বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাষ্ট্রায়ত্ত শিশু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ঢাকা শিশু হাসপাতালকে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে ওই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার পাশাপাশি শিশু চিকিৎসা সংক্রান্ত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, উন্নতসেবা, গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ হবে।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিল-২০২১’ নামের বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে প্রণীত মেডিক্যাল ডিগ্রি ও মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত দু’টি আইন বাতিল করতে জাতীয় সংসদে পৃথক বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিলে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠু পরিচালনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, আর্থিক বিষয়াদির জবাবদিহিতা ও উন্নত সেবা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিলটি আনা হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ এই আইনের অধীনে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হবে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সেবা নিশ্চিত ও মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে সংবিধিবদ্ধ একটি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এখানে গবেষণাসহ সব রকমের লেখাপড়া হবে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষাগার, ব্যায়ামাগার ও শিশু কর্নার থাকবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ইনস্টিটিউট স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থেকে বিশেষায়িত শিশু চিকিৎসার ওপর স্নাতকোত্তর বা স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ও মেডিক্যাল টেকনোলজির বিষয়ে স্নাতক ও ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করতে পারবে। এ ছাড়াও কোনো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়েও বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করতে পারবে। শিশু স্বাস্থ্য বা মাতৃস্বাস্থ্য এ সংক্রান্ত সার্টিফিকেট বা প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে পারবে। আরো বলা হয়েছে, ইনস্টিটিউট পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি সরকার নিয়োগ দেবে। জাতীয়ভাবে সুনাম অর্জনকারী শিশু চিকিৎসা বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হবে।
আইন বাতিল করতে দু’টি বিল : গতকাল সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ১৯১৬ সালে প্রণীত ‘মেডিক্যাল ডিগ্রিস অ্যাক্ট’ বাতিল করতে ‘মেডিক্যাল ডিগ্রিস (রিপিল) বিল-২০২১’ এবং ১৯৬১ সালে প্রণীত ‘মেডিক্যাল কলেজেস (গভর্নিং বডিস) অর্ডিন্যান্স’ বাতিল করতে ‘মেডিক্যাল কলেজ (গভর্নিং বডিস) (রিপিল) বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন করেন। বিল দু’টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
মেডিক্যাল ডিগ্রিস (রিপিল) বিল সম্পর্কে বলা হয়েছে, মেডিক্যাল ডিগ্রিস অ্যাক্ট একটি সংক্ষিপ্ত আইন যার প্রতিটি ধারা ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০’ এর এক বা একাধিক ধারায় সন্নিবেশিত রয়েছে। এ আইনের লঙ্ঘন এবং সংঘটিত অপরাধের শাস্তি অপর্যাপ্ত, যা সময়োপযোগী নয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন একটি বিশদ বিস্তৃত আইন, যার প্রয়োগিক দিক থেকে অনেক বিস্তৃত ও সময়োপযোগী। কাজেই এ আইনটির কার্যকারিতা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্রসমূহ ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন’ এর সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় আইনটি প্রত্যাহার করা আবশ্যক।
আর মেডিক্যাল কলেজ (গভর্নিং বডিস) (রিপিল) বিল সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৬১ সালে ‘মেডিক্যাল কলেজ (গভর্নিং বডিস) অর্ডিন্যান্স’ প্রণয়ন হয়। কিন্তু কার্যত এই অধ্যাদেশটির তেমন কোনো প্রয়োগ ছিল না। ১৯৮৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশে মেডিক্যাল কলেজগুলো সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল কলেজ অব বাংলাদেশ এবং ডিসিপ্লিনারি কমিটি ফর দ্য মেডিক্যাল কলেজ অব বাংলাদেশ গঠন করা হয়। ওই সময় হতে এখন পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও ডিসিপ্লিনারি কমিটি কমিটি দ্বারাই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো সংশ্লিষ্ট এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘বেসরকারি মেডিক্যাল স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং ১৯৬১ সালের মেডিক্যাল কলেজেস (গভর্নিং বডিস) অর্ডিন্যান্সের কার্যকারিতা নেই।