারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন তাদের এটি দেয়া হবে। সংরক্ষণজনিত জটিলতার কারণে রাজধানীর বাইরে টিকাটি পাঠানো হচ্ছে না।
গত সোমবার ফাইজার ভ্যাকসিনের ১ লাখ ৬ হাজার ডোজের একটি চালান ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক টিকা সরবরাহ প্রকল্প কোভ্যাক্সের আওতায় এই টিকাগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ। ২৭ মে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) জরুরী ব্যবহারের জন্য ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয়।
১২ মে চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশ পাঁচ লাখ সিনোফার্ম টিকা পেয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে এই ডোজগুলো দেয়া শুরু করেছে। চীনের কাছ থেকে ১৩ জুনের মধ্যে উপহার হিসেবে আরও ৬ লাখ ডোজ সিনোফার্ম টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। চীন থেকে আরও টিকা পৌঁছানোর পরই টিকাটির গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু হবে।
২৬ এপ্রিল মজুদ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া স্থগিত করে। একই কারণে অনেক জায়গায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়াও স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন পর্যায়ে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিকদের জন্য গণটিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। সরকার চলমান টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া গত ৫ মে স্থগিত করে।