বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রতিদিন দেশে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে। আইসিইউ সংকটের সঙ্গে অনেক হাসপাতালে সাধারণ শয্যাও মিলছে না। রোগীর চাপ সামলাতে আগামী শনিবার থেকে চালু হচ্ছে ফিল্ড হাসপাতাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে চালু হচ্ছে এ ফিল্ড হাসপাতাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্তদের সেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৩৫৭ শয্যা চালু করব। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা থাকবে ৪০টি। সব শয্যাতেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকবে। কারণ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির অধিকাংশের অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে। আগামী শনিবার থেকে এ ফিল্ড হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার পরিকল্পনা আছে। পরের ধাপে ৬০০ শয্যা চালু করা হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, গতকাল সারা দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৭ জন, মারা গেছেন ২৪১ জন। এক মাস ধরে দেশে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে সংকটাপন্ন রোগীও বাড়ছে। ফলে চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। আইসিউর জন্য সরকারি হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন স্বজনরা। এখন মিলছে না সাধারণ শয্যাও। গতকাল রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১৬৯ সাধারণ শয্যার মধ্যে মাত্র একটি ফাঁকা ছিল। কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২৭৫ শয্যা পূর্ণ হয়ে আরও ১৪০ জন রোগী বেশি ভর্তি হয়েছেন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কোনো সাধারণ শয্যা ফাঁকা নেই। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ৬৬ জন রোগী বেশি ভর্তি ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০৫ শয্যা পূর্ণ হয়ে ৪৪ জন রোগী বেশি ভর্তি ছিলেন। ভর্তির জন্য করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন স্বজনরা। পথে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এ চাপ সামলাতে ফিল্ড হাসপাতাল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
১০ জুলাই পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারে ১ হাজার ২০০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের ঘোষণা দেন। এ লক্ষ্যে ১৪ জুলাই বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। গতকাল কনভেনশন সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় নিচতলায় সারি সারি শয্যা বিছানো। অক্সিজেন সংযোগের কাজ চলছে। আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ওঠানোয় ব্যস্ত কর্মীরা। আইসিইউ শয্যার সঙ্গে লাগানো হচ্ছে অন্যান্য যন্ত্রপাতি। দ্রুত কাজ শেষ করতে তদারকি করছেন কর্মকর্তারা। নিচতলায় আপাতত কাজ চলছে। শয্যা বাড়ানোর সময় পর্যায়ক্রমে অন্য তলাগুলোয় শয্যা বসানো হবে। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শেষ করে হাসপাতালটি চালু করতে। আশা করছি করোনা আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারব। এ হাসপাতাল চালু হলে অন্য হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ কিছুটা হলেও কমবে।’
বিএসএমএমইউর অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক বলেন, ‘ধাপে ধাপে হাসপাতালের শয্যা বাড়াতে কাজ চালু থাকবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে দ্রুত সেবা দিতে হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা চলছে। আপাতত বিএসএমএমইউ থেকে চিকিৎসক, প্রয়োজনীয়সংখ্যক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দেওয়া হবে। তারা ওয়ার্ড রাউন্ডসহ সার্বিক সেবা দেবেন। পরে স্বাস্থ্য অধিদপতর থেকে জনবল পেলে সে অনুযায়ী রোস্টার করা হবে।’
বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারের বাইরে আরও চারটি ফিল্ড হাসপাতাল করার পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, ঢাকার গুলশান শুটিং ক্লাব ভবনকে হাসপাতালে রূপান্তরের ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হয়েছিল। এ নিয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, পুলিশ কনভেনশন সেন্টার, টিকাটুলীতে এফবিসিসিআইর ১৩ তলার একটি ভবনে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে এ উদ্যোগ থেকে কিছুটা সরে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আপাতত রাজধানীতে একটি ফিল্ড হাসপাতাল হবে। বিভাগীয় কিংবা জেলা শহরে কোনো ফিল্ড হাসপাতাল হচ্ছে না।
তবে ঢাকার বাইরে ফিল্ড হাসপাতালের পরিবর্তে মানসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন এবং জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কদের এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত রোগী সংকুলান না হলে পাশের মানসম্পন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চিকিৎসায় যুক্ত করা যাবে। সরকারিভাবে রোগীর যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হবে। এজন্য দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘সীমান্তবর্তী পশ্চিমের জেলাগুলোয় রোগীর চাপ কমলেও পূর্ব ও মধ্যভাগের জেলাগুলোয় করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। রোগীর চাপ সামলাতে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে প্রস্তুতকৃত ফিল্ড হাসপাতালটি আশা করছি খুব শিগগিরই চালু করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার বাইরে জেলাগুলোয় স্বাস্থ্য অধিদফতর আলাদা ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করবে না। কারণ এতে লজিস্টিক ও জনবল সহায়তা দেওয়া আমাদের জন্য দুরূহ হবে। তাই জেলাগুলোয় রোগীর চাপ বেড়ে গেলে প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয় মেডিকেল কলেজ কিংবা ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।’